যেখানে গল্প থামে, সেখানেই শুরু হয় অপুর জীবনকথা
চলচ্চিত্রের পর্দায় তিনি কখনো মিষ্টি হাসির নায়িকা, কখনো সংগ্রামী নারী, আবার কখনো মমতাময়ী মা। কিন্তু পর্দার বাইরে অপু বিশ্বাস একেবারেই অন্য এক মানুষ-নরম আলোয় মোড়া দৃঢ় বাস্তবতা। শোবিজের রঙিন জগতে যেখানে গল্পের শেষ মানেই নতুন নায়িকার আগমন, সেখানে অপুর গল্প শুরু হয় শেষের পরেও। অভিনয়ের প্রতি একাগ্রতা, জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা আর নিজের প্রতি অবিচল বিশ্বাস-এই তিনেই তিনি গড়েছেন এক অনন্য পথচলা। বছরের পর বছর ধরে তিনি দেখিয়েছেন, নারী যদি স্থির থাকে নিজের আলোয়, তবে তাকে নিভিয়ে ফেলা যায় না। আজ তার জন্মদিনে সেই আলোয় ফিরে দেখা যাক এক জীবনের গল্প- যেখানে প্রতিটি অধ্যায় শুরু হয় এক নতুন অপুর জন্মে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে
-
বগুড়ার মেয়ে অপু বিশ্বাস ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহী। নাচের মঞ্চ থেকে শুরু করে অভিনয়ের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো-তার যাত্রা ছিল ধাপে ধাপে শেখার এক গল্প।
-
২০০৪ সালে ‘কাল সকালে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষেক হলেও, প্রকৃত পরিচিতি আসে ২০০৬ সালে ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির মাধ্যমে।
-
শাকিব খানের সঙ্গে তার সেই জুটি শুধু বাণিজ্যিকভাবে নয়, ঢালিউডের ইতিহাসেও এক নতুন অধ্যায় রচনা করে।
-
অপু বিশ্বাসের অভিনয়ের মূল শক্তি তার স্বাভাবিকতা। তিনি কখনোই অতিরঞ্জিত অভিনয়ে যাননি। বরং চরিত্রকে অনুভব করে পর্দায় বাঁচিয়ে রাখাই ছিল তার লক্ষ্য।
-
‘চাচ্চু’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘মাই নেইম ইজ খান’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ কিংবা ‘রাজনীতি’-প্রতিটি ছবিতেই তিনি নিজেকে ভেঙেছেন, নতুনভাবে নির্মাণ করেছেন।
-
‘রাজনীতি’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় যেন এক নীরব প্রতিবাদ-সমাজের নারীর অবস্থান, সাহস আর স্বপ্নের গল্প বলেছিলেন তিনি অভিনয়ের ভাষায়। বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিতেও তিনি প্রমাণ করেছেন, জনপ্রিয়তা আর শিল্প একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সম্পূরক।
-
ঢালিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল জুটির একটি নিঃসন্দেহে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। প্রায় ৮০টিরও বেশি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন তারা। তাদের জুটি বক্স অফিসে যে ঝড় তুলেছিল, তা আজও দর্শক স্মরণ করে নস্টালজিয়ায়।
-
তবে এই সাফল্যের পেছনে ছিল এক অনুশাসিত শিল্পীজীবন-ক্যামেরার সামনে হাসি, পর্দার আড়ালে নিরলস পরিশ্রম। নিজের অবস্থান তৈরি করতে গিয়ে তাকে লড়তে হয়েছে পূর্বধারণা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সঙ্গে।
-
অপু বিশ্বাসের সিনেমাগুলোতে নারী চরিত্রগুলো ছিল জীবন্ত, সাধারণ নারীর মতো বাস্তব। তিনি শুধু পর্দার ‘নায়িকা’ ছিলেন না-ছিলেন মা, স্ত্রী, প্রেমিকা, আবার সংগ্রামী মানুষও।
-
‘মাই নাম ইজ খান’ ছবিতে তার আত্মমর্যাদাবোধ, ‘রাজনীতি’তে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা কিংবা ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর হাস্যরস, প্রতিটি চরিত্রই তার ভেতরের বহুমাত্রিক শিল্পীসত্তার প্রমাণ।
-
অপু বিশ্বাসের জীবনের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় তার মাতৃত্ব ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রকাশ। তবে তিনি কখনোই এই অধ্যায় থেকে পিছিয়ে যাননি, বরং আরও দৃঢ় হয়ে ফিরেছেন। মাতৃত্বের পরেও নিজের অবস্থান ফিরে পাওয়া, নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করা-এটাই তার সাহসী পরিচয়।
-
অপু বিশ্বাস শুধু অভিনেত্রী নন, তিনি এখন একজন প্রযোজক, টেলিভিশন উপস্থাপক, সমাজসেবীও। তিনি নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলেন, তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেন।
-
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার উপস্থিতি যেমন পরিমিত, তেমনি প্রভাবশালী-ইতিবাচক বার্তা ছড়ানোর জায়গায় তিনি আজ এক নির্ভরতার নাম।
-
বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক নায়িকার আগমন ঘটে, কেউ হারিয়ে যান সময়ের ভিড়ে, কেউ আবার থেকে যান কাজের স্মৃতিতে। অপু বিশ্বাস তাদের মধ্যেই একজন, যিনি সময়ের সাথে নিজেকে বদলে নিয়েছেন, কিন্তু হারাননি নিজের স্বকীয়তা। তিনি প্রমাণ করেছেন-তারকা মানে শুধু গ্ল্যামার নয়, আত্মসম্মান আর নিষ্ঠার প্রতীকও বটে।
-
অপু বিশ্বাস এখন শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি এক যাত্রার নাম-সংগ্রামের, ভালোবাসার, স্থিতধী নারীর প্রতীক।