ইয়র্কারের জবাব স্লোয়ার-কাটার কিন্তু লংকান জার্সির জবাব?


প্রকাশিত: ০৬:১৫ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আজ মিরপুরে মালিঙ্গা না মুস্তাফিজ, এমন যুদ্ধ যুদ্ধ আবহ। শের-ই বাংলার পেস-বান্ধব উইকেট উত্তাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। ক্রিকেট মাঠে বহু যুদ্ধ জয়ের নায়ক ৩২ বছর বয়সী বর্তমান লংকান অধিনায়ক ল্যাসিথ মালিঙ্গা আর তারই প্রতিপক্ষ মাত্র কদিন হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা ২০ বছরের তরুণ বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। মালিঙ্গার শানিত অস্ত্র তার সাপের ছোবলের মত ইয়র্কার। মুস্তাফিজের  খ্যাতি স্লোয়ার-কাটার স্পেশালিস্ট হিসাবে। ক্রিকেটীয় দিক থেকে বিবেচনা করলে মালিঙ্গা-মুস্তাফিজ দ্বৈরথ আজকের ম্যাচের বড় আকর্ষণ। সব ঠিক আছে কিন্তু আরেকটা হিসাব যে কষতেই হচ্ছে।  হ্যা, লংকান জার্সি।  শ্রীলংকা দলে কারা খেলছে এর চেয়েও বড় বাঁধা লংকান জার্সিকে অতিক্রম করা। আজ সেই চ্যালেঞ্জ মাশরাফিদের।

সর্বশেষ টি২০ বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলংকা দলটির তুলনায়  বর্তমান শ্রীলংকা দলটি অনেক বেশি সাদামাটা। দুই রান মেশিন মাহেলা জয়াবর্ধনে-কুমার সাঙ্গাকারা এখন সাবেক। সেরা সময় পেরিয়ে এসেছেন টি২০ স্পেশালিস্ট তিলকরত্নে দিলশান। সর্বশেষ ছয় টি২০ ম্যাচে একটি হাফসেঞ্চুরিও পাননি দিলশান। এদের শূন্যস্থান পূরণে সেভাবে প্রতিভাও উঠে আসেনি।  বল হাতে মালিঙ্গা এখনও দলটির মূল ভরসা।  তবে মালিঙ্গাও পেছনে ফেলে এসেছেন তার সেরা সময়কে। যদিও ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে চলতি এশিয়া কাপে আরব আমিরাতের বিপক্ষে সেই পুরনো ঝলক দেখিয়েছেন এই ইয়র্কার স্পেশালিস্ট। তবে একা মালিঙ্গার পক্ষে দলের সব ঘাটতি পূরণ করাটা কতখানি সম্ভব সে প্রশ্নই থেকেই যায়। কিন্তু অনুসিদ্ধান্তটা এভাবে টানলে মোটেও সুবিচার করা হবে না লংকান জার্সির প্রতি।

উপমহাদেশীয় ক্রিকেটে পেশাদারিত্বে লংকানদের ধারে-কাছে কেউই নাই। ফিফটি-ফিফটি ম্যাচে উপমহাদেশের কোনো দলের পক্ষে লংকানদের টেক্কা দেয়া শুধু কঠিন নয় প্রায় অসম্ভব। ধরা যাক ২০১৪ সালের চট্রগ্রামের ওই ম্যাচটির কথাই। চট্রগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওই ম্যাচ জিততে শেষ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩ রানের। উইকেটে ছিলেন ইনফর্ম এনামুল হক বিজয়। ৫৮ রানে খেলছিলেন তিনি।  শেষ বলের লড়াইয়ে থিশারা পেরেরার  কাছে হেরে গেলেন এনামুল। রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন এই বাঁহাতি। রুদ্ধশ্বাস ম্যচে ২ রানে জিতল লংকানরা। এমনি ফিফটি-ফিটি স্নায়ুক্ষয়ী অসংখ্য ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়েছে দলটি।

