‘সরকার পতন আন্দোলনের কৌশলে ভুল থাকতে পারে’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একদিন এগিয়ে যাচ্ছে মানে বাংলাদেশ একদিন পিছিয়ে পড়ছে, এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেছেন, জনঅধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির আন্দোলন সফল হবেই।

বিএনপির নেতাদের মুক্তি, আন্দোলন প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয় রুমিন ফারহানার।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুক্তি মিলছে। কীভাবে দেখছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের যেসব মামলায় আটক করা হয় তার সবই ছিল মিথ্যা, ভিত্তিহীন। ইচ্ছাকৃত সাজানো মামলায় নেতাদের আটক করা হয়, যাতে নির্বাচনের আগে আন্দোলন দমানো যায়। বিএনপি যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই সরকার এসব মামলা সাজিয়েছিল। যার পেছনে অন্য কারণ বা ঘটনা ছিল না।

আরও পড়ুন

বিএনপির আন্দোলনে নেতাকর্মীরা হতাশ। মানুষও বিরক্ত কি না? রুমিন বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি হতাশই হতেন তাহলে ১৭ বছর ধরে নির্মম নির্যাতন সহ্য করে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে টিকে থাকার কথা নয়। বিএনপি মানেই তো গুম হবে, হত্যার শিকার হবে, মিথ্যা মামলায় জেল হবে। চাকরি হবে না, ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবকিছু জানার পরেও একজন কর্মী বিএনপি থেকে সরে গেলো না। বরং আমাদের প্রতিটি কর্মসূচিতে আগের থেকে মানুষ বেশি সংখ্যায় সম্পৃক্ত হয়েছে। সুতরাং, হতাশ হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

‘আমরা জানি গণতন্ত্র পুনরায় উদ্ধার করা বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইটা সহজ বিষয় নয়। একটি স্বৈরাচারী সরকার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে টিকে থাকে এবং তাদের সঙ্গে লড়াই কঠিন ও দীর্ঘ। এই লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এক বিন্দুও সরে যাইনি।’

 

একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কিছু নিয়মনীতি আছে। এগুলো অনুসরণ করে আন্দোলন করলে সফল হওয়া সম্ভব। সরকার পতন আন্দোলনের কৌশলে ভুল থাকতে পারে। তবে এই ভুলগুলো কাটিয়ে ওঠা আমাদের জন্য তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

 

বিএনপি সরে যায়নি ঠিক, তাতে সরকারের কিছুই যায়-আসে না। তাহলে বিএনপির এ আন্দোলন বা ঐক্যবদ্ধ থাকার সফলতা কী?

‘আমার দাবি সঠিক ও গণমানুষের তা প্রমাণ করতে পেরেছি। এটি আমাদের প্রথম সফলতা। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে ঠিক, কিন্তু মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। সরকারের পায়ের তলায় কোনো মাটি নেই। আওয়ামী লীগের পতন হলে বোঝা যাবে তারা দলটিকে কীভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের কাছে আসলে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অস্ত্রের জোরে টিকে আছে।’

আওয়ামী লীগের পতনের কথা বলছেন। কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের কারণে সরকারের পতন হবে এটিও তো মানুষ আর বিশ্বাস করে না? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন আওয়ামী লীগের পতন হবে এ বিশ্বাস করানোর দায়িত্ব আমাদের। সরকার ফেল করবে এটি হয়তো দৃশ্যমান করতে পারেনি। একটি স্বৈরাচার সরকারকে ফেলে দেওয়া মুখের কথা নয়। প্রতিটি মানুষকে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করার বিষয় আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে সফল হবোই।’

আন্দোলনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। মানুষ সরকার পতনের আন্দোলনে আপনাদের প্রতি আস্থা রাখবে কেন? রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মানুষ আস্থা রাখবে এ কারণে যে আমরা মানুষের জন্য আন্দোলন করছি, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। একজন নাগরিকের মৌলিক ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করছি। এ কারণেই মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবে।’

আপনার কি মনে হয় বিএনপির আন্দোলনে ত্রুটি ছিল কিংবা আছে? জবাবে তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আর ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এক নয়। আন্দোলনের কিছু নিয়মনীতি আছে। এগুলো অনুসরণ করে আন্দোলন করলে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সফল হওয়া সম্ভব। কিন্তু এই সরকার যেহেতু টিকে আছে পুলিশ প্রশাসনের ওপর ভর করে তাই তাদের পতনের আন্দোলন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হওয়া কঠিন। সেই অর্থে আন্দোলনের কৌশলে ভুল থাকতে পারে। তবে এই ভুলগুলো কাটিয়ে ওঠা আমাদের জন্য তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

বিএনপির সমমনা অন্য রাজনীতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে কী বলবেন? এ প্রশ্নে রুমিন বলেন, ‘আমি আসলে অন্য রাজনৈতিক দল নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমি মনে করি না সরকারবিরোধী দলগুলোর কোনো ব্যর্থতা আছে। সবাই তার সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সবটাই দিয়েছে। তবে অধিকার আদায়ের লড়াইটা তো ১৭ কোটি মানুষের। আপনার অধিকার আদায়ে আমি বারবার রক্ত দিলে সার্বিক সফলতাটা আসে না।’

ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছেন। আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেন? ‘এই মুহূর্তে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আমার কাছে কোনো ধারণা নেই। রূপরেখা নীতিনির্ধারকরা নির্ধারণ করবেন।’

খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য ইতিহাসের পাতায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাদের ত্যাগ ও অবদান মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। মানুষ হয়তো নানা কারণে হতাশ, দুঃখে আছে। কিন্তু দিনশেষে আবার খালেদা জিয়ার নীতির ওপরই ভরসা রাখছে। তারেক রহমানের আহ্বানেই সাড়া দিচ্ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসই আমাদের ইতিহাস।’

এএসএস/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।