কেউ যেন ভুয়া ক্লিনিক-চিকিৎসকের দ্বারা প্রতারিত না হন: রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন

দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা আরও সহজ করতে চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, গরিবদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে তারা (গরিব) যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন বা অর্থের অভাবে অবহেলিত না হন।

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বা ভুয়া চিকিৎসকদের দ্বারা কেউ যেন প্রতারিত না হন সে বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চতুর্থ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন-২০২৪’ উদ্বোধনকালে তিনি এ নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ইউএসএ ইন্টারভেনশনাল একাডেমি এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

তিনি চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা প্রদান করা একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সরকার এরই মধ্যে উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। রোগীদের সঙ্গে সদয় আচরণ করুন এবং রোগীর মর্যাদা ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করুন।

রাষ্ট্রপতি এ সময় চিকিৎসা শিক্ষা, চিকিৎসা, সেবা ও গবেষণা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নতির প্রশংসা করেন।

দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল উল্লেখ করে সাহাবুদ্দিন দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে চিকিৎসক ও নার্সদের আরও আন্তরিক হতে হবে।

আরও পড়ুন>> এবার খতনা করাতে গিয়ে আইডিয়াল শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চিকিৎসাকে একটি মহৎ পেশা হিসেবে উল্লেখ করে সাহাবুদ্দিন বলেন, কিছু কিছু ভুয়া চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কারণে সমগ্র চিকিৎসক সমাজের সততা ও সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, কিছু অসাধু লোক (চিকিৎসক), ভুয়া চিকিৎসক ও অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্রের কারণে সাধারণ মানুষের মনে যাতে কোনো নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি না হয়- সে ব্যাপারে আপনারা সতর্ক থাকবেন।

দেশের চিকিৎসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বিশ্বমানের চিকিৎসক রয়েছেন, যাদের ওপর নির্ভর করা যায়।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য তুলে ধরেন, যা সারাবিশ্বে রোল মডেল তৈরি করেছে বলে জানান তিনি। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের উদ্যোগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, হৃদরোগ বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ ও মতবিনিময় সভা চিকিৎসকদের, বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকদের পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধকরণে সহায়ক হবে।

সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞান সবসময় পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞান সেগুলো মোকাবিলায় অগ্রসর হয়। রোগের বিভিন্ন ধরন ও প্রকৃতির কথা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।

তিনি হৃদরোগ, ক্যানসার, এইডস ও অন্যান্য মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে আরও সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য ও নিরাপদ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিটি নাগরিকের জন্য দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব একটি সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করাই সরকারের লক্ষ্য।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আপনাদের (চিকিৎসকদের) কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নতুন হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, ইন্টারভেনশনাল একাডেমির কোর্স চেয়ারম্যান, ইউএসএ, ডা. রাজেশ এম দেব, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান বক্তব্য রাখেন।

ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।