গণস্বাস্থ্যের করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ব্যবহারে বাধা কোথায়?
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সঠিক সময়ে রোগ শনাক্তকরণ মহামারির এই সময়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এটি কেবল রোগের চিকিৎসার জন্যই দরকারি নয়, এ রোগের বিস্তার কমানোর জন্য এবং আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাবার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
এ রোগের শনাক্তকরণের ব্যাপারটি সারা বিশ্বব্যাপী একটি চ্যালেঞ্জ। ভাইরাসটি শনাক্তকরণের সর্বস্বীকৃত পরীক্ষা হলো খোদ ভাইরাসের জেনোম বা আরএনএ পরীক্ষা করা, যার নাম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন-পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন টেস্ট (আরটি-পিসিআর পরীক্ষা)। এ পরীক্ষায় রোগীর নাক বা গলবিল (pharynx) থেকে নমুনা নিয়ে সরাসরি করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়।
এখন পর্যন্ত এ পরীক্ষাটি সর্বোত্তম। তবে এটি একটি সময়সাপেক্ষ, জটিল এবং ব্যয়বহুল পরীক্ষা। এটির পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ দামি যন্ত্রপাতি বা দক্ষ জনবল দরকার তা আমাদের বাংলাদেশে নেই। আর তাই আমাদের দরকার অল্প খরচের একটি পরীক্ষা, যা স্বল্প সময়ে এবং সহজভাবে করা যায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এ ধরনের একটি পরীক্ষাই আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে।
আমাদের শরীরে কোনো ভাইরাস প্রবেশ করলে সেটির দেহ প্রাচীরে যে প্রোটিন বা অ্যান্টিজেন থাকে, তাকে প্রতিহত করতে আমাদের দেহ প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি প্রোটিন বা অ্যান্টিবডি (আইজিজি এবং আইজিএম) তৈরি করে, যা ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করে।
এই অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে রক্তের নমুনায় আইজিজি অ্যান্টিবডির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। আঙুলের ডগায় সুঁচ ফুটিয়েই ওই পরীক্ষা করা সম্ভব। কোনো রোগী যিনি আগে পরীক্ষা করাতে পারেননি, বা যিনি নিজেই সেরে উঠেছেন, অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিতকরণ সম্ভব। এর মাধ্যমে আমাদের হাতে তথ্য আসবে যে জনসংখ্যার কতজন আদতে সংক্রমিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন।
যদি এই রোগের জন্য আমরা কোনো ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করে এটা পজিটিভ পাই তাহলে সে ব্যক্তি ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধরে নেয়া হবে। এভাবেই আরও অনেক রোগের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
তবে একটা ব্যাপার আছে এখানে। এ পরীক্ষার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক সময় এই ফল মিথ্যা ইতিবাচক বা মিথ্যা নেতিবাচক হতে পারে। অর্থাৎ এ পরীক্ষা যার শরীরে করোনার জীবাণু নেই কিন্তু তাকে পজিটিভ দেখাতে পারে। আবার শরীরে করোনার জীবাণু আছে কিন্তু তাকে নেগেটিভ দেখাতে পারে।
এ পরীক্ষা পদ্ধতি নতুন নয়। পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই সাবধানতা অবলম্বন করে এই পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব নীতিমালায় এ পরীক্ষার অনুমোদন দিয়ে থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এ পরীক্ষার জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি পরীক্ষাকে অনুমোদন দিয়েছে এবং কয়েকটিকে দেয়নি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের অনুমোদন ছাড়াই এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিট বাজারজাত করেছে। এফডিএ তাদের ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে। এ মহামারির কথা মাথায় রেখে এফডিএ দ্রুত দু’স্তরের বৈধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব পরীক্ষার অনুমোদন দিচ্ছে, যার একটি হতে হবে স্বশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠান। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার জনস্বাস্থ্যের জন্য।
বাংলাদেশে বিএমআরসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের পরীক্ষার দ্রুত বৈধকরণ প্রক্রিয়াটি করে থাকে। তাদের একজন কর্তাব্যক্তির সাথে আলোচনা করে জেনেছি যে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ কিটটির বৈধকরণ প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি। তারা বলছেন, কোনো স্বশাসিত বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রতিষ্ঠান এ পরীক্ষার বৈধকরণে যুক্ত হননি।
যদিও এ পরীক্ষাটির সীমাবদ্ধতা আছে। তবু সহজলভ্যতা, খরচ এবং রোগ সংক্রমণের পদক্ষেপের কথা চিন্তা করে এ ধরনের পরীক্ষা বৈধ করা দরকার। আমরা আশা করবো, দ্রুত উপযুক্ত বৈধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ পরীক্ষা কিটটি সবার ব্যবহারের জন্য উপযোগী হবে শিগগির।
এইচএ/এমআরএম