ডা. প্রাণ গোপালের নামে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভেজাল ওষুধ বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২৪

যৌন উত্তেজক ও ডায়াবেটিসসহ নানা ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। এসব ওষুধ বিক্রির জন্য দেশের প্রখ্যাত নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছিল।

আর সরল বিশ্বাসে এসব ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নজরে আসার পর ঢাকার কলাবাগান থানায় মামলা করেন ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। এরপর যশোর ও রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

তারা হলেন মো. জহুরুল ইসলাম (৪১), সাবিদ চৌধুরী (৩৩), হাসিব চৌধুরী (২৭), মোহাম্মদ আলী (৪১), রাফিদ ইসলাম নুহিন (১৯) ও জাকির নাসের (২২)।

তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ভেজাল ওষুধ ও ফুড সাপ্লিমেন্ট। জব্দ ওষুধের মধ্যে রয়েছে 61 Dia-Fix নামক ওষুধ ১৪০ বোতল, ৪১০ বোতল Booster Box, লেবেল ছাড়া সবুজ রঙয়ের ক্যাপসুলের বোতল ৩৭০টি, Die-Fix, PREMIUM HERBAL FORMULA লেবেল ৩০টি, Gingko Hiloba নামক যৌন উত্তেজক ১০০ গ্রাম পাউডার, বিভিন্ন ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট তৈরির ফরমুলা লেখা একটি ডায়েরি।

ডিবি সাইবার জানায়, ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের চেম্বারের সহকারী বদরুল ইসলাম ১১ ফেব্রুয়ারি বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মামলাটি করেন।

ডা. প্রাণ গোপালের নামে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভেজাল ওষুধ বিক্রি

ওই মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ফেসবুক ব্রাউজের সময় দেখতে পান যে, ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নাম ও ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন আইডি এবং পেজ থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘ছয়দিন পর রক্তে শর্করার মাত্রা হবে ৪.২ মিমি। ঘুমাতে যাওয়ার আগে শুধু একটি পানীয় পান করুন।’ এছাড়া বিভিন্ন পরামর্শ সম্বলিত পোস্ট ও কমেন্ট করে Dia-Fix নামক অনুমোদনহীন ডায়াবেটিসের কথিত ওষুধ ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের উদ্ভাবিত বা নিজস্ব প্রোডাক্ট বলে প্রচারণা চলানো হচ্ছিল। এসব ওষুধ বিক্রির জন্য আলাদা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হতো।

ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বলছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণামূলক এই ব্যবসায় জড়িত সবাই উচ্চশিক্ষিত। কেউ অনার্স, মাস্টার্স, এমবিএ ও এমএসসি পাস করা। তাদের মাসিক আয় ৩৮ লাখ টাকা। যে কয়দিন ব্যবসা করেছেন তাতে ইনকাম হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

প্রাণ গোপাল দত্তের নামে ফেসবুক আইডি

চক্রের সদস্যরা অনুমোদন ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামতো যৌন উত্তেজনা বর্ধক বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে শক্তিবর্ধক ওষুধ তৈরি করতেন। এছাড়া ফরমুলা তৈরি করে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ বানিয়ে বাজারজাত করে আসছিলেন।

তারা বিভিন্ন নামে একাধিক ফেসবুক আইডি খুলে বিজ্ঞাপন বুস্টিং করে প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এমনকি প্রাণ গোপাল দত্তের নামে ফেক ফেসবুক একাউন্ট খুলে বিজ্ঞাপনে কমেন্টকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন। ‘নিখাঁদ’ নাম দিয়ে তারা পণ্যের ব্রান্ড করছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে এসব পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে বিক্রি করা হতো।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ঢাকা মেট্রোপলিটনের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রাণ গোপাল দত্তের নাম ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। এর মাধ্যমে তারা প্রতারণা করতেন।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, প্রাণ গোপাল দত্তের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার ছয়জনকে আদালতে পাঠানোর পর রিমান্ডে এনেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবকিছু স্বীকার করেছেন। আমরা সবমসয় বলি- ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখলেই এ ধরনের ওষুধ কিনবেন না। তারপরও অনেকে এসব চটকদার বিজ্ঞাপন দেখেই যৌন উত্তেজক ও ডায়াবেটিকসের ভেজাল ওষুধ কিনছেন।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিজ্ঞাপন নয়, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ কেনা উচিত। বিজ্ঞাপন দেখলে বা প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়লে আমাদের জানান। তাহলে গোয়েন্দা পুলিশ এ ব্যাপারে কাজ করবে। আর ওষুধ কিনতে অবশ্যই বিএসটিআই বা ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদিত কি না তা দেখে নিন।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, চক্রটি অনেকদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিল। প্রত্যেকে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি। কিন্তু তারা কেন প্রতারণামূলক ব্যবসা করে আসছেন তা জানা যায়নি। তবে তারা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

টিটি/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।