খেলাফত মজলিস
অবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশন ও প্রস্তাবনা বাতিল করুন

অবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশন ও তাদের প্রস্তাবনা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মুহাম্মদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
রোববার (২০ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ, দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন কর্তৃক যে ধৃষ্টতামূলক সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা হয়েছে, তাতে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পারিবারিক বিধানকে চরমভাবে অবজ্ঞা ও অস্বীকার করা হয়েছে।
দলটির নেতারা বলেন, তারা তথাকথিত ‘অভিন্ন পারিবারিক আইন’ এর মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার নামে ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত বিধানাবলিকে বাতিল করে পশ্চিমা অনুকরণভিত্তিক একটি উলঙ্গ বল্গাহীন সমাজব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
এই কমিশন এদেশের মানুষ, ধর্ম, সমাজ সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। এই চিহ্নিত মহলটি বিকৃত রুচিবোধে বেড়ে ওঠা ধর্ম-বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদের প্রতিনিধিত্ব করে বলেও এতে উল্লেখ করেন তারা।
ধর্মীয় দলের নেতারা বলেন, অন্ধকার গলীর পথভ্রষ্টরা কখনও আলোর পথের যাত্রীর পথ প্রদশর্ক হতে পারে না । প্রকৃত অর্থে ইসলাম-ই নারীকে মুক্তি-প্রগতি ও মর্যাদার পথে পরিচালিত করে।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট- ইসলামে নারীর জন্য নির্ধারিত উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাকের বিধান কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত, যা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা অমান্য করে সমানাধিকারের নামে শরিয়াহকে পরিবর্তন করার উদ্যোগ কেবল ইসলামবিরোধী নয় বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।
বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ আখ্যায়িত করার প্রস্তাব ইসলামী বিয়ের মূল দর্শনকেই অস্বীকার করে উল্লেখ করে বলে তিনি বলেন, ইসলাম বিবাহকে একটি পবিত্র চুক্তি হিসেবে গণ্য করে, যেখানে উভয়ের অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারিত। এই ধরনের প্রস্তাব পারিবারিক বন্ধনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
তারা আরও বলেন, ইসলাম পতিতাবৃত্তিকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। যৌনপেশাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া বা শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সরাসরি কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থি এবং সমাজে ব্যভিচার, অনাচার ও নৈতিক অধঃপতনকে অবাধ করে দেবে।
তথাকথিত ‘নারী অধিকারের নামে’ ইসলামি মূল্যবোধ, সামাজিক কাঠামো ও পারিবারিক বন্ধনকে বিনষ্ট করা একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। আমরা এই ষড়যন্ত্রকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করছি।
তারা বলেন, নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ইসলাম সমর্থন করে, তবে সংখ্যাবৃদ্ধির নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে লিঙ্গকে প্রধান ভিত্তি করে একটি বিশৃঙ্খল কাঠামো দাঁড় করানো- ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মূলত এই কমিশন নারীকে পণ্য হিসেবে আরও লোভনীয় করার এবং সমাজের কাছে নারীকে করুনার পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করার অপপ্রয়াস দেখিয়েছে।
তারা সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন তৈরির প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে এই কমিশনের প্রস্তাবিত রিপোর্টকে প্রমোট করে প্রচারিত ঘোষণা প্রত্যাহারের করে নিতে হবে।
ইসলামী শরিয়াহকে পূর্ণ মর্যাদায় স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে তারা বলেন, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে উপেক্ষা করে গৃহীত এই ধরনের কমিশন বাতিল করতে হবে। এবং চিহ্নিত এই মহলটিকে রাষ্ট্রীয় সব কার্যক্রমে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।
এএএম/জেএইচ/জিকেএস