টাকা দিলেই নৌকার মাঝি!


প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৬

ছলে-বলে-কৌশলে নৌকাতে উঠতে পারলেই দরিয়া পার। নৌকা মানেই যেন বিজয়ের মালা গলায় পরা। নৌকা ঠেকায় এমন দুঃসাধ্য কার? নৌকার পালে সরকারের হাওয়া, আছে প্রশাসনেরও। নৌকা প্রতীক পেলেই যেন সাতখুন মাফ।

তাই নৌকা প্রতীক পেতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীরা যেন মরিয়া। কাকে টপকে কে পাবে নিশ্চিত বিজয়ের প্রতীক নৌকা, কাকে ম্যানেজ করে নৌকার হাল ধরা যায়-তাই নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। নির্বাচন নয়, ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতেই চলছে মরণপণ যুদ্ধ।

আর এমন প্রতিযোগিতার সুযোগ নিয়েই চলছে রমরমা মনোনয়ন বাণিজ্য। ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়ন বাণিজ্য এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। কোন প্রার্থী কত টাকায় নৌকার টিকিট পেলো, তাই এখন সবার মুখে মুখে।

ইউনিয়নে প্রার্থী মনোয়ননে অনেক বেশি বেসামাল হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। সর্বত্রই বিশৃঙ্খলা। বিদ্রোহের আগুনে অনেকটাই দিশেহারা তৃণমূল সংগঠন। বিদ্রোহী দমাতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও।

সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ৭৩৯টির মধ্যে ৩’শ-এর অধিক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বিদ্রোহীর সংখ্যা আরো বেশি বলে জানা গেছে। পরবর্তী দফাগুলোতেও এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দলীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেই ইউনিয়নে ঘর সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যোগ্যতা বা মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা বিবেচনা না করে শুধু অর্থের বিনিময়েই অনেককে নৌকার প্রার্থী বানানো হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে- আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা এসব মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কোথাও কোথাও বিশেষ সিন্ডিকেট তৈরি করে নেতারা মনোনয়ন বাণিজ্যের অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ একক কর্তৃত্ব বলেই মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। মনোনয়ন বাণিজ্যের অর্থ পকেটে পুরছেন অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রীও।

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জান গেছে, অনেক ত্যাগী এবং আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও অর্থেও কাছে তারা হেরে যাচ্ছেন। তাদের অনেকেই বিদ্রোহী হয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে নৌকা প্রতীক দেয়া হচ্ছে সদ্য বিএনপি-জামায়াত থেকে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগ নামধারীদের। মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নিত্যদিন মানববন্ধন করছেন, সংবাদ সম্মেলন করছেন। সংঘর্ষেও লিপ্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিভিন্ন গ্রুপ।

গত উপজেলা নির্বাচন, সিটি নির্বাচন এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার ফলাফল থেকেই এমন রমরমা বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের হয়ে প্রার্থীরা মনে করছেন যেকোনোভাবে মনোনয়ন পেলেই জয় নিশ্চিত। এমন নিশ্চিয়তা দিয়েই আওয়ামী লীগের নেতারা প্রার্থী প্রতি ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘বাণিজ্যের অভিযোগ অমূলক নয়। প্রতিদিন কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ আসছে। কেন্দ্র থেকে চেষ্টা করেই বিদ্রোহীদের দমন করা যাচ্ছে না। অনেকেই মনে করছেন, নৌকা প্রতীক পেলেই বিজয়ী হতে পারেন। এমন আশা দিয়েই অনেক নেতা বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে তৃণমূল সংগঠন বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহববু-উল আলম হানিফের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেউ মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন অভিযোগ কেন্দ্রের কাছে নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা আরো বলেন, ‘দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগের নেতা। এর বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলেই তাকে বহিষ্কার, আর এটি দলের চূড়ান্ত সিদ্ধন্ত।’

এএসএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।