রবীন্দ্র সরোবরের আদলে হবে নজরুল সরোবর: তাপস
ধানমন্ডি হ্রদে রবীন্দ্র সরোবরের আদলে নজরুল সরোবর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি হ্রদে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান-২০২৪ এ অংশ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
মেয়র তাপস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরে এই ধানমন্ডি লেককে একটি নান্দনিক লেকে পরিণত করেন। ব্যাপক মহাপরিকল্পনা নিয়ে তিনি এটির অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সুন্দর পরিবেশ করে দিয়েছেন। ধানমন্ডি লেককে আরও সুন্দর, নান্দনিক এবং আকর্ষণীয় করার জন্য আমরা পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে কাজ করছি। আরও কিছু সংস্কারের জন্য এখন আমরা দক্ষিণ সিটি থেকে আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ধানমন্ডি ৩২ থেকে সাম্পান পর্যন্ত নতুন যে জায়গাটি আমরা দখলমুক্ত করেছি, সে জায়গায় এই রবীন্দ্র সরোবরের আদলে নজরুল সরোবর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। শিগগির এটির কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নজরুল সরোবরের নকশা দেখে দিয়েছেন। তিনি নজরুল সরোবরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করবেন বলে আমরা আশা করছি।
ধানমন্ডি হ্রদে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে এসময় একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে মেয়র শেখ তাপস বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিতে চাই, কোনো ভবঘুরে এখানে থাকতে পারবে না। এখানে যেসব খাবার দোকান রয়েছে রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে তাদের রান্নাঘর বন্ধ করতে হবে। সাড়ে ৯টার পরে কোনো খাবারের অর্ডার নেওয়া ও পরিবেশন করা যাবে না। বাইরের অংশে যে রেস্তোরাঁগুলো আছে, যেমন পানসি ও সাম্পান, সেগুলোর রান্নাঘর রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, সপ্তাহে একদিন বুধবার ধানমন্ডি হ্রদের পুরো এলাকা বন্ধ ঘোষণা করা হলো। বুধবারে কোনরকম ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কেনাবেচা এখানে হবে না। বুধবারে আমরা সবাই মিলে ধানমন্ডি লেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে টিপ-টপ রাখবো। যেন বৃহস্পতিবার থেকে শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশ থেকে যারা এখানে আসেন, তারা নান্দনিক, সুন্দর ও সবুজ পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন।
বায়ুদূষণ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বায়ুদূষণের কারণ নির্ণয়ে যেসব কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তাদের তথ্য অনুযায়ী- ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানিই ৮০ শতাংশ দায়ী। আমরা যে জীবাশ্ম জ্বালানি তথা পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ব্যবহার করি তা বৈশ্বিক মানদণ্ডে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের। যে কারণে আমাদের বায়ুতে যে পদার্থগুলো নিঃসৃত হয় তা অস্বাস্থ্যকর এবং বিপদজনক। সেজন্যই মাঝেমধ্যে আমরা বারবার বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে অবস্থান করি। আর বাকি ২০ ভাগের মধ্যে অন্য কারণগুলো হলো- ইটের ভাটা, নির্মাণসামগ্রীর ধুলোবালি ইত্যাদি।
তিনি বলেন, বায়ুদূষণ রোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব নির্মাণকাজগুলো হচ্ছে, আমরা সেগুলো তদারকি করছি। আমরা চেষ্টা করছি যেন খনন কাজের মাটি দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা না হয়। রাজউকের একটি অংশের কার্যক্রম রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় যে কাজগুলো হয় সেগুলো যেন বেষ্টনী দিয়ে ঢেকে তারপরে কাজ করা হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়গুলো আমরা রাজউকের সঙ্গে সমন্বয় করছি। তারা যেন উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমাদের সহযোগিতা দরকার হলে প্রয়োজনে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো।
তিনি বলেন, তবে তিন বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে নির্মাণসামগ্রীর জন্য বায়ুদূষণের মাত্রা আমরা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। মূল সড়কগুলোতে আমরা নিয়মিত পানি দিচ্ছি। আমাদের ধুলো সংগ্রহের যে গাড়িগুলো আছে সেগুলো দিয়ে উড়ালসেতু থেকে ধুলোবালি সংগ্রহ করছি।
মেয়র আরও বলেন, তবে বায়ুদূষণের মানদণ্ডে আমরা কোনোভাবেই নিচে আসবো না, যতক্ষণ না পর্যন্ত ভালো মানের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরে ভালো মানের জীবাশ্ম জ্বালানি নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও পেট্রো বাংলাকে চিঠি দেবো। তাদের অনুরোধ করবো ঢাকা শহরে যে জ্বালানি দেওয়া হয় তা যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের জ্বালানি হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ বলেন, আমরা ধানমন্ডিবাসীকে ভালোবাসা দেখাবো পরিচ্ছন্নভাবে। সে হিসেবে আজকে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। এখানে সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। সারাদিন এখানে অভিযান চলবে। এটি কিন্তু এরকম নয় যে, আজকে শুরু করে কালকে থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। এটি আজকে থেকে শুরু হলো, অন্তত আগামী পাঁচ বছর চলবে।
এদিন বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ১৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী অংশ নেয়।
এমএমএ/এমকেআর/এমএস