প্রবাসে ঈদ আনন্দ

প্রবাস জীবনে ঈদের আনন্দ অবশ্যই দেশের মতো না। তার অন্যতম কারণ ওইদিন সরকারিভাবে ছুটি থাকে না। আর চাঁদ দেখা ও পঞ্জিকা অনুসারে ঈদ করার বিভাজনের কারণে দিনটি সবাই একই দিনে উদযাপন করেন না। তবে এটা বাড়তি আনন্দের উপলক্ষ হিসেবেই কাজ করে। কারণ এতে ঈদের আনন্দ করার জন্য আরও একটা অতিরিক্ত দিন পাওয়া যায়।
মনে আছে প্রবাসের প্রথম ঈদের দিন আমরা রোজায় ছিলাম। আমাদের এক বড় ভাই পঞ্জিকা অনুসারে সেদিন ঈদ করেছিলেন। তখন জানতে পেরেছিলাম এখানে দুই দিনই ঈদের জামাত হয়। ঈদের দিন দলবেঁধে সবাই ঈদগাহে যায়। নামাজ শেষ করে সকলে সবার সঙ্গে কোলাকুলি করি। এতে আমাদের সঙ্গে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও যোগ দেয়।
ঈদের নামাজ শেষে স্বজনদের সাথে সেলফি | ফাইল ছবি
ঈদের নামাজের সময় এখানেও জায়নামাজ হাতে বিভিন্ন খাতের জন্য আদায় করা হয়। আমরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সেখানে দান করি। নামাজ শেষে ঈদগাহ থেকে বের হবার পথে জিলাপি রাখা থাকে। আমরা সেই জিলাপি খেতে খেতে বাসায় ফিরি। অন্যান্য দিনের তুলনায় ঈদের দিনের জিলাপি কেন জানি বেশ স্বাদের লাগে।
এরপর বাসায় ফিরে পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া হয়। তবে যাওয়ার আগে সবাইকে অন্ততঃপক্ষে একটা কল দিয়ে যেতে হয়। কারণ সবাই কমবেশি সেদিন বেড়াতে বের হন। যদি ওয়ার্কিং ডে তে ঈদ হয় তাহলে অনেকেই ঈদের নামাজটা পড়ে আবার কাজে বেরিয়ে পড়েন। অনেকে আবার ছুটি নেন। এরপরের ছুটির দিনগুলোতে শুরু হয়ে ঈদের আসল আনন্দ।
বন্ধুদের সাথে ঈদের নামাজ | ফাইল ছবি
ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়। রোজার ঈদের সময় তো মাসজুড়েই সিডনির বাঙালি পাড়াখ্যাত ল্যাকেম্বার হেলডন স্ট্রিটে ‘রমজান নাইট ফেস্টিভ্যাল’ নামে মেলা বসে রাস্তার দুই ধারে। সেখানে হরেক রকমের ইফতারির সঙ্গে অন্যান্য ঐতহ্যবাহী খাবারও পাওয়া যায়।
বড়দের পাশাপাশি ঈদের আনন্দে শামিল হয় ছোটরাও | ফাইল ছবি
এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ঈদের মেলার আয়োজন করেন। আর চাঁদ রাতেও মেলা বসে। পাশাপাশি মেয়েদের হাতে মেহেদী পরার মেহেদী নাইট। এসব মেলা সবসময় থাকে লোকে লোকারণ্য।
মিন্টোর ‘অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টার’ এ ঈদের জামাত | ফাইল ছবি
প্রবাসে দেশের সব স্বজন উপস্থিত না থাকলেও এখানে আনন্দের তেমন কমতি হয় না। দেশের স্বজনদের সঙ্গে অন্তর্জালে শুভেচ্ছা বিনিময়ত চলেই। পাশাপাশি চলে প্রবাসের স্বজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি। প্রবাসে আসলে সবাই সবার স্বজন। এখানে আসার আগে হয়তোবা কেউই কাউকে চিনতো না। কিন্তু প্রবাসে এসে সবাই সবার আত্মার-আত্মীয় হয়ে যান।
লাকেম্বার হেলডন স্ট্রিটে মেলার সাজ | ফাইল ছবি
সবাই সবার বিপদে-আপদে এগিয়ে আসেন। আর এভাবেই শুরুতে পরিচয়। পরে স্বজনে পরিণত হন। বিশেষ করে যারা একই এলাকায় থাকেন তাদের মধ্যে যোগাযোগটা আরও বেশি হয়।
মেলার প্রিয় খাবার ক্যামেল বার্গার | ফাইল ছবি
ঈদের দিন বড়দের পাশাপাশি ছোটদেরও অনেক আনন্দ হয়। তারাও নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে উঠে। একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলির পাশাপাশি তারাও শুভেচ্ছা বিনিময় করে। আর একটা বাড়তি ছুটির দিন তাদের জন্য বাড়তি আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে আসে।
ঈদের পর অনেকদিন দিন ধরে চলে ঈদ পুনর্মিলনী। এলাকাভিত্তিক বা সংগঠনভিত্তিক ছাড়াও পারিবারিকভাবে চলে এই পুনর্মিলনী। ফলে ঈদ শেষ হয়ে গেলেও তার আমেজ থাকে প্রায় মাসজুড়েই।
এমআরএম/জেআইএম