মিশরে ভালো নেই বাংলাদেশি শ্রমিকরা

বন্দরনগরী আলেক্সান্দ্রিয়া, পোর্ট সাঈদ, ইসমায়েলিয়া, আশরা রামাদান ও ঈল-মার্গসহ মিশরের বিভিন্ন শহরের পোশাক শিল্পে কাজ করেন বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে অন্তত ১০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। কঠোর পরিশ্রম, সময়মতো কাজে যোগদান ও বাড়তি সময় নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে দেশটিতে।
২০১৬ সাল থেকে মিশরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ থাকলেও দেশের বিভিন্ন দালালচক্র অবৈধ উপায়ে অন-অ্যারাইভ্যাল ভিসায় পাঠাচ্ছে শতশত দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক। কায়রোর বাংলাদেশ দূতাবাস এদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রমিক ভিসার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে বার বার কথা বললেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।
মিশরের পোশাক কারখানায় বাংলাদেশি শ্রমিক-ছবি জাগো নিউজ
প্রবাসে আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ দূতাবাস। শ্রমিক দিবসে আমাদের চাওয়া, শ্রমিকরা কোনো দালালের নামে অভিযোগ দিলে সেটা আমলে নিয়ে অসহায় শ্রমিকদের সহযোগিতা করে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে দূতাবাস যেন আইনি ব্যবস্থা নেয়।
বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার এই দেশটিতে পোশাক শিল্পে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা। দেশ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মিশরে আনা কাজ জানা বা দক্ষ শ্রমিকদের কপালে কোনো কোনো কারখানায় কাজ জুটলেও অদক্ষ শ্রমিকদের কাটাতে হয় দুঃসহ জীবন।
দালালের প্রলোভনে অনেকে মিশরে আসেন-ছবি জাগো নিউজ
ইল-মার্গে একটি কফিশপে বসে কথা হয় ৮ মাস আগে মিশরে আসা টাঙ্গাইলের সারোয়ার হোসাইনের সঙ্গে। তিনি জানান, রাব্বি নামে আশরা রামাধানের এক বাংলাদেশি দালাল মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তার পোশাক কারখানায় ৩৫ হাজার টাকা বেতনে শ্রমিকের কাজ দেবে বলে নিয়ে এসেছিলেন মিশরে। বিনিময়ে তার হাতে তুলে দিতে হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখানে আসার পর দেখলাম তার কোনো কারখানা নেই। পোশাক শিল্পের কাজ না জানা থাকায় গত আট মাসে কোনো কাজও জোগাড় করতে পারিনি। দেশ থেকে কিছু টাকা এনে মানবেতর জীবনযাপন করে চলছি। এখন ইল মার্গের সুলতান নামে আরেক মাফিয়া সদস্য আমাকে দেশে যাওয়ার টিকিট দিচ্ছে, বিনিময়ে নিয়ে যেতে হবে তার একটি লাগেজ।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ থাকলেও দেশের বিভিন্ন দালালচক্র অবৈধ উপায়ে অন-অ্যারাইভ্যাল ভিসায় পাঠাচ্ছে শতশত দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক। কায়রোর বাংলাদেশ দূতাবাস এদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রমিক ভিসার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে বার বার কথা বললেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।
রাজধানী কায়রোর অদূরে আশরা রামাধান এলাকায় কর্মরত কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ শরীফ মিয়া জানান, এদেশে অবস্থানরত মাফিয়া অর্থলোভী মানব পাচারকারী দালাল জহির-মিনা দম্পতির খপ্পরে পরে মিশর এসেছিলাম ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। দালাল নামের সেই কসাই মিশরে আসার পর কোনো কাজ দিতে পারেনি, ছুড়ে ফেলে দিয়েছে অকূল সাগরে। শেষ হয়ে গেছে সোনালি স্বপ্ন দেখা একটি সুখী পরিবার আর সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। তাছাড়াও এমন কিছু পরিবার বা দালাল মিশরে বসবাস করে যারা এখন লিবিয়ার মতো মিশরেও ইউরোপে নেওয়ার নামে দেশ থেকে লোক এনে গেইম টর্চার সেল রুমে আটকিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করে।
মিশরের কারখানায় কর্মব্যস্ত শ্রমিক-ছবি জাগো নিউজ
- আরও পড়ুন
- শ্রমিকদের কতটা কল্যাণ করছে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন?
- শ্রমিকদের জীবনচক্র আটকে আছে চা বাগানের গণ্ডিতে
তিনি আরও বলেন, প্রবাসে আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ দূতাবাস। শ্রমিক দিবসে আমাদের চাওয়া, শ্রমিকরা কোনো দালালের নামে অভিযোগ দিলে সেটা আমলে নিয়ে অসহায় শ্রমিকদের সহযোগিতা করে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে দূতাবাস যেন আইনি ব্যবস্থা নেয়।
এসএইচএস/এএসএম