অভিযোগ রিজওয়ানা হাসানের

নদী দখলের পর মেরে ফেলে, উদ্ধার করে জনগণের টাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২৪
বুড়িগঙ্গা নদীর পুনরুদ্ধার বিষয়ে গবেষণার ফল প্রকাশ করেন গবেষকরা

নদী বাঁচিয়ে উন্নয়ন করলে সেটি টেকসই উন্নয়ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা নদী বাঁচাও আন্দোলন করি, তখনই হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। প্রথমে তারা নদীকে দখল করে, দূষণ করে, তারপর মারে। তারপরে দখলমুক্ত করার জন্য জনগণের কষ্টার্জিত টাকা নষ্ট করে। বুড়িগঙ্গা ঘিরে এত প্রকল্প রয়েছে, তারপরও আমরা আগের অবস্থায় ফেরাতে পারলাম না।’

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর দৃকপাঠ ভবনে আয়োজিত ‘বুড়িগঙ্গা: নিরুদ্ধ নদীর পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ভিডিও বার্তায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশের নদীগুলো ভূমিদস্যু ও দূষণকারীদের হাতে চলে গেছে। আমাদের নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো। নদী বাঁচলে জলবায়ু সহনশীল অবস্থায় থাকবে। তীব্র দাবদাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। নদী বাঁচলে আমাদের কৃষকরা সমৃদ্ধ হবে। তাই নদীকে বাঁচিয়ে উন্নয়ন করলে সেটি হবে টেকসই উন্নয়ন।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা নদীর অববাহিকায় অবৈধ ভবন হচ্ছে। জলাভূমি কমে যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গা এখন কালো কুচকুচে, থকথকে বুড়িগঙ্গা। কিন্ত আমরা চেয়েছি এই নদী হোক প্রবাহমান। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েও আমরা প্রবাহমান বুড়িগঙ্গা পাচ্ছি না। কাজেই টাকা খরচ করে নদীকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব না। নদীর সঙ্গে যতগুলো খালের সংযোগ আছে সবগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। বৈষম্যহীনভাবে দখলদার সরাতে হবে। যে দখলদার তার স্থাপনা নিজেদের সরাতে হবে, জনগনের টাকা দিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাবে না।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘শিল্প সংস্থা যারা বুড়িগঙ্গকে দূষিত করছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা দূষণ করছে, তারা কি তাদের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ বুড়িগঙ্গার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীকে দেবে? তাহলে কেন জনগণের সম্পত্তি এই নদীকে আমরা নির্দিষ্ট ব্যক্তির স্বার্থে নষ্ট করতে দেবো। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও কেন আমরা ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে পারলাম না। এই দিকে নজর দিতে হবে।’

গবেষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই গবেষণা দেখিয়ে দিচ্ছে আইন প্রণেতা, আমলা অথবা যারা যে প্রক্রিয়ায় বুড়িগঙ্গাকে উদ্ধার করতে চাচ্ছেন, সেটা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এই প্রক্রিয়ায় বুড়িগঙ্গা উদ্ধার করা যাবে না। যদি নদী বাঁচাতে হয়, নদীর প্রাণ ফেরাতে হয় তাহলে অনেক বেশি টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেই। যেসব প্রক্রিয়া এই নদী ধ্বংস করছে, তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

পরিবেশবাদী এই আইনজীবী বলেন, ‘আশা করি বুড়িগঙ্গা নিয়ে এই গবেষণা নদী বাঁচাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের সাহায্য করবে। যেসব জেলা প্রশাসক ও নদী বাঁচাও আন্দোলনকারীরা তাদের আওতাভুক্ত নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে চান, এই গবেষণা থেকে তারা শিক্ষা নিতে পারবেন।’

অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব গবেষক শেখ রোকন। এতে সভা প্রধান ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, আলোচক ছিলেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ।

আরএএস/কেএসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।