সাক্ষাৎ চান প্রধানমন্ত্রীর

পদোন্নতির ১২ বছরেও র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরতে পারেননি ওসি-এসআই

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ পিএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

২০১২ সালে পুলিশ পরিদর্শক পদমর‌্যাদার পরিদর্শকদের প্রথম শ্রেণি এবং উপপরিদর্শক (এসআই) ও ট্রাফিক সার্জেন্টদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি অনুযায়ী তখন থেকে পরিদর্শকদের দুই কাঁধে দুটি করে মোট চারটি পিপস এবং এসআইদের দুই কাঁধে একটি করে দুটি পিপস পরার কথা। কিন্তু পদোন্নতি পাওয়ার পর গত ১২ বছরেও পরিদর্শক ও এসআই পদের কর্মকর্তারা কাঙ্ক্ষিত র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরতে পারেননি। একই সঙ্গে তাদের কিছু দাবি এখনো পূরণ হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

মাঠ পর‌্যায়ের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরেও তাদের সেসব দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিষয়টির সুরাহায় তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। তাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি পূরণ করবেন।

এ ক্ষোভ ও হতাশার পরিপ্রেক্ষিতে নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’ র সদস্যরা সম্প্রতি রাজধানীর নয়াপল্টনে পলওয়েল মার্কেটের কার‌্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আশপাশের বিভিন্ন থানার ওসিরা এতে অংশ নেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরেও তাদের সেসব দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিষয়টির সুরাহায় তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। তাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি পূরণ করবেন

বৈঠকে অংশ নেওয়া অ্যাসোসিয়েশন নেতারা বলেন, একই সময়ে চাকরিতে যোগ দিয়ে একজন এসআই মাত্র একটি পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক হন। আর বিসিএস ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগ দিয়ে পুলিশের সর্বোচ্চ পর‌্যায়ে যান। পদোন্নতি না হওয়ায় পুলিশ পরিদর্শকদের হতাশা নিয়ে অবসরে যেতে হয়। এছাড়া এক যুগ আগে প্রথম শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির মর‌্যাদায় উন্নীত করা হলেও এখনো নির্ধারিত র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরতে পারেননি তারা।

পদোন্নতির ১২ বছরেও র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরতে পারেননি অনেক ওসি-এসআই

আরও পড়ুন
আইজিপি ব্যাজ পেলেন ৪৮৮ পুলিশ সদস্য
পুলিশের হাতে মাদক দেখলেই চাকরি থাকবে না: আইজিপি
মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন পরিদর্শক জাগো নিউজকে জানান, পদমর‌্যাদায় উন্নীত হওয়ার এত বছর হওয়ার পরও পুলিশ পরিদর্শকরা এখনো নবম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। নবম গ্রেডের অন্য বিভাগে কর্মকর্তারা ১০ বছর চাকরি করার পর সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হন। কিন্তু পুলিশ পরিদর্শকরা তা থেকে বঞ্চিত। অন্য ক্যাডারগুলোতে প্রথম শ্রেণির পদমর‌্যাদার কর্মকর্তারা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তার সঙ্গে তাদেরও সমন্বয় করা উচিত। পুলিশে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হয়। কিন্তু কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদে সে অনুপাতে পদোন্নতি হচ্ছে না।

অন্য এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ বাহিনী সৃষ্টির পরে ব্রিটিশ শাসনামল, পাকিস্তান শাসনামল, এমনকি দেশ স্বাধীনের পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আউট-সাইড ক্যাডেট বা সাব-ইন্সপেক্টররা পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু বর্তমানে তারা ওই পদ থেকে সারাজীবনে মাত্র একটি পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। ক্যাডার-সার্ভিস অফিসাররা সাব-ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির সুযোগ সীমিত করে ১৭৮টি সহকারী পুলিশ সুপারের পদ বিলুপ্ত করে এবং ৮৪টি সহকারী পুলিশ সুপারের পদ স্থগিত করে পদোন্নতির গতি প্রায় রুদ্ধ করে ফেলেছেন। ফলে মাঠ পর‌্যায়ে অফিসারদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

একই সঙ্গে চাকরিতে যোগ দিয়ে একজন এসআই মাত্র একটি পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক হন। আর বিসিএস ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগ দিয়ে পুলিশের সর্বোচ্চ পর‌্যায়ে যান। পদোন্নতি না হওয়ায় পুলিশ পরিদর্শকদের হতাশা নিয়ে অবসরে যেতে হয়। এছাড়া এক যুগ আগে প্রথম শ্রেণি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির মর‌্যাদায় উন্নীত করা হলেও এখনো নির্ধারিত র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরতে পারেননি তারা

বর্তমানে সারাদেশে পুলিশ পরিদর্শক পদমর‌্যাদার ৬ হাজার ৯১০ কর্মকর্তা এবং এসআই পদমর‌্যাদার ২৬ হাজার ৩৪৮ কর্মকর্তা চাকরিরত আছেন। ২০১২ সালের আগে পুলিশ পরিদর্শক পদ ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির এবং এসআই ও ট্রাফিক সার্জেন্ট পদ ছিল তৃতীয় শ্রেণির। বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, সহকারী পুলিশ সুপার মোট পদের বিপরীতে বিসিএসের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ এবং পুলিশ পরিদর্শক থেকে ৫০ শতাংশ পদোন্নতির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

পদোন্নতির ১২ বছরেও র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরতে পারেননি অনেক ওসি-এসআই

কনস্টেবল থেকে সহকারী উপপরিদর্শকদের (এএসআই) দাবি, কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এএসআই থেকে এসআই পদে পদোন্নতির জন্য প্রতি বছর পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও যে কয়টি পদ শূন্য থাকে শুধু সেসব পদে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরের বছর পদোন্নতির জন্য উত্তীর্ণ হওয়া সদস্যদের আবারও পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষায় একবার উত্তীর্ণ হলে পরের বছর পরীক্ষা না দিয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী পদোন্নতির ব্যবস্থা করা দরকার।

বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেও আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা হতাশা প্রকাশ করেছি। সরকারি অন্য নন-ক্যাডাররা যেসব সুবিধা পান সেখানে আমাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সবসময় মাঠে থাকি

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি থানার একজন ওসি বলেন, পুলিশ সপ্তাহে ক্যাডার কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছেন। অথচ নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি নিয়ে তারা কিছু বলছেন না। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।

আরও পড়ুন
সাধারণ মানুষ এখনো থানায় যেতে ভয় পায়: রাষ্ট্রপতি
প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনেও পুলিশকে প্রস্তুত হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
থানাকে নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে দেখতে চাই: আইজিপি

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেও আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা হতাশা প্রকাশ করেছি। সরকারি অন্য নন-ক্যাডাররা যেসব সুবিধা পান সেখানে আমাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সবসময় মাঠে থাকি।

তিনি বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো, আমাদের কষ্টের কথাগুলো বলবো। তিনি মানবতার নেত্রী, তিনি আমাদের প্রতি সদয় হবেন এবং আমাদের দাবির সমাধান করবেন।

টিটি/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।