বাবা তোমায় খুব মনে পড়ে

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক সাইপ্রাস থেকে
প্রকাশিত: ০৭:০৫ পিএম, ২১ জুন ২০২০

মাহাফুজুল হক চৌধুরী 

পৃথিবীর সব বাবা সন্তানের কাছে বেহেশত সমতুল্য। আবার প্রতিটা সন্তানই তার পিতার কাছে একেকটা হীরের টুকরো। তবুও সব বাবারা তাদের সন্তানদের প্রতি যে দায়িত্ব তা ঠিকমতো পালন করে না। অনেকেই অনেক কারণেই করতে পারে না।

আবার কত বাবা সারাজীবন সন্তানের পিছু ছুঁটতে ছুঁটতে নিজের জীবন শেষ করে দেয়, কিন্তু বৃদ্ধকালে সন্তানের কাছে মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও হয় না।

বিজ্ঞাপন

আবার অনেক সন্তান নিজেই জানে না তার বাবা কে! অনেক সন্তানতো জন্মের পর থেকে বাবাকেই দেখেনি। যার মাধ্যমে তার জন্ম অথচ সে নিজেই জানে না তার পিতা কে, সে নিজেই দেখেনি তার প্রতিচ্ছায়ার মানুষটিকে, সবই বিধাতার ইচ্ছা।

যাইহোক, আমি আমার বাবার কথা বলি, কী পেয়েছি আমি বাবার কাছে? কী দিয়েছে বাবা আমাকে? আমি কখনোই আমার বাবার আদর স্নেহ পাইনি। আমি কখনোই আমার বাবার শাসন পাইনি। আমি কখনোই আমার বাবার স্পর্শ পাইনি। বাবা সবসময় আমার কাছ থেকে দূরে থেকেছে। আমি ছোটবেলা থেকে ভালোমন্দ যাই করেছি কখনোই আমার বাবা আমাকে ডাক দেয়নি। আমার কোনো অর্জনে বাবার কোনো উৎসাহ পাইনি। আমার কোনো আপদে বিপদেও আমার বাবা আমার কোনো খোঁজখবর রাখেনি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অনেকেই সবসময় বাবার ক্ষমতা দেখায়। কোথাও কোনো সমস্যা হলে বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি সেই সুযোগ পাইনি। কারণ আমি জানি আমি ডাকলেও আমার বাবা আসবে না। আমি সারাদিন বাবার ক্ষমতা দেখিয়েও কোনো লাভ নেই কারণ আমার বাবা আমার কোন বিপদে এগিয়ে আসবে না।

Baba

অনেক ডেকেছিলাম ছোটবেলা থেকে বাবাকে কিন্তু তিনি আমার ডাকে কোনো কর্ণপাত করেননি। তবে লোকমুখে শুনতাম আমার বাবা এমন ছিলেন না। সবসময় মানুষের আপদে-বিপদে পাশে থেকেছে। আমার বাবা নিজের জীবনের চাইতেও মানুষের জীবনকে বেশি মূল্যায়ন করতেন। সমস্ত এলাকাজুড়ে একনামে পরিচিত ছিলেন আমার বাবা। এলাকার মানুষ আমার বাবাকে উপাধি দিয়েছিলেন ‘মহৎ এবং উদার’। আমরা যখন কোথাও গিয়ে বলতাম আমার বাবা অমুক তখন আলাদা একটা মূল্যায়ন পেয়েছি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মানুষ বলে আমার বাবা সবসময় ভালো কাজ করতেন। কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। কখনোই কাউকে ঠকানোর নজির নেই আমার বাবার জীবনে। নিজে ঠকে মানুষকে জিতিয়েছে সারাজীবন। সবার কাছে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, এতকিছুর পরও কেন বাবা আমাকে অবহেলা করেছেন?

উত্তর একটাই- তিনি আমাকে কিছুই করার সুযোগ পায়নি। কারণ আমার বয়স দুই বছর থাকা অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তিনি যুগের পর যুগ শুয়ে আছেন অন্ধকার কবরে। যেখানে আমি হাজার বার ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ পাইনি।

ছোটবেলা থেকে অনেক ডেকেছিলাম কিন্তু আমার ডাকে তার সাড়া মেলেনি। যখনই আমি মায়ের কোল ছেড়েছিলাম, হাঁটতে শিখেছিলাম, একটু একটু কথা বলা শুরু করেছিলাম তখনই বাবাহীন জীবন শুরু হয় আমার। তবে আফসোস নেই। কারণ পরপার থেকে তিনি আমাদের জন্য যা দোয়া করেছেন, দুনিয়ায় করে যাওয়া ভালো কাজগুলির বিনিময়ে আজ আমরা কোনকিছুর অভাব নেই। আল্লাহ কখনোই আমাদেরকে নিরাশ করেননি।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

জানি না পরপারে কেমন আছে বাবা। ৩ বছর আগে আমাদের গ্রামের কবরস্থানটাও নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। যেখানে আমাদের পুরো এলাকার শতশত মানুষের কবর ছিল। সাথে আমার বাবার কবরটাও চলে গেল। এখন আর স্মৃতি বলতে কিছুই রইল না। হয়তো পরপারে কোনো একদিন বাবার সাথে আবার দেখা হবে।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com