ধোলাইখাল টায়ারপট্টি

এক পুরোনো টায়ারে তৈরি হয় ১৫ নতুন পণ্য

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৮ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৩

পুরোনো টায়ার কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার ধোলাইখাল রোডের টায়ারপট্টি। বিভিন্ন যানবাহনের পুরোনো টায়ার কেনাবেচা ও টায়ার কেটে নানান ধরনের পার্টস বা যন্ত্রাংশ বানানোর অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে সেখানে। টায়ারপট্টিতে প্রতিদিন ভোর থেকে হাঁকডাক শুরু হয়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সেই শোরগোল চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন গ্যারেজ থেকে অকেজো ও পুরোনো টায়ার নিয়ে আসা হয় এই পট্টিতে। ছোট, বড় বা মাঝারি আকারের ট্রাকের টায়ার, বাইকের টায়ার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বড় ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহনের টায়ার বেচাকেনা হয় বাজারটিতে। শুধু টায়ার বেচাকেনা নয়, সেখানে টায়ার কেটে বানানো হয় মেশিনারিজ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পার্টস। একটি টায়ার থেকে ১৫-২০টি পার্টস বানানো যায়।

ট্রাকের টায়ার, বাইকের টায়ার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বড় ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহনের টায়ারের বেচাকেনা হয় বাজারটিতে। শুধু টায়ার বেচাকেনা নয়, সেখানে টায়ার কেটে বানানো হয় মেশিনারিজ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পার্টস। একটি টায়ার থেকে ১৫-২০টি পার্টস বানানো যায়

টায়ার কেটে সাধারণত যেসব যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাইসমিলের বেল্ট, জেনারেটরের বেল্ট, ক্রস বেইল, মোটরের কাবলিং, গাড়ির মাউন্টিং, পানির পাম্পের ওয়াশার, সোফার চেয়ারের ফিতা। এছাড়া টায়ারের ভেতরের তার দিয়ে স্প্রিং, পাখির খাঁচা, গাড়ির মাডগার্ড তৈরি করা হয়। পুরোনো টায়ার পুড়িয়ে তেলসহ বিভিন্ন ধরনের পার্টস বানানো হয়।

আরও পড়ুন: পুরাতন যন্ত্রাংশ, নাট-বল্টুর রমরমা ব্যবসা

সরেজমিনে টায়ারপট্টিতে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি রাইসমিলের বেল্ট ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, জেনারেটরের ক্রস বেল্ট ১০০ থেকে ২০০ টাকা, মোটরের কাবলিং ৫০ টাকা, গাড়ির মাউন্টিং ১০০ থেকে ২০০ টাকা, পানির পাম্পের ওয়াশার ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, সোফার চেয়ারের ফিতা ১০ টাকা, গাড়ির মাডগার্ডে ব্যবহৃত বেল্ট ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেটে রাখা টায়ারের ছোট ছোট টুকরো প্রতি পিসের দাম ৩০ টাকা।

সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুপুরের দিকে ঢাকার বিভিন্ন গ্যারেজ থেকে টায়ার আসে এ পট্টিতে। হকাররাও নিয়ে আসেন। তাদের থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামে সেগুলো কিনে নেন। তারপর বাছাই করে যেগুলো বিক্রির উপযোগী না সেগুলো বিভিন্ন পার্টস তৈরির জন্য রাখা হয়। তুলনামূলক ভালো টায়ারগুলো গাড়িচালকরা কিছুটা কম দামে সেখান থেকে কিনে নেন।

মানভেদে একেকটি টায়ার ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কেনা পড়ে। প্রতিটি টায়ার কেটে প্রায় ৩ হাজার টাকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায়। এসব পণ্য পাইকারি দামে কিনে নেন বংশাল ও বাংলাবাজারের মোটর পার্টস বিক্রেতারা। পরে সেগুলো বিক্রি হয় খুচরায়

