‘কানাডায় বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহ আছে, প্রয়োজন মানসম্মত ছবি’

আহসান রাজীব বুলবুল
আহসান রাজীব বুলবুল আহসান রাজীব বুলবুল , কানাডা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:০৯ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি চলচ্চিত্রনির্মাতা ও চলচ্চিত্রসেবীরা বলেছেন, কানাডার মূলধারায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে তুমুল আগ্রহ আছে। সেই আগ্রহকে কাজে লাগাতে মানসম্মত ছবির যোগান বাড়াতে হবে।

টরন্টো ফিল্ম ফোরামের ব্যানারে তারা মূলধারা ও বিভিন্ন কমিউনিটিতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছেন বলেও জানান।

স্থানীয় সময় সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তারা এ কথা জানান।

‘টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং বাংলা চলচ্চিত্র’ শীর্ষক এই আলোচনায় অংশ নেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি চলচ্চিত্রনির্মাতা এনায়েত করীম বাবুল, বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের সাবেক সভাপতি চলচ্চিত্রনির্মাতা আমিনুল ইসলাম খোকন এবং টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভাল-২০২১ এর ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তা ফায়েজ নুর ময়না।

এসময় বক্তারা বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান দূরাবস্থার জন্য সহায়ক নীতিমালার অভাব ও বিশ্বপরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের গুণগত উৎকর্ষতার দিকে মনোযোগ না দেওয়াকে দায়ী করেন। তারা বলেন, যেকেউ চাইলেই বিশ্বের যেকোনো দেশের চলচ্চিত্র দেখতে পারে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে কাহিনী এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে গুণগত মানের দিকে মনযোগী না হলে বাংলা চলচ্চিত্রকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনা যাবে না।

চলচ্চিত্রনির্মাতা এনায়েত করীম বাবুল বলেন, কানাডা বহুসংস্কৃতির দেশ। এখানে নানা দেশের নানা ভাষার মানুষ বসবাস করেন। তারা নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে চর্চায় রেখেই মূলধারার সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে চান।

তিনি আরও বলেন, ‘ভালো ছবি নিজেরা দেখবো, অন্যকে দেখাবো এবং ভালো ছবির নির্মাতাদের সহযোগিতা দেবো’ এই মূলনীতি নিয়েই টরন্টো ফিল্ম ফোরামের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন তারা ভালো বাংলা চলচ্চিত্রকে বহুসংস্কৃতির দর্শকদের সামনে তুলে ধরার কাজ করছেন।

চলচ্চিত্রনির্মাতা আমিনুল ইসলাম খোকন বলেন, এই মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভালে এবছর ৭১ জন কানাডিয়ান নির্মাতা তাদের সিনেমা নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রনির্মাতা এবং চলচ্চিত্র চর্চার প্রতি কানাডিয়ান নির্মাতাদের আগ্রহ বাড়ছে বলেই এত বিপুল সংখ্যক নির্মাতা বাংলাদেশিদের একটি আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রবাসে নতুন প্রজন্মের সামনে বাংলা চলচ্চিত্রকে তুলে ধরতে ফিল্ম ফোরামে একটি কোর্স শুরুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় তাদের সামনে তুলে ধরা হবে।

তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের চিন্তাটা সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। তারা সামনের দিকে তাকাতে চান। পুরো বিশ্বের তথ্য হাতের মুঠোয়, সেখানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের তথ্যটাও ঢুকিয়ে দিতে হবে।

ফয়েজ নুর ময়না বলেন, বাংলাদেশে, বাংলা ভাষায় ভালো চলচ্চিত্র হয়, সেটি আমরা কানাডিয়ানদের জানানোর চেষ্টা করছি। আমাদের কাজ হচ্ছে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং দর্শকের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়া। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম কানাডার বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের কাছে বাংলাদেশির চলচ্চিত্র তুলে ধরার পরিকল্পনাও নিয়েছে।

সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন, নেটফ্লিক্সের মতো আন্তর্জাতিক ওয়েব প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাংলাদেশি এবং বাংলা ভাষার কনটেন্ট তেমন দেখা যায় না। নেটফ্লিক্স টরন্টোয় নিজস্ব অফিস স্থাপন করছে। তারা এথনিক কনটেন্টের দিকে মনোযোগী হবে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রসেবীদের সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। বর্হিবিশ্বে বাংলা ভাষার এবং বাংলাদেশ বিষয়ক বিষয়বস্তুর চলচ্চিত্রের উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, টরন্টোয় বসবাসরত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে ‘টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফেস্টিভাল-২০২১ চলছে। ছয় দিনের এ উৎসবে ১১০টি দেশের ৩০০টি চলচ্চিত্র দেখানো হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা।

ইউএইচ/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]