করোনায় দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে কৃষি ও কৃষক

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:০১ পিএম, ৩০ মে ২০২০

এই করোনায় দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে সবচেয়ে উপেক্ষিত খাত বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক। শুধু ভাতের সংস্থান করা নয়, সবজি, মাছ, ডিম, মুরগি, দুধ, মাংস, ফল কোনো কিছুরই অভাব বোধ করতে দেয়নি যে খাত, গত বাজেটেও সবচেয়ে উপেক্ষিত ছিল সে। মাত্র ৩.৫ শতাংশ বরাদ্দ।

বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের উদ্যোগে আজ “করোনাকালের অর্থনীতি-করোনাত্তোর অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার খাত কী হওয়া উচিৎ” শীর্ষক এক অনলাইন মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এসব কথা বলেন।

বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ্ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, সিপিডির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন্দ নিলোর্মী ডালিয়া এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবি সভাপতি মুজাদিুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা আলমগীর হোসেন দুলাল, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।

মতবিনিময় সভায় আলোচকরা বলেন, এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য বিপর্যয় করোনা সংক্রমণ শুধু স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রের অবহেলা ও মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরেছে তাই নয়, উন্মোচন করেছে উন্নয়নের গল্প ও অর্থনীতির দুর্বলতা কোথায়। আমাদের অর্থনীতি যে ৪টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে অর্থাৎ রফতানি আয়, রেমিট্যান্স, কৃষি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। করোনা সংক্রমণের কালে এর প্রত্যেকটিই সংকটের মুখে। রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আয় করে যে খাত সেই গার্মেন্টস খাতের নড়বড়ে চেহারা আর মালিকদের দায় না নেয়ার মানসিকতা থেকে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে প্রণোদনা, মুনাফা আর শ্রম শোষণের মধ্য দিয়ে যে খাতের বিকাশ, অর্থনৈতিক দুর্যোগে তারা কতটা সুযোগসন্ধানী। ৪০ বছরের শিল্প মাত্র ৩ মাসে এতটাই কাহিল হয়ে পড়েছে যে রাষ্ট্রের প্রণোদনা অর্থাৎ জনগণের টাকা ছাড়া সে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। এবার প্রমাণ হলো গার্মেন্টস খাত এমন এক বৃক্ষ যে সে ফুল ফল তো দূরের কথা ছায়া দেয়ারও ক্ষমতা রাখে না।

তারা আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির আরেকটি বড় চালিকাশক্তি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। দেশের অর্থনৈতিক আয়তনের ৫০ শতাংশ সরবরাহ করে এই খাতের শ্রমজীবীরা। তাদের কাজ নাই তো মজুরি নেই। গত ৪ মাসে তাদের জীবন কীভাবে কেটেছে তার বর্ণনা দেয়া কঠিন। ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, আর সবমিলিয়ে চুরিচামারিসহ দেড় লাখ টন চাল ছিল বরাদ্দ। ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমশক্তির সাড়ে পাঁচ কোটিই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের। তারা কতটুকু সহায়তা পেয়েছে তার হিসেব বের করা কঠিন। করোনা এদের নিম্নবিত্ত থেকে দরিদ্রের কাতারে নামিয়ে এনেছে।

করোনা বিপর্যয় সামাল দিতে সরকার যে লক্ষাধিক কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা খেয়াল করলে দেখা যাবে সামগ্রীক অর্থনীতির ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের বিষয়গুলো সেখানে তেমন গুরুত্ব পায়নি, যতটা গুরুত্ব পেয়েছে বড় ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা খাত।

মতবিনিময় সভায় করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা, সকলের খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গবেষণা, সামাজিক নিরাপত্তা ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। কৃষিতে জিডিপির ১২%, স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৩%, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৮%, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ দ্বিগুণ করার দাবি জানানো হয়। একই সাথে মতবিনিময় সভা থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতকে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়।

এফএইচএস/এনএফ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।