সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পরবর্তী হাতিয়ার ‘ফুল’

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৭ পিএম, ৩১ মে ২০২৩

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। কখনো বিভাগীয় সমাবেশ, কখনো রোডমার্চ, কখনো বা বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে চলছে দাবি আদায়ের আন্দোলন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের এই মেয়াদের শেষ বছরে এসে আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে চায় বিএনপি। সেক্ষেত্রে হরতাল, অবরোধ বা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি নিয়ে যেমন ভাবা হচ্ছে, পাশাপাশি আন্দোলনে নতুনত্ব আনার দাবিও আছে বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে। চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে নমনীয় এবং খরচ কম হয় এমন কর্মসূচি দেওয়ার দাবি তাদের।

বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের একটি অংশের মতে, চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়া পর্যন্ত যেন নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা থাকে এবং তারা যেন ক্ষতির শিকার না হয়, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এজন্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে ফুল পাঠানোর সংস্কৃতি চালু করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। শিগগির এ ভাবনা দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হবে। তবে দায়িত্বশীলরা বলছেন, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে।

আরও পড়ুন>>> তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না: ফখরুল

কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের নেতাকর্মীরা হামলা, মামলা, গ্রেফতার, হয়রানিতে বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় চূড়ান্ত কর্মসূচির আগে বড় ধরনের কর্মসূচি দিলে সেক্ষেত্রে নেতাকর্মীরা পুলিশি হয়রানির শিকার হতে পারেন। পাশাপাশি শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতিসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগেই নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। তাছাড়া রোডমার্চ, লংমার্চের মতো কর্মসূচি অনেক ব্যয়বহুল। তিনদিনের একটা বিভাগীয় কর্মসূচিতে ন্যূনতম খরচ দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে ১০ বিভাগের কর্মসূচিতে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা খরচ হবে। চূড়ান্ত কর্মসূচির আগে বিপুল অংকের এই অর্থ খরচ না করে সেসময় খরচ হলে আন্দোলন আরও বেগবান হবে।

সূত্রমতে, কম খরচের নমনীয় কর্মসূচির উদাহরণ হিসেবে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ফুল পাঠানোর কর্মসূচির প্রস্তাব করা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনে সমর্থন চেয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। স্মারকলিপির সঙ্গে ফুল দেওয়ার কথাও ভাবছেন বিএনপির অনেক নেতা।

আরও পড়ুন>>> ‘তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই আসে না’

তারা বলছেন, একইভাবে বিভাগীয় নেতারা বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের ডিআইজিকে ফুলসহ স্মারকলিপি দেবেন। জেলার নেতারা ফুল ও স্মারকলিপি দেবেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে। উপজেলা ও থানা পর্যায়ের নেতারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এবং ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা ইউনিয়ন পরিষদে ফুলসহ স্মারকলিপি দেবেন।

তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে এসে ফুল দেওয়ার মতো নমনীয় কর্মসূচি দেওয়ার বিপক্ষে বিএনপির অনেক নেতা। তাদের মতে, যেখানে নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হচ্ছেন, রাজপথে রক্ত দিচ্ছেন- সেখানে ফুল দেওয়ার মতো কর্মসূচি ভাবার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন>>> ঈদের পর কি আন্দোলন আরও চাঙা করবে বিএনপি?

এ বিষয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এখন যুদ্ধের ময়দানে আছি। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা, গ্রেফতারের শিকার হচ্ছেন। পুলিশের নির্যাতন আর ক্ষমতাসীনদের হামলায় রক্তাক্ত হচ্ছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। যেখানে আমরা রক্ত দিচ্ছি সেখানে ফুল দেওয়ার মতো কর্মসূচি ভাবার সুযোগ নেই। এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা রাজপথে থাকতে প্রস্তুত।

দলের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে আমরা যখন সমাবেশ ডেকেছিলাম, তখন তিন থেকে চারদিন আগে হরতাল ডাকে সরকার (পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো)। ওই সময় পুলিশ-আওয়ামী লীগ সবাই মাঠে ছিল। এসব বিবেচনায় আগের মতো গতানুগতিক কর্মসূচি না দিয়ে আন্দোলনে নতুনত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন>>> বিএনপির ‘ভুল’ ভাঙার অপেক্ষায় জামায়াত

তিনি বলেন, সরকারের যাতে যন্ত্রণা হয় সেরকম কর্মসূচি দেবে বিএনপি। আমরা চাচ্ছি আরও বেশি মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে। বেশি মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে একসময় রাজধানীতে আমাদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে চাই। আমরা এখন আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপের দিকেই এগোচ্ছি।

চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জাগো নিউজকে বলেন, হরতাল, অবরোধ, ঢাকা ঘেরাওসহ যে কোনো কর্মসূচি আসতে পারে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ১৪৪ দিনের লাগাতার হরতালের কথা নিশ্চয়ই দেশবাসীর মনে আছে। এই স্বৈরাচার সরকার হটাতে আমরা ওই ধরনের কর্মসূচিতে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আরও পড়ুন>>> বিএনপির আন্দোলনের সময়-অসময়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে আছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি এখন আন্দোলনে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা দাবি ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখছে না দেশপ্রেমিক সব শক্তি। এই দাবি আদায়ে আগামীতে যে ধরনের কর্মসূচি প্রয়োজন তা দেওয়া হবে।

কেএইচ/কেএসআর/এমএস

রোডমার্চ, লংমার্চের মতো কর্মসূচি অনেক ব্যয়বহুল। তিনদিনের একটা বিভাগীয় কর্মসূচিতে ন্যূনতম খরচ দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। চূড়ান্ত কর্মসূচির আগে বিপুল অংকের এই অর্থ খরচ না করে সেসময় খরচ হলে আন্দোলন আরও বেগবান হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনে সমর্থন চেয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও আইজিপিকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। স্মারকলিপির সঙ্গে ফুল দেওয়ার কথাও ভাবছেন বিএনপি নেতারা।

আমরা চাচ্ছি আরও বেশি মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে। বেশি মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে একসময় রাজধানীতে আমাদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে চাই। আমরা এখন আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপের দিকেই এগোচ্ছি।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।