কাঠামো গড়ে তুলছেন নারীরা, অথচ গুঁড়িয়ে যাচ্ছে তাদের প্রাপ্য
ঢাকার মেরুল বাড্ডার একটি সড়কে নির্মাণকাজে ব্যস্ত একদল শ্রমিক। চোখে পড়ার মতো বিষয় হলো পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। ছবি: মাহবুব আলম
-
কেউ ইট বহন করছেন, কেউ মিক্সারে মাটি ঢালছেন, কেউ বা পাথর ভাঙছেন।
-
প্রচণ্ড রোদে ঘাম ঝরিয়ে নির্মাণের মতো কঠিন ও শারীরিকভাবে পরিশ্রমী কাজে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিনের পর দিন কাজ করছেন এই নারীরা। এখানেই থেমে নেই গল্প। নির্মাণকাজের এই দৃশ্যের আড়ালে রয়েছে এক নির্মম বৈষম্য।
-
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা একজন মহাজনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অকপটে জানান,‘এখানে নারী শ্রমিক বেশি, কারণ তারা কম পারিশ্রমিকে কাজ বেশি করে। তার কথাতেই উঠে এলো বাস্তবতা। একজন পুরুষ শ্রমিক সারাদিন কাজের পর পান ৭০০ টাকা, আর একজন নারী শ্রমিককে দেওয়া হয় ৬০০ টাকা।
-
পুরুষ ও নারী উভয়ের কাজের ধরন প্রায় একই। কিন্তু নারী হওয়ার কারণে তারা মজুরির দিক থেকে ১০০ টাকা কম পাচ্ছেন। এটা শুধুই মেরুল বাড্ডার চিত্র নয়, সারা দেশেই খেটে খাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে একই ধরনের বৈষম্য দীর্ঘদিন ধরে চলমান।
-
অনেক নারী শ্রমিকই বলেন, তারা পুরুষের চেয়ে কম কাজ করেন না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই ধৈর্য ও নিখুঁতভাবে কাজ করার দক্ষতার জন্য তাদের ওপর নির্ভরশীলতা থাকে বেশি। তবুও মজুরি নির্ধারণে কোনো লিখিত নীতিমালায় নয়, বরং লিঙ্গভিত্তিক ধ্যানধারণাই এখানে বড় ভূমিকা রাখে।
-
শ্রম আইনে পুরুষ ও নারী উভয় শ্রমিকের জন্য সমান মজুরি নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তব পরিস্থিতি তার উল্টো। মাঠ পর্যায়ে শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে তদারকির অভাব রয়েছে, এবং এই ধরনের বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্পে শ্রম আইন প্রায়ই মানা হয় না।
-
নারী শ্রমিকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন। তাদের নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা, ছুটির সুযোগ বা দুর্ঘটনাবিমা। শুধু পারিশ্রমিকেই নয়, ন্যূনতম সুরক্ষা থেকেও তারা বঞ্চিত।