ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশ প্রথম: প্রণয় ভার্মা
ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারতের অগ্রাধিকারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে সহায়তায় অগ্রাধিকার দেওয়া ভারতের নীতি।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে ঢাকা গ্যালারির মিলনায়তনে ‘মিট দ্য সোসাইটি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতায় উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ভারত-বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করছে। ফলে দুই দেশের অগ্রগতি ক্রমশ বিকাশমান। ভারত-বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে দুই দেশের নেতাদের রয়েছে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অংশীদার। সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশ ও ভারত আজ বিশ্বে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বজুড়ে নন্দিত হয়েছে বাংলাদেশের উন্নতি ও অর্জন।
মহামারি, সন্ত্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ-ভারত বিশ্ব মঞ্চে একত্রে কাজ করেছে জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, জাতীয় উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা দুই দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও জনগণের মধ্যে সুদৃঢ় যোগসূত্র স্থাপন করতে চাই।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রণয় ভার্মা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস শোকের দিন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। সার্বভৌমত্ব অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৫২ বছর আগে তাদের অকুতোভয় আত্মত্যাগ চির অমর হয়ে থাকবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি ইতিহাস নয়, এটি একটি মহাকাব্য। এ মহাকাব্যকে আমাদের ধারণ করতে হবে। দুর্ভাগ্য এই কাজটি আমরা খুব কম করেছি। আমরা কিছু বই লিখেছি, কিছু স্মৃতিকথা লিখেছি, সেসব স্মৃতিকথায় অনেক ভুল-ভ্রান্তি আছে আমরা জানি। কিছু চলচ্চিত্র যুক্ত করার চেষ্টা করছি। সেই চলচ্চিত্রগুলো শিল্প হয়নি। এই মহাকাব্যকে শিল্পে পরিণত করতে হবে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের মনে রাখতে হবে। তাদের কথা ভাবতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পর রাজাকার-আলবদররা আছে অন্য নামে। তারা বুদ্ধিজীবী-মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করে।
স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া ও পদ্মশ্রী ভূষিত অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, বড় শহরের যোগ্য লোকদের আমরা বুদ্ধিজীবী বলছি। কিন্তু ঢাকার বাইরে প্রতিটি গ্রামে বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়েছে। কারণ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকও বুদ্ধিজীবী। যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যায়, সেই বুদ্ধিজীবী। মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকও বুদ্ধিজীবী হতে পারে। ব্যাপারটা আমাদের পীড়া দেয়। অনেক মাদরাসার শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে, কারণ তারা গণহত্যার পক্ষে ছিল না, ফতোয়া দিচ্ছে না বলে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এ দেশে রাজাকার ও আল বদররা মন্ত্রী হয়, এটা কি সহ্য করা যায়? প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। আমরা আমাদের সেই অপরাধবোধ, গ্লানি থেকে মুক্ত হয়েছি।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, পৃথিবীতে অনেক দেশ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। সেসব দেশে অন্য দেশগুলো ত্রাণ, রাজনৈতিক, অস্ত্র, কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক সমর্থন দিয়েছে অন্য দেশ। কিন্তু সরাসরি সৈন্য পাঠিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধ কেউ করেনি। শুধু ভারত তাদের সৈন্য পাঠিয়ে আমাদের সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ করে, জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে।
এমএমএ/জেডএইচ/এএসএম