মা দিবসে মা নেই আছে শুধু স্মৃতি আর ভালোবাসা

রহমান মৃধা
রহমান মৃধা রহমান মৃধা
প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ০৯ মে ২০২২

আলোর নিজের কোনো ছায়া নেই, আছে শুধু আলো। তাইতো সব কিছু আমরা দেখতে পাই। আলোর কারণে যেমন অন্ধকারের দেখা মেলে না, তেমনি অন্ধকার ছাড়া আলোর অস্তিত্ব নেই। আবার ভালোবাসা, আনন্দে যেমন রয়েছে শুধু ভালোবাসা, অন্যদিকে বিরহে রয়েছে বিচ্ছেদ। বিশাল ব্যাপার ভাবতেও অবাক লাগে।

ভালোবাসার অনুভূতি কি সব সময় এক রকম? নির্ভর করে তা ভালোবাসার ওপর। জীবনের প্রথম প্রেমের যে অনুভূতি পরবর্তী প্রেমের কি একই রকম অনুভূতি? সেটা নির্ভর করে প্রেমিকের ওপর। না চাইতে কাউকে পাওয়া বা না পাইতে কাউকে চাওয়া এটা একটি ব্যাপার।

আবার প্রেম আছে, বাঁধা বা বিরহ আছে এগুলো আরেকটি ব্যাপার। তবে বলা যেতে পারে প্রেমের ধরনের ওপর নির্ভর করে তার অনুভূতি। ভ্রমণের ব্যাপারেও অনেকটা একই রকমের। ভ্রমণ করতে কে না পছন্দ করে? তারপর যদি সেই ভ্রমণ একটু ভিন্নধর্মী হয় তবে তো আরও উল্লাস আরও উদ্দীপনা।

সারাজীবন বিশ্বের কত জায়গায় গিয়েছি ও মনের মতো করে ঘুরেছি। যদি কেউ প্রশ্ন করে, জীবনে কোন ভ্রমণটি সব চেয়ে মধুময় ছিল? উত্তরটি বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম দেবে। প্রেমের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

হাজারও ভ্রমণের মাঝে একটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের কথা আজ বেশ মনে পড়ছে। বাবা-মা তখন সুইডেনে থাকেন। দুইজনই বেশ সুস্থ। তবে বাবার কিছুটা অ্যাজমার সমস্যা যার কারণে বাবা একটু অসুস্থ ফিল করেন মাঝে মধ্যে।

সে বছর তারা কোরবানির ঈদের আগেই বাংলাদেশে গিয়েছেন, কারণ সেখান থেকে তারা মক্কায় হজ করতে যাবেন। ঢাকা থেকে ঠিকমতো রওয়ানা দিয়েছেন, তবে পথে বাবা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাবা ঘরের পাশেই তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।

হোটেল থেকে পাকিস্তানি একজন চিকিৎসক আমাকে সুইডেনে ফোন করেছে। কী ব্যাপার? চিকিৎসক বললেন, বাবার শরীর বেশ খারাপ বিধায় তাদের পক্ষে পুরো হজের কাজগুলো করা কঠিন হয়ে পড়বে যদি সাহায্যের ব্যবস্থা না করা হয়।

কী ধরনের সাহায্য ও কীভাবে তা করতে পারি এখান থেকে? বললেন অনেক হাফেজী রয়েছে এখানে, তাদের স্বল্প সময়ের জন্য কর্মে নিয়োগ করা যেতে পারে। বিশেষ করে হজের দিনগুলোর পুরো সময়টি তারা বাবা-মার সব কাজে সাহায্য করতে পারে।

তারা হুইলচেয়ারে করে সব জায়গায় নিয়ে যাবে। হজের জন্য যা যা করার করতে সাহায্য করবে। বেশ সুন্দর একটি উপদেশ দূরপরবাস থেকে পেয়ে ভালোই লাগছে। কীভাবে কী করি? শেষে আমার এক খালাতো ভাইয়ের ছেলে থাকে রিয়াদে; নাম রিপন তাকে খুঁজে বের করলাম।

রিয়াদে রিপনকে ফোন করে বললাম বিষয়টি। সে দুইজন হাফেজী ঠিক করে দিলো। আমি তাদের দুটো সেলফোনের ব্যবস্থা করে দিতে বললাম যাতে করে পুরো সময়টি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি।

সুইডেন থেকে যাওয়ার সময় অ্যাজমার ওষুধটি ভুলে রেখে যাবার কারণে বাবার সমস্যা দেখা দেয়। আমি জানি, কী ওষুধ বাবা ব্যবহার করেন তাই চিকিৎসককে বলে দিলাম। চিকিৎসক বাবাকে ওষুধ দিয়েছে। এরপর বাবা বেশ সুস্থ।

আমার সঙ্গে বাবা-মার যেমন কথা হচ্ছে তেমন যোগাযোগ রয়েছে হোটেলের ম্যানেজার, ডাক্তার এবং দুইজন হাফেজীর সঙ্গে। প্রতিটি হজের কাজ শেষ করছেন বাবা-মা আর আমাকে জানাচ্ছেন।

উট কোরবানি, চুলকাটা, পাথর মারা, আরাফাতের ময়দানে ভ্রমণ করা, মক্কা থেকে মদিনা যাওয়া, কবর জিয়ারত করা, আবার মক্কায় ফিরে আসা সব কিছুর সঙ্গে আমি মনে প্রাণে জড়িয়ে পড়েছি।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে যারা বসবাস করছে তাদের সঙ্গে বিষয়গুলো শেয়ার করছি। শেয়ার করছেন বাব-মা আমার সঙ্গে তাদের নানা ধরনের অনুভূতি। পৃথিবীর সব মুমিন মুসলমানের জীবনের একটি তীব্র আকাঙ্ক্ষা জীবনে একবার হজ করা।

বাবা-মার সেই অনুভূতি উজাড় করে বর্ণনা করছেন আর আমি তখন আমার মনে, আমার ধ্যানে এবং জ্ঞানে বাবা-মার সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছি যে মনে হচ্ছে আমরা হজের পুরো সময়টুকু একসঙ্গেই কাটাচ্ছি।

বাবা-মার সঙ্গে মক্কা ও মদিনা ভ্রমণ বাস্তবের এক কল্পনা, নাকি কল্পনার এক বাস্তবতা বুঝাতে পারা যাবে না। তবে সে ভ্রমণ ছিল হৃদয় দিয়ে শুধু অনুভব করার মতো এক মধুময় অভিজ্ঞতা।

প্রেম, প্রীতি ভালোবাসা শুধু প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য নয়। এসব বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যেও রয়েছে। বহুবার বাবা-মার সঙ্গে ভ্রমণ করেছি, যে ভ্রমণের দিনগুলো ছিল আনন্দের।

আবার বাবা-মাকে ভ্রমণে বিদায় দিয়েছি, পরে তারা আর ফিরে আসেনি, আমাদের মধ্যে আর দেখা হয়নি, হয়েছে বিচ্ছেদ। কিছু ভ্রমণ এবং কিছু ভালো সময় তা যেমন আনন্দ দেয় আবার সেই মুহূর্ত শেষ হতেই বিচ্ছেদও হয়।

যেমন আলো শেষ হতে অন্ধকার ঢুলে পড়ে। আবার রাত পোহালেই আলোর দেখা মেলে। যাই হোক না কেন, আলোয় যেমন রয়েছে শুধু আলো, ঠিক তেমনি ভালোবাসায় রয়েছে শুধু ভালোবাসা। আজ মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি রইল অঢেল ভালোবাসা

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]