বাংলাবান্ধা

প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাক চতুর্দেশীয় স্থলবন্দরটি

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১১:২৯ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

২০১৬ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্চগড়বাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালে স্থলবন্দরটিতে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর পর ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াত করতো। দু’বছর প্রাণচাঞ্চল্য ছিল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটিতে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ৩০ মার্চ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে টুরিস্ট ভিসায় আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এ রুট ব্যবহারকারী পর্যটক, রোগী ও ব্যবসায়ীরা। গত বছরের ৭ এপ্রিলে ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে অজ্ঞাত কারণে ভ্রমণ ভিসা দেয়া হচ্ছে না। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ।

পঞ্চগড় জেলার মিসেস হালিমা চৌধুরী, তিনি ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে পাঞ্জাব যাবেন। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় তিনি ঢাকায় এসে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে শিলিগুড়ি পৌঁছলেন। যেখানে তিনি পঞ্চগড় থেকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে দুই ঘন্টার মধ্যে শিলিগুড়ি পৌঁছতে পারতেন সেখানে তার সময় আর অর্থ দু’টোই অনেক বেশি লাগলো। সময় আর অর্থের পাশাপাশি ভোগান্তি তো আছেই।

পঞ্চগড়ের আলহাজ মাওলানা সালেহ আহমদ বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালুর পর শিলিগুড়ি দিয়ে আমি ভারত ভ্রমণ করে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছি কিন্তু এবার লালমনিরহাটের বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে যাতায়াত করে আমার খুবই কষ্ট হয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি বন্ধ থাকার বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয় পঞ্চগড়ের প্রবীণ সাংবাদিক শহীদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছি, আমি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাই বুড়িমারি হয়ে। সেখানে সহজে ইমিগ্রেশন শেষ হলেও ভারতের চেংরাবান্ধায় লেগেছে পাঁচ ঘন্টা। এই পাঁচ ঘন্টা আমাকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। যা ছিল খুবই বিরক্তিকর। এতে করে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লেগেছে।

বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালুর দাবি নিয়ে চেম্বারের নেতৃত্বে পঞ্চগড়ে মানবন্ধন হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রী নেই বললেও চলে। উভয় দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে দেখা যায়নি। ব্যাবসায়িক এবং বিশেষ কোনো ভিসা ছাড়া এ চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা ভারত যাতায়াত করতে পারছেন না। এ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট যেন স্থবির হয়ে আছে। কেন বন্ধ কেউ তা বলতে পারছে না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সম্প্রতি বাংলাবান্ধায় ও ঠাকুরগাঁও সফরকালে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, শিগগিরই বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালু হবে। কিন্তু চালুর কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা মিলন আমাকে বলেন, ‘বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনে খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু ভারতীয় ভিসায় এ চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের অনেককে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা রুট দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সময়ও বেশি লাগছে।’

বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ইমিগ্রেশন) মো. নজরুল ইসলাম আমাকে বলেন, এখন ট্যুরিস্ট ভিসা বা মেডিকেল ভিসা চালু থাকলেও এ রুট দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য আমাদের এ রুট দিয়ে ভারত যাতায়াতকারীদের সংখ্যা বেশ কমে গেছে।

বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় প্রাণচাঞ্চল্য নেই দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে। আগে যেখানে উভয় দেশের মানুষদের পারাপারে সরগরম হয়ে থাকতো। এখন নিস্প্রাণ পড়ে রয়েছে এ ইমিগ্রেশনটি। ভারতের দার্জিলিং, কাঞ্চনজঙ্ঘা, গ্যাংটক, ডুয়ার্স, গ্যাংটক, ডুয়ার্সসহ নেপাল, ভুটানের বহু পর্যটক ব্যবহার করতেন এ বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট।

বর্তমানে এ রুট বন্ধ থাকায় ভারত-নেপাল-ভুটান থেকে আসা পর্যটক যেমন কমে গেছে, তেমনি বাংলাদেশি পর্যটকরা যেতে পারছেন না। অনেকে বাধ্য হয়েই ভিন্ন রুট হিসেবে হিলি, বুড়িমারি কিংবা বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন। এতে তাদের প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে।

জনসাধারণের কষ্ট লাঘবে বিবিধ সেবামূলক কার্যক্রম এবং যোগাযোগ সহজ করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার সড়ক, সেতু বা বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে বহু প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। বড় বড় প্রকল্প ইতিমধ্যে সরকার বাস্তবায়ন করছে। দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে, মেট্রোরেল চলছে, মেট্রোরেলের পর পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। দেশের প্রথম পাতাল রেল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের এসব উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের কথা শুনে মানুষও আশায় বুক বাঁধে। বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালুর পর যেমনটি আশায় বুক বেঁধেছিলেন পঞ্চগড়ের হাজারো মানুষ। আমরা চাই দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দরটি যেন আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় আর পঞ্চগড় জেলার সাধারণ মানুষদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূর্ণ হয়।

দীর্ঘ ৫৭ বছর প্রতীক্ষার পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও চিলাহাটি স্টেশনে যাত্রী উঠা-নামার ব্যবস্থা না থাকায় আশপাশের এলাকার মানুষের কোন লাভ হচ্ছেনা বলেই তারা মনে করছেন। এছাড়া উত্তরবঙ্গের যাত্রী যারা ঢাকায় এসে মিতালী এক্সপ্রেসে করে শিলিগুড়ি যেতে চান তাদের অর্থ এবং সময় দু’টোই নষ্ট হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মিতালী এক্সপ্রেস শিলিগুড়ি যাতায়াত করে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছেড়ে আসে ভারতীয় সময় দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে। আর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

চার শতাধিক আসনের ট্রেনে যাত্রী খুবই কম পাওয়া যায়। এমনকি কখনও পত্রিকার পাতায় এমন শিরোনামও প্রকাশ হয়েছে ‘১২ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় পৌঁছালো ‘মিতালী এক্সপ্রেস’। চিলাহাটিতে যদি ইমিগ্রেশনে ব্যবস্থা করা হয় তাহলে পঞ্চগড়সহ আশপাশের অন্যান্য জেলার যাত্রিরাও এট্রেনে সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং যাত্রী সংখ্যা অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশনসহ যাত্রী উঠা-নামার দাবি করছেন।

তাই সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দ্রুত চালুর পাশাপাশি চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টও চালু করা যায় কিনা এবিষয়েও আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]

এইচআর/জিকেএস

দেশের এসব উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের কথা শুনে মানুষও আশায় বুক বাঁধে। বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালুর পর যেমনটি আশায় বুক বেঁধেছিলেন পঞ্চগড়ের হাজারো মানুষ। আমরা চাই দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দরটি যেন আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায় আর পঞ্চগড় জেলার সাধারণ মানুষদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূর্ণ হয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।