অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার : আ স ম রব
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে দেশবাসী গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। লকডাউন বা ছুটির মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কি না তার কোনো মূল্যায়ন না করে সরকার অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। যার জন্য জাতিকে চরম মাশুল দিতে হবে।’
শুক্রবার (২৯ মে) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘দেশবাসী প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করছে যে, দেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এটা এখন শুধু নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত জনসাধারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; উচ্চবিত্ত, শিল্পপতি কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। করোনার ঊর্ধ্বগতিতে দেশবাসী আতঙ্কগ্রস্ত। করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধ না করতে পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। লকডাউন করে করোনা পরিস্থিতি বা লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে এ নিয়ে কোনো মূল্যায়ন না করেই সরকার অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। সরকারের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের জন্য জাতিকে চরম মাশুল দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘লক ডাউনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, করোনার বিস্তার রোধ করা। সে কাজটি গত দু’মাসে মোটেই সুচারুরূপে সম্পাদন করা হয়নি। এককথায় গত দু’মাসের লকডাউন বৃথাই গেছে। এর মূল কারণ হলো- জাতিকে করোনা মোকাবিলায় উদ্বুদ্ধ করা যায়নি, জাতিকে এ লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধও করা হয়নি। সরকারের আত্মম্ভরিতা আর একলা চল নীতি আজ এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য দায়ী।’
জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘লকডাউন প্রত্যাহারের পূর্বে অবশ্যই চিন্তা করা উচিত, সংক্রমণ বাড়বে কি না এবং বর্ধিত সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ক্ষমতা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আছে কি না। তা যদি আমাদের সক্ষমতার মধ্যে থাকে, কেবল মাত্র তখনই লকডাউন প্রত্যাহার বিবেচনা করা যেতে পারত। এ বিষয়ে সরকার গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এড়িয়ে যাওয়া একটা ভুল পদক্ষেপ।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সকল দেশে করোনা পরিস্থিতি যখন তাদের অনুকূলে এসেছে, তখনই কেবল তারা লকডাউন প্রত্যাহারে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অথচ একমাত্র আমাদের দেশেই যখন করোনায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী তখন সরকার অবিবেচকের ন্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে।’
এ অবস্থায় জরুরি করণীয় তুলে ধরেন আ স ম আবদুর রব। সেগুলো হলো-
>> যথেষ্ট সংখ্যক করোনা পরীক্ষা করা; এ জন্য প্রতি জেলায় ল্যাব স্থাপন করতে হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন রোগী সনাক্তকরণ এবং তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করে রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এজন্য প্রচুর সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে।
>> নিরন্ন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে, যাতে তাদের বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন না হয়।
>> জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক ধাপে ধাপে লকডাউন প্রশ্নে পদক্ষেপ নিতে হবে।
>> ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য অবিলম্বে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল’ গঠন করতে হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিলের কাজ হবে একটি সুচিন্তিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন। আসন্ন বাজেট থেকেই এর অর্থায়ন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে এর একটি প্রধান লক্ষ্য হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিলকে হতে হবে ইনক্লুসিভ এবং অংশীদারিত্বমূলক তথা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন সমাজশক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে এটা গঠন করতে হবে।
>> জাতিকে করোনা মোকাবিলায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ জন্য দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রম, কর্ম, পেশার প্রতিনিধি সমন্বয়ে কার্যকর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এইউএ/এফআর/জেআইএম