ইনোভেশন শোকেসিং

নিজেদের উদ্ভাবনী দেখালো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ১৯ মে ২০২৪

বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রজেক্টে নিজেদের উদ্ভাবনী নানা প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে। এতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয় তারা। রোববার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে ইনোভেশন শোকেসিং-২০২৪ এর আয়োজন করে বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিদ্যুৎ বিভাগ।

ইনোভেশন শোকেসিংয়ে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্বানি লিমিটেড (ডেসকো) তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল টেস্ট ভ্যান প্রদর্শন করে। ডেসকোর এ ক্যাবল টেস্ট ভ্যান গত এক বছরে ১৩৫টির অধিক আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল ফল্ট সফলভাবে নির্ণয় ও মেরামত করে। ঢাকার মতো বড় বড় শহরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ক্যাবল ফল্টের পরিমাণ বেশি হয়। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্যাবল ফল্ট চিহ্নিতকরণে ভারী মেশিন সমূহ দ্রুততম সময়ে পৌঁছনোর ব্যবস্থা ছিল না।

ব্যয়বহুল মেশিন সমূহ পরিবহনের সময় মেশিনের ক্ষতিসাধন হত এবং ফল্ট মেরামতের সময় বেশি লাগত। এর প্রেক্ষিতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডেসকোর মিডিয়াম ভোল্টেজ সাবস্টেশন মেইনট্যানেন্স বিভাগ স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল টেস্ট ভ্যান নির্মাণ করে। এতে পূর্বের পদ্ধতিতে ক্যাবল ফল্ট নিরুপণে গড়ে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় হলেও বর্তমানে ক্যাবল টেস্ট ভ্যান ব্যবহার করে তা দুই ঘণ্টার কম সময়ে নিরুপণ করা সম্ভব হচ্ছে।

ডেসকোর এই হাই-ভোল্টেজ মেশিন, অ্যাক্সোসরিস এবং অন্যান্য কিটসহ দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল টেস্ট ভ্যান প্রস্তুত করতে ১ কোটি সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সম মানের আমদানিকরা ক্যাবল টেস্ট ভ্যানের মূল্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুতকরণ প্রজেক্ট এনেছে। এই প্রজেক্টের আওতায় মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় পশচনশীল বর্জ্য পৃথক বিনে সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত বর্জ্য সুষ্টু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুতকরণ প্ল্যান্টে স্থানান্তর করা হবে। এখান থেকে প্রস্তুত হওয়া জৈব সার সবুজায়নে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শরীফ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এই প্রজেক্টের অধীনে সবুজায়নের পাশাপাশি ল্যান্ড ফিলিং পানীয় বায়ু দূষণের বিরূপ প্রভাব প্রমোশনে এ আইডি অত্যন্ত কার্যকর। কারণ পচনশীল বর্জ্য থেকে ক্ষতিকারক মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। বজ্য থেকে উৎপন্ন মিথেন গ্যাসের গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল বা তাপ বৃদ্ধির ক্ষমতা কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ২৮ গুণ বেশি। এ উদ্যোগের ফলে বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতিকারক উপাদান নির্গমন করা থেকে রক্ষা করবে অর্থাৎ দূষণ কমাবে এবং সেই বর্জ্য রিসাইকেল, রিইউজের মাধ্যমে উৎপন্ন জৈব সার মাতারবাড়ি প্রকল্প এলাকায় সবুজায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

নিজেদের উদ্ভাবনী দেখালো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো

প্রদর্শনীতে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে স্পেয়ার পার্টস তৈরি করা প্রযুক্তি এনেছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী (কারখানা) আতিকুজ্জামান বলেন, থ্রিডি প্রিন্টিং হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি প্রযুক্তি। ফোর আইআর টেকনোলজির থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে যেকোনো পার্টসের হুবহু ত্রিমাত্রিক বস্তু প্রিন্ট করা যায়। কোনো পার্টস বা যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে ভেঙে গেলে, লাইফ সাইকেল শেষ হয়ে গেলে বা গঠন পরিবর্তন হয়ে গেলে আমরা সেটার মেজারমেন্ট নিয়ে কম্পিউটার অ্যাডেড ডিজাইন দিয়ে থ্রিডি ডিজিটাল অবজেক্ট তৈরি করি। আমরা শুরুতে কম্পিউটার অ্যাডেড ডিজাইন ফাইলকে স্টেরিও লিথোগ্রাফি ফরমেটে রুপান্তর করে থ্রিডি প্রিন্টারের উপযোগী জিওমেট্রিক্যাল কোড জেনারেট করি। প্রিন্টার অন করে নির্দিষ্ট টেম্পারেচারে ক্যালিব্রেশন করি। অবজেক্ট এর প্রোপার্টি অনুযায়ী ম্যাটেরিয়াল সিলেক্ট করে প্রিন্টারে ফিড দিলে দিলে প্রিন্টার তার নিজস্ব গতিতে এবং জি-কোড অনুযায়ী প্রিন্ট করতে থাকে।

তিনি বলেন, প্রিন্ট শেষে মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে যায় এবং বেড থেকে অবজেক্ট কালেক্ট করতে হয়। পূর্ব এপিএসসিএল এর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে কোনো যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে গেলে, ছিড়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সেটার মাপ সংবলিত স্যাম্পল নিয়ে পুরান ঢাকাতে গিয়ে সেই মালামাল সংগ্রহ করা হতো। মালামাল পাওয়া না গেলে যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের অর্ডার দিয়ে অন্য আরেক দিন সংগ্রহ করা হতো। ফলে প্ল্যান্টের ব্রেকডাউন মেইনটেন্যান্সের টাইম, কস্ট এবং ভিজিট (টিসিভি) বেড়ে যায়, যেটি প্ল্যান্টের অ্যাভেইলেবিলিটির ওপর প্রভাব ফেলত।

এছাড়া কিছু মালামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে বিদেশ থেকে মালামাল আনতে ৪৫ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। এই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় অনেক গ্রাহক বিদ্যুতহীন থাকে এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যহত হয়।

এই প্রকৌশলী বলেন, থ্রিডি প্রিন্টার দ্বারা আশুগঞ্জে বসে কম্পিউটারে ডিজাইন দিয়ে সেই মালামাল তৈরি করে অতি সহজে সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে। এর ফলে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে তেমনি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। বিগত চার মাস ধরে আমরা আমাদের প্ল্যান্টের বিভিন্ন পাম্প বা যন্ত্রাংশে থ্রিডি প্রিন্টেড স্পেয়ার পার্টস ব্যবহার করছি। এসব পার্টস আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টেও ব্যবহার করা যাবে। দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে এসব পার্টসের চাহিদা দিলে সহজেই কমসময়ে এবং নিখুঁতভাবে তাদের চাহিদা মোতাবেক মালামাল বানিয়ে দিতে পারবো।

এছাড়া ইনোভেশন শোকেসিংয়ে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানও অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলসিসহ মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়।

এনএস/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।