সদরঘাট ট্র্যাজেডি

সপরিবারে নিহত মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৩২ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২৪
ছবি জাগো নিউজ

ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে নিহত হয়েছেন পন্টুনে থাকা ৫ যাত্রী। এরমধ্যে একই পরিবারের ছিলেন তিনজন। ওই তিনজন হলেন- মো. বেলাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৬) ও তাদের শিশু মাইসা (৩)। তাদের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। নিহত অন্য দুজন হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের রবিউল (১৯) ও পটুয়াখালীর রিপন হাওলাদার (৩৮)।

সপরিবারে নিহত মুক্তা সাড়ে ৬ থেকে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার আত্মীয়রা। তারা বলছেন, বেলাল পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল ছিলেন। তার বাবা নেই। পোশাক কারখানার স্বল্প বেতনের কর্মী ছিলেন বেলাল। বেলাল-মুক্তা দম্পতির সংগ্রামী জীবনে স্বাবলম্বী হতে চাকরির পাশাপাশি স্ত্রীকে নিয়ে ব্যবসায়ও শুরু করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ব্যবসা আপাতত বন্ধ রেখে স্ত্রীকে গ্রামে রেখে আসতে চেয়েছিলেন বেলাল। তাই ভিড় এড়িয়ে রওয়ানা করেছিলেন ঈদের দিন।

বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এমভি তাশরিফ-৪ দড়ি দিয়ে সদরঘাট পন্টুনে বাঁধা ছিল। এসময় এমভি ফারহান-৬ লঞ্চটি পার্কিং করার জন্য ওই দুই লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ঢুকলে ধাক্কা লেগে এমভি তাশরিফ-৪ লঞ্চটির বেঁধে রাখার দড়ি ছিঁড়ে যায়। এতে পন্টুনে থাকা পাঁচ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে কথা হয় বেলালের ভায়রা জহিরুল ইসলাম রাজু সঙ্গে। তিনজনের মরদেহ তখনও হাসপাতালের মর্গে রাখা।

জহিরুল ইসলাম রাজু মিরপুর ডিওএইচএসে একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন। থাকেন গাজীপুরে। বেলালও পরিবার নিয়ে থাকতেন গাজীপুরে।

আরও পড়ুন

রাজু জাগো নিউজকে বলেন, বেলাল গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। গার্মেন্টসের টাইম কিপিং বিভাগে কাজ করতেন। ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো বেতন পেতেন। সাড়ে ৪ হাজার টাকার বাসায় থাকা বেলালের জীবনটা সংগ্রামের ছিল। মেয়ে মাইশাকে এখনো স্কুলে ভর্তি করাননি। একটা মেয়ে বলে মেয়েটাকে অনেক আদর করতেন বেলাল।

তিনি বলেন, চাকরির ফাঁকে ছোট্ট একটা দোকান দিয়েছিলেন বাসার কাছেই। সেখানে টেইলার্সের কিছু কাপড়-চোপড় উঠিয়েছিলেন। মুক্তা (বেলালের স্ত্রী) টেইলার্সের কাজ করতে পারতো। মুক্তা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর দোকান ছেড়ে দিয়েছিল। মালামাল বাসায় রেখে দিয়েছিল। বাচ্চা হাওয়ার পর আবার দোকান দেওয়ার ইচ্ছা ছিল।

‘বেলাল গাজীপুরে চাকরি করতেন। সেখানেই বাসা নেন। সেখানেই তার একটা মেয়ে হয়। বেলাল আর আমার স্ত্রীর আপন মামাতো-ফুপাতো ভাইবোন। তাদের সব সময় আমাদের বাসায় আসা-যাওয়া ছিল। বাসাও পাশাপাশি ছিল। কিন্তু আমার ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর আমার বাসা পরিবর্তন করতে হয়। এরপর গত চারমাস ধরে তাদের সঙ্গে একটু গ্যাপ হয়েছে।’

রাজু আরও বলেন, মুক্তা সাড়ে ৬ বা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল, এজন্য তাকে বাড়িতে রেখে আসার জন্য রওয়ানা করেছিল। তা না হলে সবার সঙ্গে আগেই চলে যেত।

আরও পড়ুন

বেলালের বাবা নেই। তার মা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় থাকেন বলেও জানান জহিরুল ইসলাম।

বেলালের দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নৌপুলিশ বেলালের ডায়ালের নম্বর থেকে আমার স্ত্রীর বড় ভাইকে ফোন দিয়েছিল। সে আবার ফোন দিয়ে আমাদের জানিয়েছে।

আরএমএম/এমএইচআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।