তামাকের ব্যবহার রোধে কর বৃদ্ধির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তামাক আইনে আছে জনসম্মুখে বা পাব্লিক প্লেসে ধূমপান করতে পারবে না। তবে আইন থাকলেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাই আইনের প্রয়োগ আরও কার্যকর করতে হবে। এছাড়া নাটক, সিনেমায় সিগারেটকে আকর্ষণীয় করে কোনো কিছু প্রকাশ করা যাবে না। তামাকের ওপর কর বাড়ালে ব্যবহার কিছুটা কমবে, অন্যদিকে রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। তাই আসন্ন বাজেটে তামাক কর বৃদ্ধি করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর বৃদ্ধির দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ ১ এর সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ধূমপান করলে কি ক্ষতি হয়, যারা ধূমপান করেন তারাই সবচেয়ে বেশি জানেন। সারাবিশ্বে এ নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা হয়েছে। তামাকের কর বাড়ালে ব্যবহার কমে এটি সত্যি। তবে অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সিগারেটই এমন একটি জিনিস যেটায় দাম বাড়লেও তারা অন্য কিছুতে কম খরচ করেও সিগারেট খেয়ে থাকে। নতুন করে ই সিগারেট, ভ্যাপ একটা ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। অনেকে বলে ভ্যাপে সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর। তবে বিষয়টি একেবারে উল্টো। সিগারেটের তুলনায় ও অনেক বেশি ক্ষতিকর ভ্যাপ।

আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে সবধরনের তামাক পণ্যের ওপর কার্যকর করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশন।

অনুষ্ঠানে তারা জানান, দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫.৩ শতাংশ) মানুষ তামাক সেবন করেন। পাশাপাশি প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এবং এসব রোগের চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় এ সংক্রান্ত খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয়ের তুলনায় অনেক বেশি।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, অথচ একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।

তামাক পণ্যের দাম বাড়লে যে এর ব্যবহার কমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি প্রমাণিত। এমতাবস্থায় সিগারেটের নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ৬০ টাকা; মধ্যমস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ৮০ টাকা; উচ্চস্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ১৩০ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ১৭০ টাকা ধার্যের দাবি জানানো হয়।

সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, আসন্ন বাজেটে তাদের প্রস্তাবিত তামাক কর বাস্তবায়ন করা হলে দেশে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.৮০ শতাংশ হবে। একই সঙ্গে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৬ তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে; যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, দেশে ১৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে ১৮ শতাংশ ধূমপান করেন। আবার কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূপমানের শিকার হন। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে তামাকের ক্ষতিকর দিকে থেকে রক্ষায় সব ধরনের তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ তামাক ব্যবহার কমাতে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি পন্থা কার্যকর কর আরোপ। আমাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করে কার্যকর কর আরোপ করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে ১০ হাজার কোটি টাকা; যা বিগত বছরের থেকে ২৮ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, প্রতি বছর বাজেটের আগে এমন আলোচনা হয়। যার ফলাফল হিসেবে প্রতি বছরই তামাকের দাম বাড়ে। তামাক নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক অর্থনীতিবিদ তামাকের আয়-ব্যয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর পর যে প্রভাব পড়ার কথা বা আমাদের যে প্রত্যাশা পূরণ হয় না।

তিনি আরও বলেন, তামাক পণ্য থেকে রাজস্ব আসে, তার থেকে বেশি ব্যয় হয় তামাক ব্যবহারে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয়, সেটি নিরাময়ে। সুতরাং এর বিকল্প বের করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তামাকের কর ব্যাপক হারে বাড়ালে মানুষ নিরুৎসাহিত হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা।

এএএম/এমআরএম/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।