‘এই ছাত্রলীগ চাই না’

প্রভাষ আমিন
প্রভাষ আমিন প্রভাষ আমিন , হেড অব নিউজ, এটিএননিউজ
প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

‘এই ছাত্রলীগ চাই না’- এই চাওয়াটা আমার নয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। ওবায়দুল কাদেরকে আমার কাছে আওয়ামী পরিবারের বিবেকের মত মনে হয়। আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নানা অপকর্ম, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ ওবায়দুল কাদের। এমনিতে আওয়ামী লীগের একটা বড় সমস্যা হলো কিছু হলেই তা অস্বীকার করা। কিন্তু ওবায়দুল কাদের কিছু লুকানও না, অস্বীকারও করেন না।

তিনি খোলামেলা দলের সমালোচনা করেন। আমরা অনেক সময় দূর থেকে সমালোচনা করি। তাতে কখনো কখনো তথ্য বিভ্রান্তি থাকে, কখনো কখনো বিদ্বেষও থাকে। কিন্তু ওবায়দুল কাদের যেহেতু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাই আওয়ামী পরিবারের ভেতরটা সবচেয়ে ভালো জানেন তিনি, তাই তার সমালোচনা হয় তথ্যভিত্তিক ও গঠনমূলক।

আগামীকাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন হচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছে। গত শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল ছাত্রলীগের মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার যৌথ সম্মেলন। সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় বেলা সোয়া ১১টায়। জুমার নামাজের আগেই সম্মেলন শেষ করার কথা থাকলেও শুরুতেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দেন। যে কারণে ওবায়দুল কাদের ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের কেউ বক্তব্য দিতে পারেননি।

সম্মেলন মঞ্চেও ছিল প্রায় ছোটখাটো জনসভা। সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা। নেতাদের আচরণ, অনুষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা দেখে বিরক্ত ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটাই কি ছাত্রলীগ? কোনো শৃঙ্খলা নেই। লেখক (ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য), জয় (ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান)—এটাই কি ছাত্রলীগ? পোস্টার নামাতে বললাম। তারপরও নামায় না। সব নেতা (ছাত্রলীগে)? কর্মী কোথায়? এত নেতা স্টেজে, কর্মী কোথায়? এই ছাত্রলীগ চাই না।’

দেড় ঘণ্টা বসে থেকেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ না পাওয়া প্রসঙ্গেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। ‘আপনারা (ছাত্রলীগের নেতারা) মাইক ধরলে ছাড়েন না। আজ জুমার দিন খেয়াল থাকে না। এই ছাত্রলীগ আমরা চাই না। সুশৃঙ্খল করুন। সুসংগঠিত করুন। কথা শুনবে না, এই ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নাই। অপকর্ম করবে, এই ছাত্রলীগ দরকার নেই। দুর্নামের ধারা থেকে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’

ওবায়দুল কাদের এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। ১৯৭৫ সালের পর চরম দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে ধাপে ধাপে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তাই ছাত্রলীগের যে কোনো বিচ্যুতি নিশ্চয়ই তাকে পোড়ায়। তাই চোখের সামনে কোনো বিশৃঙ্খলা তাকে ক্ষুব্ধ করে। কিন্তু চোখের আড়ালের ঘটনাগুলোও নিশ্চয়ই তিনি জানেন।

আগামীকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে নিশ্চয়ই নতুন নেতৃত্ব আসবে। বর্তমানে সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়া আল নাহিয়ান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য অবশ্য সম্মেলনে নির্বাচিত হননি। ২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন। সে বছরের জুলাইয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। কিন্তু চাঁদাবাজির অভিযোগে তারা দায়িত্ব হারালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় জয় ও লেখককে।

২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জয় ও লেখককে ‘ভারমুক্ত’ করা হয়। ছাত্রলগের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কমতি নেই। কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের ভেতর থেকেই।জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে গত কয়েকদিনে ছাত্রলীগে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নতুন কমিটিতে নেতৃত্বে আসার জন্য তদ্বির, দৌড়ঝাঁপ তো আছেই, গত কয়েকদিনে নাকি মুড়ি-মুড়কির মত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আর সহ-সম্পাদক বিলানো হচ্ছে।

ছাত্রলীগ মহলেই কৌতুক- বর্তমানে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কয়জন, এটা নাকি সভাপতিও জানেন না। কৌতুক আকারে প্রচারিত হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবতা এমনই। কীদের বিনিময়ে জানি না, কিন্তু বিদায় বেলায় জয়-লেখক উদার হাতে নেতৃত্ব বিলাচ্ছেন। নতুন নেতারা কেউ ৭ দিন, কেউ ১০ দিন, কেউ হয়তো ২ দিনের জন্য দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাবেন। যত হাসাহাসিই হোক, ছাত্রলীগের ‘সাবেক সহ-সভাপতি’ এটাও কিন্তু বড় পদ। ভবিষ্যৎ রাজনীতি তো বটেই, সমাজে নানা সুযোগ-সুবিধা, ধান্ধাবাজি, চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রেও এই পদবীর গুরুত্ব কম নয়।

ছাত্রলীগের মহানগর শাখার সম্মেলনের বিশৃঙ্খলা দেখেই ওবায়দুল কাদের বলে দিয়েছেন, এই ছাত্রলীগ তিনি চান না। কিন্তু সারাদেশে ছাত্রলীগ যা করে, তার ফিরিস্তি জানলে কী করবেন? ওবায়দুল কাদের নিশ্চয়ই জানেন। তিনি যে সংগঠনের সভাপতি ছিলেন, সে সংগঠনের নামে গুগলে সার্চ করলে এখন আর ভালো কিছু আসে না। দল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ছাত্রলীগের অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

শুধু ক্ষুব্ধ হয়ে, ‘এই ছাত্রলীগ চাই না’ বললেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। ‘দুর্নামের ধারা থেকে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে’ এটুকু বললেও হবে না। ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রলীগে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে, ছাত্রলীগের নামে কেউ যাতে অপকর্ম করতে না পারে; সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রয়োজনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মুখের কথায় আর কাজ হবে না। আগামীকালের সম্মেলনে যে নতুন কমিটি আসবে, তাদের মাধ্যমেই ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ‘এই ছাত্রলীগ চাই না’ বলা সহজ; ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনা কিন্তু সহজ নয়।

লেখক: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ।

এইচআর/জেআইএম

ছাত্রলীগের মহানগর শাখার সম্মেলনের বিশৃঙ্খলা দেখেই ওবায়দুল কাদের বলে দিয়েছেন, এই ছাত্রলীগ তিনি চান না। কিন্তু সারাদেশে ছাত্রলীগ যা করে, তার ফিরিস্তি জানলে কী করবেন? ওবায়দুল কাদের নিশ্চয়ই জানেন। তিনি যে সংগঠনের সভাপতি ছিলেন, সে সংগঠনের নামে গুগলে সার্চ করলে এখন আর ভালো কিছু আসে না। দল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ছাত্রলীগের অনেকেই আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন। ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। শুধু ক্ষুব্ধ হয়ে, ‘এই ছাত্রলীগ চাই না’ বললেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।