লংকানরা নিজেরা খুব কম ভুল করে, সুযোগ নেয় অন্যের ভুলের। এটা অনুধাবনের জন্য বেশিদূর যাওয়ার দরকার নাই। আরব আমিরাতের বিপক্ষে সদ্য খেলা ম্যাচের দিকে তাকালে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে ওঠে।  আমিরাতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা দুদলই ছিল বিবর্ণ। শ্রীলংকার সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ১২৯ রান আর বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৩৩ রান। স্কোরবোর্ড জানাচ্ছে আমিরাতের বিপক্ষে প্রায় একই ধরনের ব্যাটিং করেছে দুদল। তবে একটা জায়গায় কিন্তু দুদলই ছিল আলাদা। লংকানরা ৮ উইকেট হারিয়েছে ঠিকই কিন্তু একটিও রান আউটের শিকার হয়নি তারা। আর বাংলাদেশ ইনিংসে রান আউটের শিকার হয়েছেন দুজন। দুর্দান্ত খেলা মোহাম্মদ মিঠুন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করে হয়েছেন রান আউটের শিকার। আর শেষ দিকে রান আউট হয়েছেন তাসকিন আহমেদ। এটা সুস্পষ্ট যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কার্যসিদ্ধি হাসিলে লংকানদের জুড়ি মেলা ভার।

মালিঙ্গার শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও বলা যায় বর্তমান লংকান দলের দিকে তাকালে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে বাংলাদেশের। বর্তমান শ্রীলংকার দলের চেয়ে প্রমাণিত ক্রিকেটারের সংখ্যায় এগিয়ে টাইগাররা। ব্যাটিংয়ে সৌম্য সরকার-মুশফিকুর রহিম-সাকিব আল হাসান-সাব্বির রহমান-মাহমুদউল­াহ রিয়াদ সবাই আন্তর্জাতিক আসরে কম-বেশি আছেন সাফল্যের মধ্যে। বোলিংয়ে আরও উজ্জ্বল স্বাগতিকরা। সব কথার এক কথা বাংলাদেশ একটা ভারসাম্যপূর্ণ দল। কিন্তু বর্তমান লংকান ক্রিকেট দল একটা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেরা একাদশ তৈরিতে বেশ অদল-বদলও করছে তারা। ব্যাটিংয়ে দিনেশ চান্দিমাল-দিলশান-অ্যাঞ্জেলো  আর বোলিংয়ে মালিঙ্গার সঙ্গে কুলাসেকেরা-হেরাথ মূলত এই হচ্ছে বর্তমান লংকানদের প্রমাণিত শক্তি। বাকিরা লড়াই করছেন দলে  টিকে থাকার জন্য। তুল্যমূল্য বিচারে এমন লংকান দলের বিপক্ষে বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে মাশরাফিরা। কিন্তু দলটি যে শ্রীলংকা! সামর্থের শতভাগ প্রয়োগে দলটি নিখুঁত-নিখাদ।

এবারের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে মাশরাফিদের ম্যাচটির দিকে তাকাই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভার শেষে ভারতের স্কোরবোর্ডে ছিল ৫২/৩। ম্যাচে তখন একচেটিয়া রাজত্ব টাইগার বোলারদের। এ অবস্থায় ১০.২ ওভারের মাথায় তাসকিন আহমেদের বলে পয়েন্টে রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচ ছাড়লেন সাকিব। ক্যাচ ছাড়ার কথা না হয় বাদই দেয়া গেল। ভারতীয় স্কোরবোর্ডে ১০ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৫২। আচ্ছা প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ না হয়ে যদি শ্রীলংকা হত? তাহলে ভারতের এই রান কি ১৩০/১৩৫ পেরুতো? লংকাদের যতই  সাদামাটা দেখাক না কেন, আর ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা যত বড় মাপের হার্ডহিটার হোন না কেন, মিরপুরের এই পেসসহায়ক উইকেটে শেষ ১০ ওভারে ১১০/১২০ রান ওঠা সম্ভব ছিল না। বলাবাহুল্য ওই ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ১০ ওভারে ১১৪ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত।

লংকান জার্সিকে ছাপিয়ে উঠতে হলে যতটা সম্ভব নিখুঁত হয়ে উঠতে হবে মাশরাফিদের। একটি রান আউট, একটি ক্যাচ ছাড়া কিংবা পরিস্থিতি ভুলে উল্টা-পাল্টা শট খেলা সোজা ম্যাচ থেকে ছিটকে দেবে দলকে। কেননা ভুলের সুযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে উপমহাদেশের সেরা শিকারী যে শ্রীলংকা। হালে নামের ভার হয়ত দলটার কম কিন্তু পেশাদারিত্বের জায়গাটিতে যে তারা এখনও ঈর্ষণীয়। দীর্ঘ চর্চা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিখুঁত ক্রিকেট মিশে গেছে লংকানদের অস্থি-মজ্জায়-রক্তে।

nazmul-topon

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।