তিন পরিচয়ের এক নারী টুইঙ্কেল খান্না
২৯ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া এক নারীর জীবন যেন ভারতীয় বিনোদনজগতের চেনা ছক ভেঙে নিজস্ব পথে হাঁটার সাহসী উদাহরণ। বলছি বলিউড অভিনেত্রী টুইঙ্কেল খান্নার কথা। একসময় অভিনয়ের আলোয় যাত্রা শুরু করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন লেখক, প্রযোজক, উদ্যোক্তা ও মতপ্রকাশে দৃঢ় এক কণ্ঠস্বর হিসেবে। জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক কীভাবে ‘তারকা সন্তান’ পরিচয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে টুইঙ্কেল খান্না হয়ে উঠেছেন নিজেই একটি স্বতন্ত্র পরিচয়। ছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
-
বলিউডের কিংবদন্তি রাজেশ খান্না ও ডিম্পল কাপাডিয়ার মেয়ের পরিচয়েই টুইঙ্কেল খান্নার জীবন শুরু। চারপাশে ক্যামেরা, আলো, প্রত্যাশা সবই ছিল। নব্বইয়ের দশকে চলচ্চিত্রে কাজ করলেও অভিনয়কে তিনি কখনোই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বানাননি। নিজের ভেতরের প্রশ্ন, কৌতূহল আর ভাবনাকে জায়গা দিতে তিনি বুঝেছিলেন অন্য এক মাধ্যম দরকার।
-
অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত ছিল সাহসী। সেই সিদ্ধান্তের পরেই কলম ধরা। সংবাদপত্রের কলামে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করে তিনি ধীরে ধীরে পাঠকের মন জয় করেন। তার লেখার ভাষা তীক্ষ্ণ, ব্যঙ্গাত্মক আবার ভীষণ মানবিক। সমাজ, সম্পর্ক, নারী-জীবন, দৈনন্দিন দ্বন্দ্ব সবই উঠে আসে সহজ অথচ গভীর ভঙ্গিতে।
-
পরবর্তীতে বই লেখায় হাত দিয়ে তিনি প্রমাণ করেন, জনপ্রিয়তা আর বুদ্ধিদীপ্ত রচনার সহাবস্থান সম্ভব। তার বইগুলো পাঠকপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সমালোচকদেরও প্রশংসা পেয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক নারীর জীবনযাপন, সামাজিক ভণ্ডামি ও আত্মসম্মানবোধ নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা করে নজর কাড়ে।
-
টুইঙ্কেল খান্নার সবচেয়ে বড় শক্তি তিনি ভদ্রতার মুখোশে সত্য লুকান না। সামাজিক মাধ্যমে কিংবা কলামে, তিনি প্রশ্ন তোলেন নারী অধিকার, লিঙ্গবৈষম্য, ভণ্ড নৈতিকতা নিয়ে। বিতর্ক এড়ান না, বরং যুক্তির জোরে কথা বলেন। এই নির্ভীকতা তাকে অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা করে তুলেছে।
-
তারকা দম্পতি হিসেবেও টুইঙ্কেল খান্না ও অক্ষয় কুমারের সম্পর্ক বহু আলোচিত। কিন্তু এখানেও তিনি নিজস্ব অবস্থান বজায় রেখেছেন। সংসার, সন্তান ও পেশাজীবন এই তিনের ভারসাম্য নিয়ে তিনি কথা বলেন বাস্তবতার আলোকে। নিখুঁত হওয়ার ভান নেই; আছে শেখার ও এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
-
লেখালেখির পাশাপাশি নকশা ও অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় তার আগ্রহ থেকে গড়ে উঠেছে সফল উদ্যোগ। সৃজনশীলতাকে ব্যবসার সঙ্গে মেলাতে পারার দক্ষতা তার আরেক পরিচয়। এখানে তিনি শিল্পবোধ ও ব্যবহারিক চিন্তার সুন্দর মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
-
২৯ ডিসেম্বর শুধু একটি তারিখ নয়, এটি এক বিকশিত মানসিকতার উদযাপন। টুইঙ্কল খান্না দেখিয়েছেন জীবন মানে এক পথে আটকে থাকা নয়। সময়, অভিজ্ঞতা আর আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে নেওয়াই প্রকৃত সাফল্য।