করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ববি হাজ্জাজের প্রস্তাবনা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ২১ জুন ২০২০

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণে বিতর্কমুক্ত সর্বদলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং প্রস্তাবিত বাজেটে সংশোধনী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে প্রস্তাবনা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন- এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।

রোববার (২১ জুন) গণমাধ্যমে এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তিনি।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দেশের সর্বমহলে আপনি বিশেষ শ্রদ্ধা এবং সম্মানের স্থান অর্জন করেছেন। টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার যোগ্য এবং বিচক্ষণ নেতৃত্ব জাতি হিসেবে আমাদের আশান্বিত করছে। স্বাধীনতা স্বপক্ষের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেশবিরোধী চক্রান্ত এবং অশুভ রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে আপনার দীর্ঘ সংগ্রামে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে এনডিএম (নিবন্ধন নং- ০৪৩) পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য অথবা পথচলার ভিন্নতা থাকলেও জাতীয় দুর্যোগ এবং ক্রান্তিকালে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আপনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন এবং চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আপনার সদয় বিবেচনা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে উপস্থাপন করছি।

১. করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সর্বদলীয় কমিটি গঠন

আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে চাই। গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি থাকলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণে যথেষ্ট অনিয়ম হয়েছে। এছাড়াও সঠিকভাবে মহামারি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রান্তিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং সরাসরি আপনার নিকট মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক শক্তির সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি। এসব দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব যাদের নামে ঋণখেলাপি, অর্থপাচার বা দুর্নীতির মামলা নেই তাদের জাতীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি। দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনার নিরলস এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে বিতর্কমুক্ত এবং সাফল্যমণ্ডিত করতে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারের সহযোগিতার শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে কিনা সেসব পর্যবেক্ষণের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সাথে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

২. প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ক

(ক) বাজেট বক্তব্যের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত আর্থিক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তা মেটাতে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে মূলত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।’

তার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়েছে জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষা এবং দেশের স্বাস্থ্যখাতে বিগত সময়গুলোতে যথাযথ নজর দেয়া হয় নাই। এই অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকারের ৭.২ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেয়া হলেও আমরা এই খাতের সংস্কার নিয়ে কোনো চমক দেখি নাই। আমাদের দেশে যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাজিয়ে সেসব চিকিৎসায় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসা উপকরণের সংস্থান, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি জেলায় আইসিইউ বেড স্থাপন এবং উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতে জরুরি বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান করছি।

(খ) জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তাব করছি। উদাহরণস্বরূপ, নিরাপদ খাবার পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পারলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব কমবে। খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে পারলে অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। বায়ুদূষণ রোধ করতে পারলে এই সংক্রান্ত জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। বাজেটে এসব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দেয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।

(গ) অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, ‘অর্থ যাই লাগবে সেটা জোগাড় করা হবে’। কিন্তু অর্থপ্রাপ্তির প্রচলিত খাতসমূহ করোনা দুর্যোগের সময়ে সংকটের মধ্যে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ মোট বাজেটের প্রায় সাড়ে ৩৩ শতাংশ। আমরা মনে করি, ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক থেকে উচ্চহারে ঋণ গ্রহণ জিডিপির ওপর চাপ ফেলবে। এছাড়াও বৈশ্বিক মহামারির প্রভাবে সারা বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা তখন বিশাল রাজস্ব আদায়ের কাল্পনিক লক্ষ্যমাত্রা একটি দিবাস্বপ্ন। ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই বিশাল বাজেট ঘাটতি পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।

(ঘ) নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দের পরিমাণ মোট বাজেটের ৫.২৮ শতাংশ। বর্গাজমিতে চাষাবাদ করা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা কীভাবে এর সুফল ভোগ করবে সেই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা উপস্থাপনের জন্য আমরা প্রস্তাব করছি। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষকের নিকট থেকে ধান এবং চাল সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অপ্রতুল। এই লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করতে আমরা অনুরোধ করছি।

(ঙ) শিক্ষাখাতে বরাদ্দের পরিমাণ বিগত অর্থবছরের তুলনায় .১৫ শতাংশ কমেছে। আমরা শিক্ষাখাত সংস্কার, বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণ, উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণায় অধিকতর রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় মোবাইল এবং ইন্টারনেটের বর্ধিত খরচ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিশেষ নজর দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তাব রাখছি। এছাড়াও করোনার কারণে চাকরি হারানো দেশি এবং প্রবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসন এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি।

আমরা আশা করছি, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে উল্লিখিত প্রস্তাবনাসমূহ আপনার সদয় বিবেচনায় থাকবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই করোনার মহামারি থেকে আমাদের হেফাজত করুক। আপনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

জয় বাংলাদেশ। এনডিএমের অঙ্গীকার, দেশ হবে জনতার।

কেএইচ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।