‘রোদে পুড়ে ডিউটির পর বিশ্রামে গেলে শরীর জ্বালাপোড়া করে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৭ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২৪

তপ্ত রোদ আর গরমে শরীরের ঘামে ভিজে গেছে ইউনিফর্ম। কপালের ঘাম গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। তপ্ত পিচঢালা রাস্তায় ঘাম বাষ্পে পরিণত হচ্ছে। তবুও এক বিন্দু রাস্তা থেকে সরে বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তীব্র দাবদাহে পুড়ে কাজ করছেন ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সাড়ে তিন হাজার সদস্য। এক হাতে ছাতা অন্য হাতে গাড়ি চলাচলের ইশারা-ইঙ্গিত করছেন তারা।

গত কয়েক বছর ধরে দেশে গরম বেড়েই চলছে। ভাঙছে তাপমাত্রার পুরোনো রেকর্ড। তীব্র দাবদাহে নাজেহাল অবস্থা মানুষের। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। যারা বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হয়েছেন তারাও কাজ শেষে আবার দ্রুত ঘরে বা কর্মস্থলে ফেরার তাড়ায় থাকেন। এর মধ্যেও ঠাঁয় সড়কের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তবে তীব্র গরমে কষ্ট হলেও কোনো অভিযোগ নেই কারও। যে কোনো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ট্রাফিক সদস্যরা কাজ করেন নির্বিঘ্নে।

ডিএমপি থেকে জানা গেছে, দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যরা হিট স্ট্রোকসহ পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। কেউ কেউ ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে।

‘রোদে পুড়ে ডিউটির পর বিশ্রামে গেলে শরীর জ্বালাপোড়া করে’

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে দেখা যায়, আসাদগেট ট্রাফিক সিগন্যালে কনস্টেবল মোদাব্বের হোসেন বারবার ঘাম মুছছেন। আর গাড়ি ছেড়ে মূল সড়ক থেকে একটু ছায়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের কারণে তিনি ছায়ার মধ্যে যেতে পারছেন না। তাকে মূল সড়কেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে তেজগাঁও জোনের ট্রাফিক সদস্য মোদাব্বের হোসেন জাগো নিউজকে জানান, দায়িত্ব পালন করতে গেলে বিশ্রাম অথবা বসার কোনো সুযোগ নেই। ১৯৮৪ সাল থেকে পুলিশে চাকরি করছি। কত ঝড়, তুফান গেলো কখনও পিছপা হইনি। ট্রাফিকের চাকরি মানেই ঝড়, বৃষ্টি, তুফান, গরম কিংবা শীত সব সময় ডিউটি।

তিনি বলেন, পায়ে দীর্ঘক্ষণ মোটা মোজা আর জুতা পরে থাকায় ঘাম হয়। ঘাম থেকে বিভিন্ন রোগবালাই হচ্ছে ইদানীং।

‘রোদে পুড়ে ডিউটির পর বিশ্রামে গেলে শরীর জ্বালাপোড়া করে’

আসাদগেট ট্রাফিক সিগন্যালে কথা হয় সার্জেন্ট রইসুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে গরম তাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। তবে এগুলো মেনেই চাকরিতে আসা। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে আমাদের জন্য স্যালাইন ও শরবতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ডিউটিতে আসা সবার কিছুটা স্বস্তি হচ্ছে। ডিউটি করতে গেলে যদি কারও অসস্তিবোধ হয় তবে রিপ্লেসে অন্য সদস্য এলে তখন ওই পুলিশ সদস্য বিশ্রামে যেতে পারবেন। এর আগে নয়।

তিনি বলেন, সারাদিন রোদ-পুড়ে ডিউটি করে যখন বাসায় যাই তখন ঠান্ডায় শরীর জ্বালাপোড়া করে। খাওয়াতে অরুচিসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হয়।

কারওয়ান বাজার সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য তহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ডিউটি করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

রাজধানীর শাহবাগে প্রখর রোদে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পুলিশ দিদার মাহমুবের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, রাস্তার প্রখর তাপে পুড়ছি, গরম তো প্রতি বছর আসে। কিন্তু এমন তপ্ত পরিস্থিতি এই প্রথম। রোদের তাপে রাস্তার পিচও গলে যাচ্ছে। একদিকে রোদের তাপে উত্তপ্ত রাস্তা অন্যদিকে গাড়ির ধোঁয়া। রাস্তায় যেন আগুন ঝরছে। এর সঙ্গে আছে হর্ন ও হুটারের শব্দের যন্ত্রণা।

ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, ঝড়, বৃষ্টি কিংবা প্রখর রোদ যে কোনো মুহূর্তে ট্রাফিক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে সদা প্রস্তুত। যদিও এ তীব্র গরমে বেশিরভাগ সদস্যের কষ্ট হচ্ছে তবুও কেউ দায়িত্ব থেকে পিছপা হইনি আমরা।

‘রোদে পুড়ে ডিউটির পর বিশ্রামে গেলে শরীর জ্বালাপোড়া করে’

ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মুনিবুর রহমান বলেন, উত্তপ্ত রোদে ইউনিফর্ম পরে পিচঢালা সড়কে দাঁড়িয়ে নিজেদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিটি ট্রাফিক সদস্যরা। এসময় তাদের মনোবল বাড়াতে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে একদিকে ফোর্সের মনোবল যেমন চাঙ্গা হচ্ছে, অন্যদিকে দাবদাহের মধ্যেও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নগরবাসী সর্বোত্তম সেবা পাচ্ছেন।

তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্যের পেশাদারত্ব ও মনোবল অটুট রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এই দাবদাহে কর্মরত সদস্যদের স্বস্তি দিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক সদস্যদের জন্য সুপেয় পানি, খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত ও গ্লুকোজ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাফিক বক্সে হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ও সুস্থ থাকতে বারবার ব্রিফিং করা হচ্ছে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে অতিরিক্ত কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত মোট সদস্য ৩ হাজার ৮৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ সদস্য সরাসরি মাঠে কাজ করেন। প্রথম শিফট সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর ২টা। দ্বিতীয় শিফট দুপুর ২টা থেকে রাত ১১টা। রাতের শিফট ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, তীব্র গরমেও নগরবাসীর সেবা দিতে ট্রাফিক পুলিশের প্রতিটি সদস্য রাস্তায় থেকে রোদে পুড়ে ডিউটি করে যাছেন। ক্লান্তি থাকলেও তাদের মনোবল দুর্বল হয়নি। সবাই যেন সুস্থভাবে ডিউটি করতে পারে সেজন্য প্রতিটি ট্রাফিক বক্সে সদস্যদের জন্য সুপেয় পানি, খাবার স্যালাইন, ফলের জুস ও লেবুর শরবত সরবরাহ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াও সাধারণ জনগণ, পথচারী ও রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের একটু স্বস্তি দিতে ঢাকার মোড়ে মোড়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

টিটি/এমআইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।