আট দফা বাজেট প্রস্তাবনা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির
তেলের মাথায় তেল দেবার নীতি পরিহার করে করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতি উত্তরণে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষি ও গ্রামীণ খাতকে বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জন্য আট দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরে। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এসব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, করোনা মহামারি ব্যক্তি ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে গভীর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে তা কাটিয়ে ওঠাই হবে নতুন অর্থবছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নিছক প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীক উন্নয়নের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে উৎপাদনের সাইকেল সচল রেখে অভাবগ্রস্ত ও স্বল্প আয়ের আট থেকে দশ কোটি মানুষের খাদ্য, নগদ টাকা ও বেকারদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।
‘করোনাকালীন পরিস্থিতিতে গার্মেন্টসহ রফতানিমুখী খাত এবং প্রবাসীদের আয় কমে যাবার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে কৃষি ও গ্রামীণ খাতকে উৎপাদনশীল খাত হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। মহামারি ও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং কৃষি ও গ্রামীণ খাতের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে তার আমূল সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ভারসাম্যে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করাও জরুরি। বাজেট প্রণয়ন ও তার জন্য প্রয়োজনীয় তেলের মাথায় তেল দেয়া এবং রাজস্ব খাতসহ অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির নীতি থেকে সরে আসতে হবে।’
সাইফুল হক দলের পক্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে নিম্নোক্ত প্রস্তাবসমূহ বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
১. করোনা দুর্যোগকালীন বাজেটে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং কৃষি ও গ্রামীণ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানকে নতুন বাজেটের নীতি হিসেবে ঘোষণা করতে এবং সেই অনুযায়ী এই খাত পুনর্গঠনের বিস্তারিত পরিকল্পনা ও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
২. রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ‘গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে; যাতে কোনো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসা সরকারি উদ্যোগে নিশ্চিত করা যায়। বেসরকারি হাসপাতালের মুনাফাকেন্দ্রীক স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনার সুরক্ষা ও চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।
৩. কৃষি ও গ্রামীণ খাতের পুনরুজ্জীবন ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে উন্নয়ন বাজেটের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টন ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষককে ঋণ নয়, এই দুর্যোগে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করতে হবে। কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র প্রকল্প, মৎস্য, দুগ্ধ ও পোল্ট্রির মতো উৎপাদনশীল উদ্যোগে কার্যকর আর্থিক প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. দেশের স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী-দিনমজুর ও গরিব দুই কোটি পরিবারের জন্য আগামী ৬ মাস প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা বাজেট নিশ্চিত করতে হবে। একটি স্থায়ী গণবণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগামী বাজেটেই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বরাদ্দ পেশ করতে হবে।
৫. বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে; আত্মকর্মসংস্থানের উদ্যোগসমূহকে নগদ আর্থিক সহায়তার নীতি ও বরাদ্দ ঘোষণা করতে হবে।
৬. রাজস্ব ব্যয়, বিলাস দ্রব্যের আমদানি, সামরিক খাতসহ অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ হ্রাস করে শিক্ষা, আবাসন, শিল্পসহ উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
৭. কালো টাকা, অপ্রদর্শিত আয়সহ বিদেশে পাচার করা অবৈধ অর্থ-সম্পদ উদ্ধারে নীতি ও কৌশল ঘোষণা করতে হবে। বিত্তবানদের ওপর বর্ধিত কর আরোপ করতে হবে। সম্পত্তি অনুযায়ী কর ধার্য করতে হবে।
৮. পরিবহন ভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বাড়িভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের নীতি ঘোষণা করতে হবে।
এফএইচএস/এমএআর/এমএস