বাজেটকে ‘৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী’ বলছে সিপিবি

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৩৫ পিএম, ১১ জুন ২০২০

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম।

তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহাবিপর্যয়কালে পীড়িত মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য খাতের প্রাধান্য পাওয়ার জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষিত হয়েছে ঘোষিত বাজেটে। এই বাজেটে ১ শতাংশ লুটেরা ধনিকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। এটি সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উত্থাপন করার পর এক বিবৃতিত প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিপিবি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও শাহ আলম বলেন, গত ৯ জুন সিপিবির পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিতব্য বাজেটকে করোনা মহাবিপর্যয়কালে বিশেষ বিবেচনার বাজেট আখ্যায়িত করে এর অগ্রাধিকার নির্ণয়ের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। আগামী বাজেটকে মানুষ বাঁচানোর বাজেট আখ্যায়িত করে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষি-কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে ৯৯ শতাংশের জন্য বাজেট প্রণয়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বাজেটের অর্থসংস্থানের জন্য পরোক্ষ করের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। বাজেটের পরিমাণ বাড়াতে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়, অপ্রদর্শিত কালো টাকা ও বিদেশে পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত আনা ও বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া বাজেটের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয়, সিস্টেম লস, বিলাসিতা ইত্যাদি রোধ করে মিতব্যয়িতা প্রদর্শন, প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস, সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী দিনগুলোর মতো ১:৬ করা, সব ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম কঠোরভাবে দমন ও নিবৃত্ত করা, অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ হ্রাস করা, প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও যুক্তি সঙ্গত মাত্রায় কমিয়ে আনা, যথা সম্ভব সরকারি ক্রয় হ্রাস করা, মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ আপাততঃ স্থগিত রাখাসহ নানা পরামর্শ প্রদান করা হয়েছিল।

আরও কিছু বিষয়ে দেয়া প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে সিপিবি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো সরকার সিপিবিসহ দেশের আপামর মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে আমলাতন্ত্রের সাজানো বাজেট ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদের। অথচ বিত্তবানদের উপর ধার্য প্রত্যক্ষ কর হ্রাস করা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত অব্যাহত রাখা হয়েছে, অপ্রদর্শিত কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই বাজেটে এভাবে গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্ঠিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘এবারের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এই বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাজেটের পরিমাণকে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এই অর্থের বেশির ভাগ খরচ হবে পূর্বেকার ঋণ পরিশোধ, শ্বেতহস্তির মতো বিশাল সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ, বিলাস দ্রব্য আমদানি, অপচয়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রকারের সিস্টেম লস, কর-রেয়াতের নামে ধনিক শ্রেণিকে বিশাল ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি কাজে। এসবই হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ। এর বাইরে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবারও অব্যাহত রাখার মাধ্যমে অর্থনীতিতে লুটপাটের ধারা আরও জোরদার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধনীকে আরো ধনী এবং গরিবকে আরো গরিব করা, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি করা, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি হবে এই বাজেটের ফলাফল। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।’

সিপিবি নেতাদ্বয় বলেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধির দাবি অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনুপাতিক বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের ছিটেফোঁটা যুক্ত করা হয়েছে। বাজেটও সম্পূরক বাজেটের মধ্যে বিপুল পার্থক্য একথাই প্রতিষ্ঠা করেছে, যে বাজেট প্রস্তাব নিছক একটি কথার কথা মাত্র। বাজেটকে অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবে পরিণত করা হয়েছে। বাজেটের তথ্য-ভিত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই প্রস্তাবিত জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সরকারের আন্তরিকতা ও সেসব বাস্তবায়নের সক্ষমতা-যোগ্যতা ও মানুষের মনে প্রশ্নবিদ্ধ।

বিবৃতিতে সেলিম ও শাহ আলম উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং চলমান করোনাকালীন কঠোর বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষি-কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে ৯৯ শতাংশের জন্য বাজেট প্রণয়নে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

এফএইচএস/এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।