সাতকানিয়া

অবৈধ বাঁধ ‘অপরিকল্পিতভাবে’ কাঁটলো বনবিভাগ, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৬ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

# ভেঙে গেছে ৬০ কাঁচা ঘর, একটি স্লুইস গেট।
# তলিয়ে গেছে ৭ হাজার হেক্টর বোরোর আবাদসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।
# ভেসে গেছে মৎস্য খামার।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সীমান্ত এলাকায় বনবিভাগের আড়াই হাজার একর বন দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা একটি লেকের বাঁধ কেটে দিয়েছে বনবিভাগ। তবে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ কেটে দেওয়ায় লেকের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।

পানিতে প্লাবিত হয়েছে ইউনিয়নের হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ সড়ক। পানির নিচে তলিয়ে গেছে পুকুর-ফসলি জমি। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর সংরক্ষিত বন ডুবিয়ে দিয়ে একটি কৃত্রিম লেক তৈরি করে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী একটি মহল। সোনাকানিয়া নামের একটি ছড়া খালে বাঁধ দিয়ে বানানো এই লেকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছিলেন স্থানীয় শত শত কৃষক।

jagonews24

গত দুই বছর ধরে বানানো এই কৃত্রিম লেকে ডুবে যাওয়া বনভূমি উদ্ধারে বন বিভাগ শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) অভিযান পরিচালনা করে। ওইদিন বিকেলে বন বিভাগের চট্টগ্রাম সদরের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন নেতৃত্বে বনবিভাগের লোকজন বাঁধ কেটে দিয়ে বনভূমি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেন। এসময় বাঁধ কেটে পানি যাওয়ার জন্য ছোট একটা রাস্তা করে দেওয়া হলেও রাতে পানির অতিরিক্ত স্রোতের তোড়ে পার্শ্ববর্তী অন্তত দুটি গ্রাম তলিয়ে যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘লোহাগাড়া উপজেলার বনভূমি অবৈধভাবে দখল করে বাঁধ তৈরির একটি সংবাদ গণমাধ্যমে দেখেছি, এরপর বনবিভাগ বাঁধটি কেটে দিয়েছে। আমাদের অবহিত না করেই অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি কেটে দেওয়ার কারণে সাতকানিয়া অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ৭ হাজার হেক্টর বোরোধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। ৬০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে, একটি স্লুইস গেট ভেঙে গেছে, ভেসে গেছে শত শত খামারের মাছ।’

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৩ মেট্রিকটন চাল ও ১৫০টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ কেটে লাখো মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুরোপুরি নির্ণয় করতে পারিনি, সবগুলো সংস্থা কাজ করছে, রাতের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুরোপুরি জানা সম্ভব হবে। আমরা এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে জানাবো।’

সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিকেলে (শনিবার) বন বিভাগের কর্মীরা বাঁধ কেটে চলে যান। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিকট আওয়াজে বাঁধের বড় অংশটি ধ্বসে গিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশ করে।’

তিনি জানান, পানিতে তলিয়ে ৩ শতাধিক কৃষকের ৭ হাজার হেক্টর বোরোধানসহ ফসলি জমির আলু, মরিচ, শসা ক্ষেতসহ শীতকালীন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ পানিতে নষ্ট হয়েছে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বন বিভাগের জায়গা উদ্ধারের জন্য আমাদের কাছে কাছে পানি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। আমাদের কাছে এত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।’

আবু আজাদ/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।