১৫ দিন জীবনের সেরা দিন


প্রকাশিত: ১১:৪০ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে টানা ১৫দিন গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গী ছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা। এসময় সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার দেখাশোনা দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অবরুদ্ধ থাকলেও দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার সঙ্গে সময় কাটানাে তার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

সম্প্রতি জাগোনিউজের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, গত ৩২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমি। তবে কখনোই একসঙ্গে কয়েকদিন কাটানোর সুযোগ হয়নি।

তিনি জানান, সেই ১৯৮৪ সালে ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তির পর থেকেই রাজনীতিতে তার পথ চলা শুরু। ১৯৯৫ সালে ইডেনের সভানেত্রী এবং পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ভিপির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি ঢাকা মহানগর থেকে শুরু করে দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লম্বা সময় কাটানোর এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা এই প্রতিবেদকের সাথে ব্যক্ত করেছেন তিনি।

শিরিন সুলতানা জানান, ৫ জানুয়ারি বিকেলে পুলিশের ছোঁড়া পিপার স্প্রেতে খালেদা জিয়া আহত হন, এছাড়াও ঠাণ্ডা জনিত কারণে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এসময়ও খালেদা জিয়ার পাশে ছায়ার মতোই ছিলেন তিনি।

তিনি জানান, ‘আসলে রাজনীতি যেহেতু করি, যে কোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি এবং ছোট্ট বেলা থেকে সেটা করে আসছি। এরকম এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ছিলো। তখন আমরা দীর্ঘদিন রোকেয়া হলে একটি রুমের মধ্যে আটকা থাকতাম। সামনে তালাবন্ধ থাকতো, ভেতরে আমরা থাকতাম। বাইরে রেরিয়ে কাজ করতাম, আবার ঢুকতাম। সেটাও একটা সময় ছিলো, কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছি। আরো অনেক নেত্রীবৃন্দ রয়েছে। একটা রুমের মধ্যে আটক থাকতে হয়। ভালো লাগে নেত্রীর পাশে আছি। এটা ভিন্ন রকমের অনুভূতি। নেত্রীর অবিচল সাহস দেখে উৎসাহিত হই। হাজবেন্ড ও অন্য জায়গায়। সংসার বলতে কিছুই নেই। বাসায় কাজের লোকজন ছাড়া কেউ নেই। এটা ভিন্ন অনুভূতি।

তিনি জানান, আমাদের সঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আপা (বেগম সেলিমা রহমান) ছিলেন। আরো ছিলেন, কুমিল্লা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেরা আলাউদ্দিন। আমরা এক সাথে সূরা পড়ছি, তিলাওয়াত করছি, একসাথে নাস্তা করছি। পেপার পড়ছি, টিভি নিউজ দেখছি, ফাঁকে ফাঁকে নিজেরা আলোচনা করেছি, ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা কোনো সংবাদ পেলে তা জানাচ্ছি। তারপরে এইতো। সময়ও কেটে যাচ্ছে, খারাপ না। তোমাদের ফোন পাচ্ছি, ভালোমন্দ খবর পাচ্ছি। টেলিফোনে কথা বলতে পারছি। মহিলা দলের নেতাকর্মী আসছে। দুদিন ধরে তাদের আসা কমে গেছে। এভাবেই সময় কেটে যায়। সারাদিন পেপারগুলো পড়ে একটু লেখালেখির চেষ্টা করছি। একটু ডায়েরি লিখছি। এভাবেই সময় কেটে যায়।’

খাবার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খাবার-দাবার যখন যা পাই, তখন তা খাই, খাবার ব্যাপারে আমার কোনো স্পেশালিটি নাই। আমি সাধারণত খাবার একটু কমই খাই। সকালের নাস্তা আর রাতে খাই, দুপুরে কিছু খাই-ই না। সব মিলিয়ে যখন যে পরিবেশ, আমি তিন বেলা রুটিও খেয়ে থাকতে পারি। আবার না হলে নাও খেয়ে থাকতে পারি। আমাদের স্টাফরা যা খাচ্ছে, নেত্রী আমরা সবাই এক ধরণের খাবার খাচ্ছি।’

ঘুমের পরিবেশ সম্পর্কে শিরিন সুলতানা বলেন, ‘এটা বাসা না, অফিস, খুব ভোরে উঠে যেতে হয়, লোকজন হাটা চলা করে, সবাই এক বাথরুমে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি করে গোসল সেরে নিতে হয়। নিজের বাসার মতো কি আর হয় ? অফিসে আছি। একটা রুম তাও আবার প্রাইভেসি নাই। নীচে কম্বল বিছিয়ে শুতে হয়। অনেকে পারে কি-না জানি না, আমি ম্যানেজ করে নিতে পারি। আমি মনে করি, এখানে থাকতে হবে, মেনেই নিয়েছি এবং কবে নাগাদ আমাদের অর্জিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। কবে আমাদের দাবি দাওয়া পূরণ হবে, সময় সাপেক্ষ ব্যাপার সেটা মেনে নিয়ে আছি।

চেয়ারপারসনের সময় কীভাবে কাটছে তার জবাবে শিরিন বলেন, ‘আমরা যেরকম করে বললাম, ঠিক এরকম করেই কাটছে। পত্রিকা পড়ছেন, টেলিফোনে আমাদের কাছ থেকে খবর জানছেন। টিভি স্ক্রল দেখছেন। উনার কোনো প্রয়োজন হলে আমাদের ডাকছেন। আমরা যাচ্ছি। আমাদের প্রয়োজন হলে আমরা যাচ্ছি। পত্রিকার বিভিন্ন সম্পাদকীয়-উপ সম্পাদকীয়গুলো পড়ছেন। সময়-সাময়িক রাজনৈতিক বই পড়ছেন। নির্দিষ্ট করে কোনো বইয়ের নাম বলতে পারছি না। আমাদের কোনও লেখা পড়ে ভালো লাগলে, ম্যাডামকে পড়তে বলি, ম্যাডামও পড়েন, ম্যাডামের ভালো লাগলে ম্যাডামও আমাদের কাছে শেয়ার করছেন।’

শিরিন সুলতানা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় দলের স্বার্থে ভূমিকা রেখেছি  দেলোয়ার হোসেন (খোন্দকার দেলোয়ার, প্রয়াত মহাসচিব, বিএনপি) সাহেবের সঙ্গে। দুর্যোগ কীভাবে মোকবিলা করতে হয় উনার সঙ্গে থেকে দেখেছি। উনার সাহস দেখেছি, সব সময় উনার কাছ থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করেছি। বিপদকালীন সময়ে কীভাবে উৎরানো যায়। ওই সময়ে কিছু লিখে রাখিনি। অনেক কিছু আমার মনে আছে। কিছু কিছু লিখে রেখেছি তা কারো সাথে শেয়ার করা হয়নি। এবার ভাবছি প্রতিদিন হয়ত টুকিটাকিগুলো লিখে রাখি। কিছু কিছু ঘটনা আছে যা একটা সময় অন্যরা পড়বে। যা একটু হাস্যরস হবে, বেদনাদায়ক আছে, কিছু বিরক্তিকর আছে, রুম শেয়ারিং, বিরক্তিকর কিছু ঘটনা আছে, ভালো কিছু ঘটনা আছে। এগুলো লিখে রাখছি।’

এমএম/ এমএএস

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।