আওয়ামী লীগই প্রভুদের মোসাহেবি করে: রিজভী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৬ পিএম, ০৩ মার্চ ২০২৪

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ তাদের প্রভুর দ্বারে দ্বারে শুধু নয়, বরং পদতলে বসে মোসাহেবি করেছে, আর দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অর্ঘ্য হিসেবে তুলে দিয়েছে প্রভুর দরবারে।

‘জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখাত হয়ে বিএনপি নেতারা তাদের বিদেশি প্রভুদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে’ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী এসব কথা বলেন।

রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব ডিমেন্সিয়াতে নয়, তিনি এ্যামেন্সিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন। উনি সম্পূর্ণ ভুলে গেছেন, ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ভূমিকার কথায় যা ছিল একটি দেশের অভ্যন্তরে সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল। কারণ তাদের প্রভু মানে বলেই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এই হস্তক্ষেপের সুযোগ দিয়েছিলেন এবং এখনও দিচ্ছেন। এই ঘটনা প্রমাণিত হয়, আওয়ামী লীগ প্রভুদের নিকট কতটুকু নতজানু। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়ার এক ভয়ানক দৃষ্টান্ত। এটি নিজ স্বার্থে দেশের অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া। এবারও ডামি নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী প্রভুদের অসৎ তৎপরতায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের ভোটাধিকারকে থোড়াই কেয়ার করে।

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন ‘বর্তমানে দেশে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে, বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপি নেতারা মিথ্যাচার করছে’। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার কি মনে আছে যে, শেখ হাসিনা কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন ‘প্রতিদিন একটু একটু করে লোডশেডিং দিতে বলেছি’। কেনো বলেছিলেন, আসলে বিদ্যুতের কি দশা সেটি ডামি প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই প্রকাশ পায়। সেতুমন্ত্রীসহ ডামি সরকারের মন্ত্রীদের অনর্গল মিথ্যা বয়ান মূলত, অচল, অবাস্তব, উপেক্ষণীয় এমনকি বর্জনীও বটে। এ ধরনের বয়ান জনগণের প্রতি তাদের নির্দয় মনোবৃত্তিরই বহিঃপ্রকাশ।

রিজভী বলেন, অগণতান্ত্রিক শক্তির দোসররা কখনোই সত্যের পুজারি হতে পারে না। অবৈধ ক্ষমতা, সম্পদ পাচার, আর্থিক খাতে হরিলুট, দুঃশাসনের পরিসর যারা প্রতিদিন প্রসারিত করছে মিথ্যার সঙ্গে তাদেরই অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। যাদের একজন মন্ত্রীর বিদেশে দুইশো মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি থাকে তাহলে সেই সরকারের অন্য মন্ত্রীরা যে, চোখে রঙিন চশমা নিয়েই রাজত্ব করছেন তা বলাই বাহুল্য।

তিনি বলেন, ঢাকাসহ মফস্বলে ভয়াবহ লোডশেডিং, এর ওপর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে বাসা ভাড়ার চেয়েও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় অনেক বেশি। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ক্ষমতার স্বর্গে বাস করেন বলে বিদ্যুতের প্রকৃত চিত্র জানতে পারেন না। বিদ্যুতের নিচের দিকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি আর উপরের দিকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি কি চরম বৃদ্ধি নয়? অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর এতে কোনো যায় আসে না। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে মধ্যম আয় ও নিম্ন আয়ের মানুষরা যে দিশেহারা সে খবর ক্ষমতার মোহে অন্ধ ওবায়দুল কাদের সাহেবদের জানা নাও থাকতে পারে। দেশের মানুষ তো শতভাগ বিদ্যুৎ পায় না। ঢাকা শহরে সকাল-বিকাল লোডশেডিং চলছেই। মফস্বল এলাকা তো অন্ধকারে ডুবে আছে।

রিজভী বলেন, সেতুমন্ত্রী আরও বলেছেন ‘বিএনপি নেতারা একদিকে প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন’।

গণবিরোধী গণশত্রুরা দোসররা কখনোই গণতান্ত্রিক শক্তির মিত্র হতে পারে না। সত্য ভাষণ ও সত্য লেখনির জন্য অনেক সাংবাদিক আজ দেশ ছাড়া, শারীরিকভাবে অত্যাচারিত এবং গুমের শিকার হয়েছেন অনেকেই। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, দৈনিক দিনকালসহ অসংখ্য অনলাইন পত্রিকা ও নিউজ পোর্টাল। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশ এক পীড়িত ও মুর্ছিত দেশ। ওবায়দুল কাদের সাহেবদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উগান্ডার সাবেক রাষ্ট্রপতি ইদি আমিনের একটি বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়। একবার ইদি আমিনকে সাংবাদিকরা তার দেশের ‘ফ্রিডম অব স্পিচের’ অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে ইদি আমিন বলেন, ‘আমার দেশে কথা বলার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু কথা বলার পর এর স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিতে পারি না।‘

ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কি ভুলে গেছেন যে, আপনার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বেশী কথা বললে সব বন্ধ করে দিবো। আওয়ামী লীগ আত্মপ্রত্যয়হীন, যুক্তিবিমুখ, কুৎসিত কথার শর নিক্ষেপকারী একটি দল। মিথ্যা বলাই যাদের জীবিকা উপার্জনের উপায়। এরা দেশ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরুপে উচ্ছেদ করেছে।

রিজভী আরও বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি নাকি ইসরাইলের দোসর এবং গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বরাবরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তা আদিযুগের গল্পের মতো। ওবায়দুল কাদের সাহেব টাটকা মিথ্যা কথা বলেন আর হাছান মাহমুদ সাহেব বাসী মিথ্যা কথা বলেন। সারাদেশের মানুষ জানে, গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের বিরোধী দল নিধনের জন্য ইসরাইল থেকে স্পাইওয়্যার কেনা হয়েছে, যা দিয়ে মোবাইল ফোনে আড়িপাতা সম্ভব। আওয়ামী লীগের ক্ষমতালাভের আগে পরে এরা কখনোই ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করেনি। এরা মুখে যা বলে, করে তার বিপরীত। হঠাৎ হাছান মাহমুদ সাহেব এ ধরনের কথা বলা শুরু করলেন কেন ? মনে হচ্ছে ডামি সরকার নিজের ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছে এবং তলে তলে বিপদ আঁচ করতে পারছে। এদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা এড়াতেই ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ সাহেবরা অকথ্য, অসত্য হাইপার-প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ইমতিয়াজ বকুল প্রমুখ।

কেএইচ/এসএনআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।