উদ্বেগজনক : পদক্ষেপ নেয়া জরুরি

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৯:০৮ এএম, ১৬ মে ২০২০

 

এটি খুবই উদ্বেগজনক খবর যে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আগামী দুই বছরে অন্তত ৪০ লাখ মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে পড়বে। এর পেছনে স্কুল বন্ধ থাকা, দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়াসহ করোনা সম্পর্কিত নানা কারণ জড়িত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের বাল্যবিয়ে বিশেষজ্ঞ এরিকা হল বলেন, ‘যখন সহিংসতা, দুর্যোগ বা মহামারির মতো কোনো সংকট তৈরি হয় তখন বাল্যবিয়ের হার বেড়ে যায়। আমরা যদি এখনই এটি বন্ধের বিষয়ে ভাবতে শুরু না করি তবে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। আমরা স্বাস্থ্য সংকট কেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারি না।’

সংস্থাটি জানিয়েছে, বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া। তাছাড়া লকডাউনের কারণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে রোধের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। মহামারির কারণে মেয়েদের কাছে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোতেও বিঘ্ন ঘটছে। এতে অনেক তরুণীরই অসময়ে গর্ভধারণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর অন্তত এক কোটি ২০ লাখ মেয়ে শিশু ১৮ বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ প্রতি তিন সেকেন্ডে একটি মেয়ে শিশুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনা মহামারির কারণে আগামী এক দশকে আরও এক কোটি ৩০ লাখ শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হবে।

এরিকা হল জানান, তারা দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান ও ভারতে অকল্পনীয় হারে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন।

বাল্যবিয়ে রোধে ১৪০০ সংস্থার জোট ‘গার্লস নট ব্রাইডস’ এর প্রধান নির্বাহী ফেইথ মোয়াঙ্গি-পওয়েল জানান, এর পেছনে বড় কারণ স্কুল বন্ধ থাকা। তিনি বলেন, স্কুল মেয়েদের সুরক্ষা দেয়। যখন স্কুল বন্ধ হয়ে যায় তখন বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফেইথের মতে, করোনা মহামারি শেষ হলেও অনেক মেয়েশিশু স্কুলে আর না-ও ফিরতে পারে। এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

বাংলাদেশেও সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগের পরও বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না। গণমাধ্যমে প্রায়ই বাল্যবিয়ের খবর আসে। এরসঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জেল-জরিমানারও বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাল্যবিয়ে থেমে নেই। বাল্যবিয়ে সমাজের জন্য অভিশাপ। কাজেই যেকোনো মূল্যে এটা বন্ধ করতে হবে।

আইন অনুযায়ী পুরুষের বিয়ের বয়স ২১ বছর, নারীর ১৮ বছর। ব্যতিক্রম হলে বিয়ের সঙ্গে জড়িত বর-কনের অভিভাবক, আত্মীয়, স্থানীয় কাজিসহ সবার শাস্তির বিধান রয়েছে।

কন্যাশিশুরাই বাল্যবিয়ের শিকার হয় বেশি। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, যৌন হয়রানি ও কন্যাশিশুর প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে কন্যাশিশুদের বিয়ে হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি ভুয়া জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স বাড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। দেখা যায়, সন্তান জন্ম দেয়া ও লালন-পালন করা অল্প বয়সী মায়েদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ছে।

নানা ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে- এমন স্বপ্ন দেখছি আমরা। কিন্তু বাল্যবিয়ে এর মধ্যে বিরাট এক বাধা। এ সমস্যা সমাধানে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে সবচেয়ে বেশি। বিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল-এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া আর্থ সামাজিক নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ জন্য বাল্যবিয়ে বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও মানসিকতার পরিবর্তনও অত্যন্ত জরুরি।

এইচআর/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।