চাই ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটময় মুহূর্তে মাদক, সন্ত্রাসী-দস্যুপনা ও জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধিরোধে কঠোর থেকে কঠোরতর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তার এই আহ্বান সময়োচিত এবং বাস্তবানুগ। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ, চলমান করোনা পরিস্থিতি ও পবিত্র মাহে রমজানে র্যাবের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থাদি নিয়ে সাংবাদিকবৃন্দের সঙ্গে অনলাইনে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
র্যাব সদর দফতর থেকে অনলাইনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে নবনিযুক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘র্যাব করোনার মুহূর্তে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করছে। এরপরও সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন নিয়ম ভেঙে অলিতে-গলিতে জমায়েত হচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছেন। আড্ডা সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আমরা যেখানেই তথ্য পাব- সন্ধ্যার পর কোথাও আড্ডা, জমায়েত হলে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা না হলে, সেখানেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। টহল দেবে র্যাব।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে র্যাবের পেট্রলিং আরও বাড়ানো হবে। কোথায় আড্ডাবাজি হচ্ছে আমাদেরকে জানান, দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার র্যাব ব্যাটালিয়নের টহল পার্টি।’
নতুন র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাসী যত অবৈধ কার্যক্রম রয়েছে তাদের দায়িত্বের সঙ্গে নজরদারি করছে র্যাব। ইতোমধ্যে ৩২ জন জঙ্গি, এক হাজার ৮২ জন সাধারণ অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু মাদকের চালান এই করোনার প্রাদুর্ভাবের মুহূর্তেও আটক করেছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনার দুর্যোগ মুহূর্তে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করছে র্যাব। সবজিবাহী যানবাহন আসছে, র্যাব সেখানে সহযোগিতা করছে। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সবজির গাড়িতে মাদক আসছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরে আটক করছে। আমাদের গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। সর্বস্তরের জনগণকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আপনাদের কাছে যদি মাদক সরবরাহের কোনো তথ্য থাকে তাহলে র্যাবকে জানান, দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে করোনাকালেও থেমে নেই মাদকের বিস্তার। শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও অমিত সম্ভাবনা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি। বেকারত্বও মাদকের বিস্তারে সহায়ক- এমন কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। এই মরণনেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা। এই অবস্থা চলতে থাকলে একটি সমাজের অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাট মাদক কারবারী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তিবর্গ এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি।
মাদকের সর্বনাশা দিক নিয়ে আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে অনেকবারই লিখেছি। কিন্তু অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে।
এইচআর/বিএ/পিআর