স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু

মানিক লাল ঘোষ
মানিক লাল ঘোষ মানিক লাল ঘোষ
প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৩

বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ সাধারণ জনগণের কাছে ছিল কল্পনাতীত, স্বাধীনতার স্বাদ বাঙালির কাছে ছিল অপূর্ণ। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পরিপূর্ণতার স্বাদ পায় দেশবাসী।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতি দখলদার পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও স্বাধীনতার নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনও পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুবিহীন স্বাধীন বাংলাদেশের চারপাশে যেনো অপূর্ণতার ছাপ। সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো আত্মতৃপ্তি ছিল না। ছিল না কারও মুখে হাসি। এমনকি বঙ্গবন্ধুবিহীন সদ্য স্বাধীন দেশে ফিরতে চায়নি বন্ধুপ্রতীম ভারতে আশ্রয়রত বাংলাদেশের শরণার্থীরাও।

স্বাধীন দেশে ওই সময় আরেকটি সংগ্রাম শুরু হয়, বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। সবার ভাবনায় ছিল বঙ্গবন্ধু আদৌ বেঁচে আছেন কি না কিংবা পাকিস্তান সরকার তাকে ফিরিয়ে দেবে কি না- সেসব নিয়ে চলে নানান জল্পনা-কল্পনা।

স্বাধীনতার ২৩ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।

১০ জানুয়ারি ছিল বাঙালির কাছে বহু কাঙ্ক্ষিত, বহু প্রতীক্ষিত। যাঁকে কেন্দ্র করে আর যাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, সেই মহান নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে নতুন করে উজ্জীবিত হয় জাতি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ইতিহাসবিদ, প্রত্যক্ষদর্শী ও রাজনীতিবিদদের সাক্ষাৎকার, তাদের বক্তব্য ও লেখনিতে ঐতিহাসিক সত্য উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে জীবিত অবস্থায় ফিরে না এলে কি দুর্গতি নেমে আসতো আবার বাঙালির জীবনে!

মূলত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফিরে আসার কারণেই তাঁর সাহসী কূটনৈতিক তৎপরতায়, বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতের মিত্রবাহিনীকে দ্রুত তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। স্বাধীন দেশ হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি মিলেছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ সম্ভব হয়েছে দ্রুতগতিতে।

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ওই সময়ে খুবই জরুরি হয়ে পড়েছিল। মূলত জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসের একটি অনন্য মাইলফলক। এদিন পূর্ণতা পায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৫১ বছর পূর্তিতে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক তাঁর কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে- সব শূন্যতা পূর্ণতা পাক তাঁর মানবিক ভিশনারি নেতৃত্বের জাদুর পরশে, যাঁর মাঝে বাঙালি খুঁজে পায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি।

লেখক: ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য।

এইচআর/ফারুক/জিকেএস

মূলত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফিরে আসার কারণেই তাঁর সাহসী কূটনৈতিক তৎপরতায়, বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতের মিত্রবাহিনীকে দ্রুত তাদের দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। স্বাধীন দেশ হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি মিলেছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ সম্ভব হয়েছে দ্রুতগতিতে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।