পশুর হাট ও ঈদযাত্রা সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট বসানো এবং মানুষের ঈদযাত্রা করানো সংক্রমণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি কয়েকটি জেলায় পশুর হাট বসানোর পরামর্শ দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পরামর্শ খুবই বাস্তবিক এবং এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ভালো ফলাফল বয়ে আনবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। একদিকে সংক্রমণ রোধ অন্যদিকে জীবনে অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা- এই দুইয়ের মাঝে সমন্বয় করে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে হবে।
রোববার (১২ জুলাই) জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এরই মাঝে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পশুর হাট সীমিত করার কথা বলেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও আজ বসছে। এ বিষয়ে আমি দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসহ মাঠ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাব সংক্রমণের বিস্তার রোধে সীমিতসংখ্যক পশুর হাটের অনুমতি দিন। যত্রতত্র পশুরহাট বসানো যাবে না। সড়ক-মহাসড়কের ওপর কিংবা পাশে অনুমতি দেয়া যাবে না। কেনাবেচায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পশুর হাট সংখ্যায় কমিয়ে আনলে কেনাবেচায় বাড়তি চাপ তৈরি হবে। বাড়তি চাপ মোকাবিলায় ডিজিটাল প্লাটফর্ম হতে পারে সম্ভাব্য বিকল্প। অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় জনপ্রিয় করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে বলতে চাই যেহেতু বেচাকেনায় বড় আকারের লেনদেনের বিষয়ে জড়িত তাই মনিটরিং রাখতে হবে, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা কোনোভাবেই প্রতারণার শিকার না হন। অনলাইন বাজার বিশ্বাস ও আস্থার ওপর নির্ভরশীল। সেজন্য বেচাকেনা সহজতর ও ক্রেতা-বিক্রেতাবান্ধব করতে হবে। লেনদেনে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি বলেন, এ কথা সত্য যে করোনার পরীক্ষায় সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা মানুষকে বিস্মিত করেছে। মানুষের জীবন-মরণ, মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা কিংবা অসুস্থতা নিয়ে এমন প্রতারণা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। দ্রুততার সাথে তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই শেখ হাসিনা সরকার কোনো অন্যায়কারীকে ছাড় দেয়নি, দেবেও না। অপরাধীর কোনো দল নেই, অপরাধ লুকাতে তারা দলের আলখাল্লা পরে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান সবসময়ের জন্য। এসব অপরাধীকে পাকড়াও অভিযান সরকার নিজ উদ্যোগে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতসহ সব খাতের দুর্নীতিবাজকে সাবধান করে দিয়ে বলছি, প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। কেউ ছাড় পাবে না। দুর্নীতি যেখানেই যাবে সেখানেই তদন্ত করে ব্যবস্থা করে স্বাধীনতা দুদকের রয়েছে এমনকি আমার নিজের মন্ত্রণালয়ের যেকোনো দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণে দুদকের প্রতি কোনো বাধা নেই।
তিনি বলেন, একদিকে করোনা সংক্রমণ অন্যদিকে বন্যা তার পাশাপাশি কোরবানির পশুর হাট ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার জনমানুষের জন্য কাজ করছে। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি মানুষের সুরক্ষা গ্রহণ করছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রতিদিন অসহায় কর্মহীন মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফেরার ছবি আসছে পত্রিকার পাতায়। জাতীয় জীবনে এমন চ্যালেঞ্জিংয়ের সময় আমাদের প্রয়োজন পারস্পরিক শেয়ারিং এবং কেয়ারিং। আমরা একে অপরের সহমর্মী হলে প্রতিবেশীর প্রতি আন্তরিক হলে নিশ্চয়ই অনামিকার আঁধার কেটে যাবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতি হিসেবে আরও কঠিন সময় আমরা পার করেছি পারস্পরিক মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে। চলমান এ সময় কেটে যাবে। আমাদের মনোবল রাখতে হবে দৃঢ়। আমাদের নেতৃত্বে আছেন সংকট ও দুর্যোগ এর কষ্টিপাথরে উর্নীত এক মানবিক নেতৃত্ব শেখ হাসিনা। তার প্রতি আস্থা রাখুন। অমানিশার এ আঁধার কেটে যাবে। সবকিছু অচিরেই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
এইউএ/বিএ/এমকেএইচ