তারা আরও জানান, বাজারের ফার্নেস অয়েলের তুলনায় টায়ারের অয়েলের উৎপাদন খরচ অনেক কম। অব্যবহৃত পুরোনো টায়ার গলিয়ে তৈরি ফার্নেস অয়েল, যা কলকারখানা, যানবাহন ও অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ব্যবহার করা যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে একেকটি টায়ার ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় কেনা পড়ে। প্রতিটি টায়ার কেটে প্রায় ৩ হাজার টাকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায়। এসব পণ্য পাইকারি দামে কিনে নেন বংশাল ও বাংলাবাজারের মোটর পার্টস বিক্রেতারা। পরে সেগুলো বিক্রি হয় খুচরায়।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মানের রাবার যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে খুলনা শিপইয়ার্ডে

টায়ারপট্টিতে ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন আলাউদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন গ্যারেজ থেকে পুরোনো টায়ার এলে আমরা সেগুলো কিনে নিই। সেখান থেকে বাছাই করে যেগুলা বিক্রির মতো সেগুলা ঘষেমেজে বা কাটিং করে আবার বিক্রি করি। বেশিরভাগই মোটরসাইকেল চালকরা আসেন এখানে। তারা বাইকের জন্য কম দামে চাকা নিয়ে যান। এছাড়া ট্রাকের চাকার বেশি চাহিদা এ মার্কেটে। অনেকে আবার বাইকের চাকা নষ্ট হলে বিট কাটতেও আসেন। তখন আমাদের কারিগররা সেগুলো কেটে দেয়।

টায়ার কেটে আগে যে ব্যবসা হতো এখন তা অনেকটা কমে গেছে। বর্তমানে গাবতলী, সাভার ও গাজীপুরে পুরোনো টায়ারের অনেক কেনাবেচা হয়। ফলে এখানকার ব্যবসায় আগের মতো মুনাফা নেই

তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের টায়ার মানভেদে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারের টায়ার ২ হাজার থেকে ৫ হাজার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার টায়ার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

টায়ারপট্টিতে পুরোনো ব্যবহার অযোগ্য টায়ার কেটে বিভিন্ন পার্টস বানান মমিন উল্লাহ। তিনি ১৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। তার সঙ্গে কথা হলে জাগো নিউজকে বলেন, টায়ার কেটে আগে যে ব্যবসা হতো এখন তা অনেকটা কমে গেছে। বর্তমানে গাবতলী, সাভার ও গাজীপুরে পুরোনো টায়ারের অনেক কেনাবেচা হয়। ফলে এখানকার ব্যবসায় আগের মতো মুনাফা নেই। এখন আমাদের চেয়ে বেশি ব্যবসা করেন বংশালের ব্যবসায়ীরা। তারা এখান থেকে পাইকারিতে নিয়ে খুচরায় ভালো ব্যবসা করেন।

আরও পড়ুন: যন্ত্রাংশ চুরি করে বিক্রি করা হতো সেই গাড়ির মালিকের কাছেই

তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। একটি টায়ার থেকে ফেলে দেওয়ার মতো কিছু নেই। প্রতিটি জিনিস কাজে লাগে। হাতিল বা অটোবি ফার্নিচার কোম্পানিগুলো আমাদের থেকে অর্ডার করে নিয়ে যান। পার্টস বানানোর পর টায়ারের টুকরো অংশগুলো ব্রিকফিল্ডের আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।

টায়ার কাটিং কারিগর রাজু বলেন, অনেক ঝুঁকি নিয়ে টায়ার কাটতে হয়। এক্ষেত্রে কাটিং ব্লেড, কাটিং ওয়্যার ও কাটিং সিজার প্রয়োজন হয়। মেশিনগুলো অনেক ধারালো। একবার হাত-পা কাটা গেলে ১০-২০টি সেলাই লাগে। এরকম ঘটনা মার্কেটে ঘটেছে। আমরা ব্যবসা শিখতে এসেছি। দৈনিক পাঁচ থেকে ১০টি টায়ার কেটে আমরা বিভিন্ন পার্টস বানাই।

টায়ারপট্টিতে পুরোনো টায়ার নিতে এসেছেন শাহাদাত হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাইকের জন্য টায়ার কিনতে এসেছি। নতুন টায়ারের দাম বেশি। তাই পুরোনো একটা নিয়েছি ৭০০ টাকায়। মোটরসাইকেলের চাকা অনেকদিন চলতে চলতে বিট মুছে যায়, তখন এখানে এসে বিট কেটে নিই।

আরএ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।