‘বাংলাদেশে স্থিতিশীল দুর্নীতির ভারসাম্য বিরাজ করছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩২ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশে স্থিতিশীল দুর্নীতির ভারসাম্য বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডিতে সিপিডি ‘বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর: অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান।

বইটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখেছেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

নিজের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে সাফল্য হয়েছে, তার বিপরীতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি হয়নি, অবনতি হয়েছে। পোশাক খাত, প্রবাসী শ্রমিক এই দুই খাতে ইনফরমাল সেক্টর করেছে, যেখানে ফরমাল ইনস্টিটিউশন কাজ করেনি।

আগামীতে এই দুই খাত দিয়ে খুব বেশি আগানো যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নতুন খাত প্রয়োজন। কিন্তু এসবের জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা নেই। আমরা কি ইকোনমিক জোন নিয়ে আগাবো? না বিদেশি বিনিয়োগ নেবো? এসব জায়গায় নানান প্রশ্ন আছে।

তিনি আরও বলেন, এত বছরে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অবনতি হয়েছে। যেই জিনিসটা আমার লেখাতে এনেছি। সেটা হলো আমাদের রিফর্ম দরকার। আমাদের ইকোনমিক রিফর্ম যেমন দরকার, ইন্সটিটিউশনাল রিফর্ম দরকার। বাংলাদেশে স্থিতিশীল দুর্নীতির ভারসাম্য বিরাজ করছে। এটা ভাঙার জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। তবে এখানে অ্যান্টি রিফর্ম কোয়ালিশন আছে। রিফর্মের উদ্যোগগুলো নিতে যাবে তার বিপরীতে শক্তিশালী গ্রুপ আছে। তারা এতটাই শক্তিশালী, এতটাই ঐক্যবদ্ধ যে, সেটাকেও ভাঙার জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা দরকার।

বইটিতে বাংলাদেশে দ্বৈত উত্তরণ ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, আমি যেটা বলতে চেয়েছি শত ধরনের সমস্যা সত্ত্বেও গত ৫১ বছরে দেশের আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে অনেক উন্নতি হয়েছে। যার প্রতিফলন আমরা দ্বৈত উত্তরণে দেখি। আমরা ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাবো। আমরা ২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। এই দুই উত্তরণ আমাদের আর্থসামাজিক সাফল্যের প্রতিফলন।

তিনি আরও বলেন, প্রথম প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ আমরা ভালোভাবে মোকাবিলা করেছি। এই সাফল্য আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের চ্যালেঞ্জের কাছে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের চ্যালেঞ্জগুলোকে আগামীতে কীভাবে মোকাবিলা করতে পারবো, এটার ওপর নির্ভর করবে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ টেকসই হবে কি না, আমরা কোনো ঋণ ফাঁদে বা মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়বো কি না। দ্বিতীয় প্রজন্মের চ্যালেঞ্জগুলো কি সেটা আমি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছি।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশে থেকে চলে যাওয়ার অর্থটা হলো বাজার সুবিধা নির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থেকে আমাকে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা, প্রযুক্তি নির্ভরতায় রূপান্তর করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা দেখি, উচ্চ কারিগরি রপ্তানির যে উপাদান সেটা মাত্র ১ শতাংশ। ভিয়েতনামে সেটা ৪৫ শতাংশ। গত ১০ বছরে হাই টেকনোলজি এমবেডেড এক্সপোর্ট রপ্তানি ১ শতাংশই রয়ে গেছে, যেখানে ভিয়েতনাম সেটা ২৫-৪৫ শতাংশে গেছে। অর্থাৎ হাইটেক রপ্তানিতে তারা রূপান্তর করেছে। শ্রম নির্ভর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির সমন্বয় করতে হবে।

অনুষ্ঠানের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর রওনক জাহান বলেন, দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয়েছে, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। উন্নয়ন ও কিংবা পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়েছে। গত ৫১ বছরে আর্থ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন হয়েছে। সেসব বিষয়ে বইয়ের লেখকরা ডাটা এনালাইসিস করে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।

দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বইটির বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যায় বলেন, বইটিতে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ আছে, যা বর্তমানে চলছে। গত কয়েক দশকে ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগের ক্ষমতা কমেছে। ব্যবসায়ীরা এখন রাজনৈতিক এলিট শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্ক করে সুবিধা আদায় করছেন।

বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, ২৫ বছর আগে আমাদের শিল্প বৈচিত্রকরণ দুর্বল ছিল। বর্তমানে আমরা অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে উন্নতি করেছি। পোশাক খাত ও রেমিট্যান্সে আমরা উন্নতি করেছি। একটি গণতন্ত্র কীভাবে দুই দলীয় ব্যবস্থায় কাজ করতে পারে তা আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি। এখন সব দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গোলমাল আছে। কারণ অনেক দল প্রতিযোগিতা করছে।

এসএম/জেডএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।