কোরিয়ার পানমুনজমের আনন্দঘন স্মৃতি
ওমর ফারুক হিমেল
চোখে চোখ, বুকে বুক, হাতে হাত যেন শান্তির দূত। মুক্তা ঝরানো ঝিনুকতুল্য হাসি দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিলেন, মুনজে ইন ও কিম জনং উন। বিরল, প্রাণপ্রাচুর্যপূর্ণ হাসির ঐতিহাসিক দৃশ্য দেখে কোরিয়ার ডিমারকেশন লাইনে যাওয়ার খুবই আগ্রহ জন্মেছিল আমার।
কোরিয়ার প্রবাস জীবনে অনেক জায়গায় ঘোরা হলেও হয়নি ঐতিহাসিক ডিএমজেডে। কোনো এক মনীষী বলেছিলেন,
দুই ব্যক্তি কখনও সন্তুষ্ট নয়। বিশ্বকে যে ঘুরে দেখতে চায় আর যে আরও জ্ঞান আহরণ করতে চায়। মজার বিষয় হচ্ছে আমার নতুন কিছু দেখার শখ, জানার আগ্রহ শৈশব থেকেই।
বিশেষ করে দর্শনীয়, তাৎপর্যপূর্ণ, ঐতিহাসিক স্থান। আগ্রহের জায়গা থেকে কোরিয়ায় দেখার অনেক জায়গার মধ্য DMZ একটি। যাব যাব করে আর যাওয়া হয়নি। কোরিয়ার কর্মময়, স্মার্ট জেলখানায় অনেক সময় কর্ম ব্যস্ততার কারণেই খেই হারিয়ে ফেলি।
মূলত সেজন্যই কখনো যাওয়া হয়নি, তবে কাজের ফাঁকে সবসময় মন মগজজুড়ে ঘুরত কখন যাব ডিএমজেডে। কোরিয়ার DMZ যেন একটি ইতিহাস একটি উপ্যাখ্যান, যেন পর্বময় টেলিফিল্ম।
বিশ্বের চোখ, একটি টানটান থ্রিলারপূর্ণ স্থান। বিশ্ব মিডিয়ায় মানুষ দেখেছে, ইতিহাসে শান্তির আহ্বানে উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার কিম জং উনের সীমানা টপকে দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রাখার দৃশ্য এখনো মানুষের মনন মগজে শিহরণ জাগায়। ভাবনায় দোলা দেয়।

আশা জাগানিয়া স্বপ্ন, বরফের বন্ধনে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের হাত ধরে কিম জং উনের সীমান্ত ডিঙিয়ে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের বার্তা শান্তির পথে হাঁটার পণ বিশ্ববাসীর নজর শুধু কাড়েনি, কেঁড়েছে আমার মত নগণ্য অধমের মনও। যেমনটি বলছিলাম, দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা, মধ্যবর্তী গ্রাম পানমুনজমে ‘শান্তির নীড়’ (পিস হাউস) ভবন দেখার ইচ্ছার কথা।
অবশেষে সে সীমান্তবর্তী এলাকা দেখার সুযোগ হলো। ঐতিহাসিক সে স্থান দর্শন করার সুযোগ হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল কোরিয়া ভ্রমণে আসলে, তখন দেখার সুযোগ মেলে। যেন ব্যাটে বলে ম্যাচিং। বিনম্র, মৃদুভাষী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অমীমাংসিত অসামরিক সীমান্তরেখা দর্শন নিসন্দেহে আনন্দের ও উপভোগ্য।
ঘুরতে ঘুরতে কথা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছিলেন, কোরিয়া আর যুদ্ধে লিপ্ত হবে না। কোনো দেশ চাই না তাদের শক্তি খর্ব হোক। অর্থনৈতিক লোকসান হোক। তবে এই কথা সত্য দক্ষিণ কোরিয়া সর্বত শান্তির পথেই হেঁটেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, আমি, মামুন ভাই, আজিজভাইসহ পুরো গাড়ির মেহমান সকলে হেঁটে হেঁটে সীমান্তবর্তী এলাকা দেখে দেখে মন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার নানাবিধ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছিলাম।
স্বস্তির ঢেঁকুর তুলে মন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেন। পানমুনজমে গেলাম, ঘুরে ঘুরে দেখলাম টোটালাটেরিয়ান উত্তর কোরিয়াও উদারনৈতিক কোরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা। পানমুনজমে দুই কোরিয়ার মাটি, পানি ব্যবহার করে একটি গাছ লাগিয়ে স্থায়ী শান্তির বার্তায় নতুন করে পথ হাঁটার ঘোষণা দিয়েছিল দুই কোরিয়া। সে উত্তর আর দক্ষিণের সীমান্তে স্বস্তি ফিরে আসুক। এই কামনায়।
চলবে....
এমআরএম/এএসএম