পিএসসি ভবনে সুনসান নীরবতা, কেউ যেন কাউকে চেনে না!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ১০ জুলাই ২০২৪
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়েছে পিএসসি/ ফাইল ছবি

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা। সাদা রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ভবনে প্রবেশ করেন এক গাড়িচালক। পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে নেমে আরেক চালককে সালাম দেন তিনি। কোনোমতে মাথা নেড়ে সালামের উত্তর দিয়ে দায় সারেন ওই গাড়িচালক।

প্রত্যাশিত প্রতিউত্তর না পেয়ে সালাম দেওয়া গাড়িচালক বলেন, ‘কী ব্যাপার ওস্তাদ! মনে হইতাছে আইজ চেনবারই পারতেছেন না!’ এরপর দুজনই উচ্চস্বরে হেসে যার যার কাজে চলে যান।

ঘটনাটি ভবনের বাইরের। সেখানে একজন আরেকজনের সঙ্গে ঠাট্টাচ্ছলে কথা বললেও পিএসসি ভবনের ভেতরের পরিবেশ একবারে ভিন্ন। সর্বত্র যেন সুনসান নীরবতা, গুরুগম্ভীর। অফিসের কাজের প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারও সঙ্গে তেমন কথা বলছেন না। দীর্ঘদিনের সহকর্মী হওয়া সত্ত্বেও যেন কেউ কাউকে চেনেন না!

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়া পিএসসি ভবনে সরেজমিনে দেখা গেছে এমন চিত্র। বুধবার (১০ জুলাই) সকালে পিএসসি ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তা প্রহরীরা চলমান ঘটনাগুলো নিয়ে কানাঘুষা করছেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে, অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে থাকা সোফায় কয়েকজন প্রার্থী বসে আছেন। মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) দিতে এসেছেন তারা।

অভ্যর্থনা থেকে অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে কয়েকটি দপ্তর ঘুরেও কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেননি এ প্রতিবেদক। চলমান ইস্যু ছাড়াও পিএসসিকেন্দ্রিক বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি তারা। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিলে আরও নিশ্চুপ থাকছেন কর্মকর্তারা। সাধারণ বিষয়ে তথ্য চাইলেও চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে আসতে অনুরোধ করছেন।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। এ ইস্যুতে তাদের নাম যাতে আবার সামনে না চলে আসে, সে ভয়-শঙ্কায় আছেন তার অনেক সহকর্মী। অনেকে আবার ঝামেলা- ঝঞ্ঝাটে জড়াতে চান না বলে চুপচাপ থাকছেন।

পরীক্ষা শাখার (নন-ক্যাডার) এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় ভবনের প্রবেশপথে। আগে থেকে প্রতিবেদকের সঙ্গে তার পরিচয় থাকলেও সালাম দিলে উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। একপর্যায়ে আলাপচারিতায় সাড়া দিলেও চোখেমুখে শঙ্কার ছাপ দেখা যায়। এমন ভারী পরিবেশ কেন? জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলে ওঠেন, ‘মশকরা করেন ভাই? কতকিছু ঘটে গেলো! তার আঁচ তো পিএসসিতেই পড়বেই।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য সময় সকালে অফিসে যখন আসি, তখন অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, কুশল বিনিময় হয়। গত দুদিন পরিস্থিতি ভিন্ন। কেউ কারও সঙ্গে সেভাবে কুশল বিনিময় বা আলাপচারিতায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আসলে পরিস্থিতি যেমন, সে অনুযায়ী এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।’

পিএসসির তথ্য ও প্রযুক্তি শাখার এক কর্মকর্তা নাম গোপন রেখে জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে যেসব বিষয় গণমাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়াতে আসছে; তা নিয়ে আমরা বিব্রত। অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ানো কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন। কিন্তু সম্মান তো সবারই যাচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনদের অনেকে ফোন করে ঠাট্টা করে বলছে, তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কোনো সমস্যা নেই তো? এগুলো আসলে অসহনীয়। আমরা চাই, ভালো একটি তদন্ত হোক। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হোক।’

সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় পিএসসি ভবনের ভেতরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা নিষেধ। তবে বুধবার (১০ জুলাই) বাইরে থেকে ছবি তুলতে গেলেও কয়েকজন কর্মচারী এসে নিষেধ করেন।

গতকাল মঙ্গলবার ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের ব্যানারে দুই শতাধিক চাকরিপ্রার্থী রেলওয়ের নিয়োগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে পিএসসির সামনে বিক্ষোভ করেন। তবে আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো বিক্ষোভ বা সমাবেশ চোখে পড়েনি।

জানা গেছে, গত ৫ জুলাই পিএসসির অধীনে রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ৭ জুলাই রাতে বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। পরদিন প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসির ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

তাদের নামে পিএসসি আইনে পল্টন থানায় মামলা হয়। এরপর তাদেরকে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করে পিএসসি। যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন- পিএসসির উপ-পরিচালক আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম।

এএএইচ/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।