‘করোনা নয়, লুটপাটের ব্যবস্থাপনা করছে সরকার’
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবিলায় সঠিক ব্যবস্থাপনা না করে সরকার ‘লুটপাটের ব্যবস্থাপনা’ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেছেন, যদি এখনই স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ না করা হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
করোনাকালীন পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাগো নিউজের কাছে এ মতামত ব্যক্ত করেছেন সেলিম।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, গত বছরের মার্চে প্রথম শনাক্ত হওয়ার দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস মিলেছে সাত লাখ ৪৮ হাজার ৬২৮ জনের দেহে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১ হাজার ১৫০ জন। বিশেষ করে গত দু’সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ দ্রুতই বেড়ে গেছে। যদিও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উৎপাদিত করোনার টিকা প্রতিবেশী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে এনে প্রয়োগ করছে সরকার। কিন্তু সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
অন্যদিকে ভারতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে। রাজধানী দিল্লিসহ দেশটির অনেক রাজ্যে অক্সিজেন সংকটে এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সেদেশ থেকে বাংলাদেশে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
দেশে নতুন করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হচ্ছেন বলে সিপিডির জরিপে উঠে এসেছে
করোনাকাল ও বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সরকার ১ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ দিশেহারা। তারা কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় সেবার আওতায় আসতে পারছে না। ১ শতাংশ মানুষকে কীভাবে রাতারাতি বড়লোক করা যায়, সরকার তার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে। এটি চরম অমানবিক অবস্থা তৈরি করছে।’
‘সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি যে জরিপ প্রকাশ করেছে, তা রাষ্ট্র-সরকারের চরম অব্যবস্থাপনার প্রমাণ। সিপিডি দেখিয়েছে, নতুন করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হচ্ছেন। লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক চাকরিহারা হচ্ছেন। তাদের জন্য সরকার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। অথচ এই শ্রমিকদের আয়েই আজকের অর্থনীতি, উন্নয়ন।’
সিপিবি প্রধান বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মধ্যকার বৈষম্য বাড়ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। যে হারে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে ৯৩ হাজার ছাড়িয়েছে, তা পৃথিবীর কোনো দেশে হয়নি। তার মানে মহামারির সময়ে সম্পদ আহরণের বিশেষ ক্ষেত্র তৈরি করেছে সরকার।’
রোগীর চাপ বেড়ে গেলে দেশের হাসপাতালগুলো সামাল দিতে পারবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে
বামপন্থি এই রাজনীতিক বলেন, ‘এমন সময়ে সম্পদের বণ্টন উল্টো হওয়ার কথা ছিল। রাষ্ট্রের ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার বাড়ার কথা। সমতা আসার কথা। তা হয়নি। বরং দিন দিন বৈষম্য বেড়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে চরমে। সমাজ ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। কোনো প্রকার বিবেচনা না করে লকডাউন দেয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা পথে বসে যাচ্ছে। যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তাতে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে। কৃষক, উদ্যোক্তারা চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন।’
স্বাস্থ্যসেবার প্রসঙ্গ তুলে সেলিম বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি অযৌক্তিক উন্নয়ন না করে স্বাস্থ্যখাতের মান কয়েকগুণ বাড়ানো হোক। আমরা অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কথা বলছি। পরিস্থিতি বেসামাল হতে পারে, তা বিশেষজ্ঞরা বহুবার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ভারতের পরিস্থিতি দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘চীন করোনার ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তাব দিল বাংলাদেশ সরকারকে। ভারতের কারণে সরকার সে প্রস্তাবে সাড়া দিল না। অথচ ভারত এখন নিজেই গভীর সংকটে। অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে সেখানে। সরকার ৯৯ শতাংশ মানুষের কথা ভাবছে না। সংকট বাড়লে প্রাইভেট বিমান ভাড়া করে ১ শতাংশ মানুষ যেন বিদেশ গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে, তার সুযোগ করে দিচ্ছে। এখনো সময় আছে। চিকিৎসা খাতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এএসএস/এইচএ/এমএস