মাহে রমজান

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে রোজা

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১২:৪৪ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৩

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস এবং পবিত্র রমজান মাসের ৩য় দিনের রোজা রাখার সৌভাগ্য আমরা লাভ করছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজান সিয়াম সাধনার মাস, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে একান্ত করে পাবার মাস এবং সকল পাপ ক্ষমার মাস। এই বরকত ও আশিষ মণ্ডিত মাসকে লাভ করার জন্য প্রতিটি মুমিন মুত্তাকী বান্দারা অধির আগ্রহে অপেক্ষামান থাকেন। পবিত্র এ মাসকে তিন দশকে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের আর তৃতীয় দশক হলো নাজাতের। পবিত্র রমজানের প্রথম দশক অর্থাৎ রহমতের দশক।

প্রথম এই দশকে আমাদের সবার মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এ কামনাই হওয়া উচিত, তাঁর কাছ থেকে যেন আমরা বেশি বেশি রহমত লাভ করতে পারি এবং তাঁর রহমতের চাদরে যেন আমাদেরকে আবৃত করে রাখেন। পবিত্র এ রমজানে মুমিন মুত্তাকীদের আধ্যাত্মিক বাগানে ঘটবে নববসন্তের সমারোহ। আর স্বর্গীয় আনন্দে মুমিন মুত্তাকীদের হৃদয় ভুবন আলোকিত হয়ে উঠবে। আল্লাহপাকের পবিত্র বান্দারা জানে যে, এই রহমতের দশকে আল্লাহতায়ালার রহমতের বৃষ্টির পানি দ্বারা তাদেরকে সিক্ত করবেন এবং তাদের তৃষ্ণা মেটাবেন। আর এ কারণেই আল্লাহপাকের নেক বান্দারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত থেকে কখনো নিরাশ হোন না এবং সামান্য অজুহাত দেখিয়ে রোজা পরিত্যাগ করেন না।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘হে যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের জন্য সেভাবে রোজা রাখা বিধিবদ্ধ করা হলো, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।

পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তাহলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে রোজা অর্থাৎ উপবাসব্রত পালন করা কোনো না কোনো আকারে সকল ধর্মেই ছিল, আছে এবং দেখতে পাওয়া যায়। অধিকাংশ ধর্মগুলোতে এবং নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণির কৃষ্টির মধ্যে, উপবাসব্রত একটি সাধারণভাবে নির্দেশিত ব্যাপার। আর যেখানে এই ধরনের নির্দেশ নেই, সেখানেও প্রাকৃতিক প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই উপবাস করে থাকেন। সাধুপুরুষ ও দিব্যজ্ঞানীগণের অভিজ্ঞতা থেকে যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মনের পবিত্রতা সাধনের জন্য শারীরিক সম্পর্কসমূহ কিছুটা ছিন্ন করা এবং সাংসারিক বন্ধন থেকে কিছুটা মুক্তিলাভ করা একান্তই প্রয়োজন। তবে ইসলাম এই উপবাস ব্রতের মধ্যে নবরূপ, নব অর্থ ও নবতম আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আরোপ করেছে।

পবিত্র মাহে রমজানের এই রোজাকে অর্থাৎ উপবাস পালনকে ইসলাম পূর্ণমাত্রার আত্মোৎসর্গ মনে করে থাকে। যিনি রোজা পালন করেন, তিনি যে কেবল শরীর রক্ষাকারী খাদ্য পানীয় থেকেই বিরত থাকেন তা নয় বরং তিনি সন্তানাদি জন্মদান তথা বংশবৃদ্ধির ক্রিয়াকলাপ থেকেও দূরে থাকেন এবং সমস্ত পাপ কাজ থেকেও বিরত থাকেন। তাই যিনি রোজা রাখেন, তিনি তার অসাধরাণ আত্মত্যাগের এবং তার প্রস্তুতির কথা আল্লাহপাককে জানিয়ে দেন আর তার হৃদয় এই ঘোষণাও দেয় যে, আমি কেবল মাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখছি। এছাড়া তার হৃদয় এটাও বলে যে, যেহেতু আমি আল্লাহর জন্য রোজা রাখছি এবং সকল প্রকারের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অঙ্গিকার করছি তাই প্রয়োজন বোধে আমি আমার প্রভু ও সৃষ্টিকর্তার খাতিরে আমার সবকিছু, এমনকি আমার জীবন পর্যন্ত কোরবানি করে দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হবো না।

পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত বন্দেগীর বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কিভাবে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়। ইসলামে রোজার মাহাত্ম্য অতি ব্যাপক। এই মাহাত্ম্য ও মর্যাদাকে বুঝাতে গিয়ে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ মস্তফা (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট দরজা থাকে আর ইবাদতের দরজা হচ্ছে রোজা’ (জামেউস সগীর)।

তিনি (সা.) আরো বলেছেন, ‘রোজা ঢাল স্বরূপ এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নিরাপদ দূর্গ’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)। যদিও আমরা সবাই জানি যে, পবিত্র রমজান বড়ই কল্যাণমণ্ডিত মাস, দোয়ার মাস। তারপরেও আমরা অনেকেই এই মাসের ইবাদত বন্দেগি থেকে গাফেল থাকি। অন্যান্য মাসের মতই এই পবিত্র মাসটিকে হেলায় কাটিয়ে দেই। আমরা যারা পবিত্র এই মাসটিকে লাভ করার তৌফিক পেয়েছি, নিশ্চয় তারা সৌভাগ্যবান। অনেকেই হয়তো আশায় ছিল কিন্তু লাভ করতে পারেননি, না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তাই আমাদেরকে এ মাসের পুরো ফায়দা অর্জন করতে হবে।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝে রমজান থেকে কল্যাণ মণ্ডিত হওয়া। আমরা যদি হজরত রসুল করিম (সা.)এর জীবনে রমজানের দিনগুলোর দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাই তিনি (সা.) রমজানে কত বেশি নফল ইবাদত আর দান খয়রাত করতেন। অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে মহানবী (সা.)এর ইবাদত আর দান খয়রাতে আরো বেশি গতি লাভ করতো আর পবিত্র মাহে রমজানের রাতগুলো মহানবী (সা.) অনেক বেশি ইবাদত বন্দেগিতে কাটাতেন। মহানবী (সা.)এর নফল নামায আর দোয়ার আহাজারিতে জেগে থাকতো নিঝুম রাতগুলো। এছাড়া এ মাসে তিনি (সা.) কুরআন শিক্ষা, শিখানো ও শোনার প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন।

আমাদের সবার উচিত হবে, রহমতের দশক থেকে পুরোপুরি ফায়দা হাসিল করা, রমজানের কল্যাণরাজী দ্বারা নিজেদের সুশোভিত করা, যেন এ রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠে আমাদের চার পাশ। যেন কোরআনের আলোয় আলোকিত হয় সমগ্র বিশ্ব। এছাড়া তারাবি, তাহাজ্জুদ প্রভৃতি নফল নামাজ আর দোয়ার মাধ্যমে জাগিয়ে রাখি আমাদের রাতগুলো আর দিনগুলোও যেন কাটাই আল্লাহর স্মরণে।

আল্লাহপাকের সাথে যেন আমাদের বিশেষ এক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায় এই রহমতের দশক থেকেই আর পরবতীর্তে যেন আমাদের জীবনে লাভ হয় সেই সৌভাগ্যমণ্ডিত রজনীর। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে রমজানের প্রতিটি দিনকে সাজাতে হবে পবিত্র সব কর্মদ্বারা।

মহান আল্লাহ পাকের দরবারে এই মিনতি করি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে পবিত্র এই রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করো না। হে রাব্বুল আলামিন! পুরো রমজান যেন সুস্থতার সাথে তোমার ইবাদত, তোমার অধিকার এবং তোমার বান্দার অধিকার যেন আদায় করতে পারি।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।