রূপ বদলাচ্ছে রাজশাহীর আলোচিত সেই প্রজাপতি সড়কের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৯:১০ এএম, ২০ এপ্রিল ২০২৪

অডিও শুনুন

রাজশাহীর প্রথম আলো ঝলমলে সড়কবাতি প্রজাপতি। সড়কের এই দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি বাতি বসানো হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। উদ্বোধনের পর বেশ সুখ্যাতি পায় এই বাতিগুলো। এমনকি নগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কটির নাম প্রজাপতি সড়ক দেন নেটিজেনরা। দেশ এমনকি বিদেশ থেকেও অনেকে এসেছেন এই সড়কটি দেখতে। তবে সম্প্রতি এই সড়কের বেশিরভাগ বাতিই খুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে আলোচিত সড়কটির সেই চেহারা এখন আর নেই।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, একটি সুখ্যতি নষ্ট না করে এটির বিকল্প কিছু করা উচিত। আর সিটি করপোরেশন বলছে এগুলো অন্য সড়কে লাগানো হবে। এখানে হবে দুইটি ওভারপাস।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, প্রায় ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক ডিভাইডারে বসানো হয় ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন বাতি। খুঁটির ওপরের অংশে প্রজাপতির মতো ডানা মেলে থাকা দুই পাশে দুটি করে এলইডি বাতির কারণেই এটি রাজশাহীর ‘প্রজাপতি’ সড়ক নামে পরিচিতি পায়। প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি খুঁটি বসানোর পর ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

রূপ বদলাচ্ছে রাজশাহীর আলোচিত সেই প্রজাপতি সড়কের

তবে উদ্বোধনের দুই মাস না যেতেই ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল বিকেলে হালকা ঝড়ে সড়কের ৮৬টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে উপড়ে যায় ৪০টি আর হেলে পড়ে ৪৬টি। এ ঘটনার পর রাসিক বিদ্যুৎ বিভাগের ‘হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, দুই রাতের মধ্যে সব সড়কবাতি মেরামত করা হবে। এরপর দীর্ঘ ৭ মাস পর সড়ক বাতি মেরামত করে আবারো ফিরে আসে এই আলোচিত বাতি। তবে এবার এই সড়কে দুটি ওভারপাস নির্মাণের কারণে বাতিগুলো খুলে নেওয়া হচ্ছে অন্য সড়কে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রজাপতি সড়ক। এরইমধ্যে ওভারপাস নির্মাণের জন্য প্রায় ৬৭টি বাতি খুলে নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর আলোচিত প্রজাপতি সড়কের বিলসিমলা অংশের শুরু থেকে বাতি খুলে নেওয়া হয়েছে। এমনকি সেখানকার ডিভাইডারও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিলসিমলা অংশ থেকে ডিঙ্গাডোবা মোড় পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও কোর্ট চত্বর থেকে রায়পাড়া রেলগেট পর্যন্ত বাতি খুলে ফেলা হয়েছে। এসব সড়কে ওভারপাস নির্মাণের জন্য শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। সড়কের মাঝে বিশাল বিশাল গর্ত করে বানানো হচ্ছে পাইল। এসব এলাকায় গাড়ি চলাচলের জন্য বিকল্প পথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এমনকি এই সড়কে অন্য কোনো বাতিও নেই। ফলে সন্ধ্যার পর এসব সড়ক হয়ে উঠছে অন্ধকারাচ্ছন্ন।

রাজশাহীর এই সড়কের পাশেই বাড়ি নুর আমিনের। তিনি বলেন, এটি আমাদের কাছে অনেক গর্বের বিষয় ছিল যে প্রথম আলোক ঝলমলে বাতিগুলো আমাদের সড়কে ছিল। এই সড়কই রাজশাহীকে অনেক সুনাম এনে দিয়েছে। আমাদের সামনেই অনেক বিদেশিও এই সড়ক ঘুরে গেছেন। ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এখন এই সড়কটি অন্ধকার। বাতিগুলো যখন খুলে নেওয়া হয় তখন আমাদের খুব কষ্ট লেগেছে। আমরাও চাই এই বাতিগুলো থাকুক।

রূপ বদলাচ্ছে রাজশাহীর আলোচিত সেই প্রজাপতি সড়কের

রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক নাহিদুর রহমান শিশির। তিনি বলেন, এই লাইটের পরই এই এলাকায় অনেকে এসেছেন। নতুন করে বসবাসও শুরু করেছেন। তবে এখন বাতিগুলো নেই। এই লাইটগুলো না সরিয়ে আবারো এগুলো ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, এই সড়কে দুটি স্থানে ওভারপাস হবে। এগুলো নির্মাণের জন্য ৬৭টি বাতি খুলে নেওয়া হয়েছে। এগুলো নতুন করে মিজানের মোড়ের সড়কে লাগানো হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রজাপতি সড়ক হারিয়ে যাবে এটি আমরা বলতে পারবো না। তবে আমরা চেষ্টা করবো নতুন করে এই সড়কে সৌন্দর্য্যবর্ধন করতে।

রূপ বদলাচ্ছে রাজশাহীর আলোচিত সেই প্রজাপতি সড়কের

এদিকে আলোচিত সড়কটির সেই সৌন্দর্য্য হারিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, আসলে যেকোনো জিনিসের জন্ম বা সৃষ্টি হলে সেটা প্রথমদিকে সুন্দর করে করা হয়। সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠিত কোনো জিনিস ধ্বংস করে অন্য প্রকল্প করলে সেটির আগের সৌন্দর্য্য ফিরে আসে না। সুতরাং এই ধরনের কিছু ধ্বংস না করে নতুন করে একটি প্রকল্প নেওয়াটাই আমি ভালো মনে করি।

রাজশাহী জেলা সুজনের সভাপতি আহম্মেদ সফিউদ্দিন বলেন, আমাদের দেখতে হবে এই রাস্তায় ওভারপাস বা ফ্লাইওভারের দরকার আছে কিনা। আমিতো মনে করি ওই রাস্তায় এক চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়া ছাড়া আর কোনো দরকার নেই। ওই রাস্তায় তেমন যানজটও হয় না। এই ফ্লাইওভারের আদৌ দরকার কী সেটা দেখা দরকার।

তিনি বলেন, এই নগরীর অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে। এই নগরীতে প্রতিদিন কোনো না কোনো ভিত তৈরি হচ্ছে। গোটা রাজশাহীজুড়ে প্রতিদিনই ১০টি করে বাড়ি হচ্ছে। রাজশাহীর কেন্দ্রের বাইরে বড় বড় রাস্তা করে দেওয়ার দরকার। তবে এখন এই রাস্তায় ফ্লাইওভার না করে কিছু পুকুর ও অন্য রাস্তা করে ফেলা যেত। তারাতো এটি রাতারাতি করছে কিছু টাকা কামানোর জন্য।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।