মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি গবেষক বৃস্টি খাতুন
ভবিষ্যতের কৃষি হবে কৃষক-নেতৃত্বাধীন এবং পরিবেশবান্ধব

বৃস্টি খাতুন, একজন বাংলাদেশি গবেষক যিনি কৃষি খাতে বিশেষজ্ঞ, বর্তমানে মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফরি স্যাচস সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টে টেকসই উন্নয়নে পিএইচডি (ডক্টর অফ ফিলসফি) অধ্যয়ন করছেন।
তিনি কাজ করছেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ দুই শতাংশ বিজ্ঞানীর একজন, অধ্যাপক দাতো’ ড. আগামুথু-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে।
প্রায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে, বৃষ্টি খাতুন মালয়েশিয়ার প্রথম বাংলাদেশি নারী কৃষক হিসেবেও স্বীকৃত। তিনি তাত্ত্বিক গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিক ও টেকসই পথে উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন।
একটি জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশজুড়ে একটি বিস্তৃত কৃষক-সংলগ্ন সচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নেন, যেখানে তিনি সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, কর্মশালা পরিচালনা করেন এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করেন। তার গবেষণার মূল বিষয় হলো প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্যতা এবং কৃষকদের সামাজিক আচরণ, বিশেষ করে কীভাবে বিশ্বাস, সচেতনতা এবং সাংস্কৃতিক অভ্যাস টেকসই কৃষিপদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতায় প্রভাব ফেলে।
বৃস্টি খাতুন বলেন, এটা শুধুমাত্র প্রযুক্তি প্রয়োগের বিষয় নয় বরং কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার পেছনের মানুষ ও বাস্তবতা বোঝার বিষয়।
এই গবেষণা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায়, লুমিনাস গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে তার একটি আনুষ্ঠানিক গবেষণা সহযোগিতা গড়ে ওঠে। এই অংশীদারত্বের লক্ষ্য হলো মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই কৃষি ইনপুট বিস্তৃত করা এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা হ্রাসে সহায়তা করা।
টেকসই কৃষি ও কৃষক সম্মাননা: গত ২২ জুন, ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় ‘টেকসই কৃষি ও কৃষক সম্মাননা ২০২৫’, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান যা শুধু টেকসই কৃষিকে উৎসর্গ করা হয়েছে। লুমিনাস গ্রুপ লিমিটেড আয়োজিত এই ফোরামটি ‘মাটি বাঁচাও, কৃষি বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ এই স্লোগানের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা ঘটায়।
এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে সারাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে ৩ হাজারেরও বেশি কৃষক, গবেষক, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, কৃষি উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারক অংশগ্রহণ করেন। এই ফোরামের মাধ্যমে টেকসই কৃষিকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যেখানে মাটির স্বাস্থ্য, কৃষকের ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু-সহনশীল উদ্ভাবনকে কৃষি উন্নয়নের কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ৭৬ জন অসাধারণ কৃষককে সম্মাননা প্রদান, যারা টেকসই কৃষি, জৈব চাষ, পুনর্জননশীল পদ্ধতি এবং হাইব্রিড প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন নারী কৃষি নেত্রী, জৈব পদ্ধতির অগ্রদূত এবং পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবকেরা।
ফোরামে তুলে ধরা হয় বাস্তবায়নযোগ্য নানা উদ্যোগ, যেমন জৈব উপাদান ব্যবহার, পুষ্টি পুনর্ব্যবস্থাপনা, স্বল্প খরচে উদ্ভাবন এবং জলবায়ু সহনশীল চাষ পদ্ধতি, যা মাটি রক্ষা করে ফলন বাড়াতে সহায়তা করে। কৃষকদের শুধুমাত্র উৎপাদক হিসেবে নয়, টেকসইতার রূপান্তরক হিসেবে সম্মান জানানো হয়।
বৃস্টি খাতুনের গবেষণা ও মাঠপর্যায়ের কাজ এই ফোরামে বিশেষ গুরুত্ব পায়। তিনি আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি ও টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরামে অংশগ্রহণ করছেন। পাশাপাশি, তিনি ‘থ্রি জিরোস ক্লাব’-এর সক্রিয় সদস্য যা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অনুপ্রেরণায় গঠিত একটি বৈশ্বিক আন্দোলন, যার লক্ষ্য শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ অর্জন। তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য টেকসই কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। আর এর মাধ্যমে এশিয়ান কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী মডেল তৈরি করা।
‘বাংলাদেশ টেকসই কৃষিতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত,’ বলেন বৃস্টি খাতুন। এই অনুষ্ঠান কেবল শুরু; ভবিষ্যতের কৃষি হবে কৃষক-নেতৃত্বাধীন এবং পরিবেশবান্ধব।
এই পথপ্রদর্শক উদ্যোগের মাধ্যমে, লুমিনাস গ্রুপ লিমিটেড বাংলাদেশের কৃষিকে সহনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পুনর্জননযোগ্য একটি কৃষি ব্যবস্থায় রূপান্তরের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বৃস্টি খাতুনের মতো গবেষকদের নেতৃত্বে এবং দেশের প্রান্তিক কৃষকদের স্বীকৃতির মাধ্যমে, বাংলাদেশ আজ জলবায়ু-সহনশীল এবং কৃষক-কেন্দ্রিক একটি টেকসই কৃষি ব্যবস্থার পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে।
এমআরএম/এমএস