সবাই অবাক!

আজ সকালে মারিয়া কিছুটা ভালো বোধ করছে। বললাম চলো নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করি, আজ আর বাইরে যাব না। আমার বাংলাদেশে কয়েকটি ছোট ছোট প্রজেক্ট রয়েছে তার মধ্যে যেমন অতীতে বলেছি যেমন হাসির মা যিনি একজন সর্বহারা মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্র থেকে তেমন কিছু পায়নি। আমরা অনেকে মিলে তাকে একটি ঘর তৈরি করতে সাহায্য করছি।
এছাড়াও ছোট একটি শিশুর অপারেশনের কাজ চলছে ঢাকা হাসপাতালে সে বিষয় একটু নজর দেওয়া এবং নবগঙ্গা নদীর ধারে একটি সুন্দর পার্ক এবং নদীর ঘাটটিকে মেরামত করা ইত্যাদি। ফাঁকে ফাঁকে কাজগুলোর অগ্রগতি জানতে চেষ্টা করছি যখনই একটু সময় হচ্ছে। তারপর প্রতিদিনই চেষ্টা করেছি কোথায় কী করছি, দেখছি, যতটুকু পারছি সবার সঙ্গে শেয়ার করছি আমার মতো করে, কারণ নতুন প্রজন্ম বিশ্বকে দেখতে পাবে তাদের মতো করে, গড়তে পারবে একটি সুন্দর পৃথিবী এ বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড ট্যু লিভ।
জনাথান জেসিকা পিপি দ্বীপে আরও দুদিন ছিল। আজ হোটেলে আমি এবং মারিয়া, সকালের ব্রেকফাস্টে সবে বসেছি। মারিয়া সকালে গরম কিছু খেতে পছন্দ করে না শুধু এক পিচ ব্রেড এবং চিজ সাথে এককাপ চা, সামান্য মধু হলেই সে খুশি। আমি কলা এবং পরোটা নিয়ে বসেছি।
হঠাৎ মারিয়া বললো তার একটু মাথা ঘুরছে এবং একটু বমি বমি ভাব এসেছে। আমি তার ঘাড়ের ওপর হাতটি দিয়ে সবে বলছি মারিয়া এখন কেমন লাগছে? মারিয়ার মুখে কথা নেই, মনে হলো সে আমার বুকে মাঁথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো শান্ত হয়ে। আমি মারিয়া মারিয়া করছি কোনো কথা নেই, নিঃশ্বাস বন্ধ, পালস নেই এমতাবস্থায় আমি চিৎকার করে বলছি, প্লিজ সামবডি কল অ্যা অ্যাম্বুলেন্স।
সবাই অবাক! জানি না কে কী করছে! কে কী ভাবছে! তবে আমার ভাবনায় শুধু একটিই প্রশ্ন স্রষ্টার কাছে— আমাকে তুমি একটুও সুযোগ দিলে না? আমাকে একটু চেষ্টা করতে দাও, তুমি না বলেছ চেষ্টা যে বা যারা করে তাদের আশা তুমি পূরণ করো! হঠাৎ হবে ত্রিশ বা পয়ত্রিশ বছরের একটি হ্যান্ডসাম ছেলে, বেশ দূরের একটি টেবিল থেকে দ্রুত গতিতে এসে মারিয়ার হাত ধরে পালস এবং ঘড়ির কাটা দেখছে একই সাথে মারিয়াকে আমার সাহায্যের অপেক্ষা না করে দুই হাত দিয়ে উঁচু করে কিছুটা দূরে ফ্লোরের ওপর শুইয়ে দিয়ে হাতের পালস নির্ণয় করতে করতে বলল আমি নিজেই ডাক্তার, আমার বাড়ি জার্মানিতে।
এরই মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়ে গেছে। দ্রুতগতিতে তারা মারিয়াকে নিয়ে চলে গেল। আমি দৌড়ে হোটেলের রুমে গিয়ে মারিয়া এবং আমার পাসপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। অত্যন্ত দ্রুত তারা জেনেছে মারিয়ার প্লাটিলেট ৬০ হাজারের নিচে। ইদানিং এশিয়ায় ডেঙ্গু মশার কারণে এমনটি ঘটনা এসব দ্বীপে বেশ আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তারপর প্রতিদিনই কম বেশি বৃষ্টির কারণে মশার দাপট বেশ বেশি যা আমরা লক্ষ্য করেছি। নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার পর দেখা গেলো ডেঙ্গু নয়।
তাহলে কী? এ প্রশ্নের উত্তর দ্রুত জানা দরকার। এদিকে আমি SOS এ যোগাযোগ করেছি। পুরো ঘটনা বলার পর পরই তারা দ্রুত মারিয়াকে শহরের বড় হাসপাতালে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আমি নিজে এ সময় সত্যিই খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।
জনাথান আজ পিপি দ্বীপ থেকে মুভ করবে পুকেটে এবং জেসিকা দুটোর বোটে আও নং বিচে ফিরবে। তাকে আনতে যাবার কথা ছিল আমাদের, অথচ কী হতে কী হয়ে গেলো! জেসিকাকে নেটের সমস্যার কারণে পাওয়া যাচ্ছে না। জনাথানকে ম্যাসাজ দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। সে তার পুকেট ভ্রমণ ক্যানসেল করে দুই ভাইবোন দুটোর দিকে হাসপাতালে এসেছে। জনাথান ও জেসিকা যখন হাসপাতালে মারিয়া তখন চোখ খুলেছে সবকিছু বিষয়ে সে অবগত তবে খুবই দুর্বল।
প্রশ্ন এখনও কি কারণে প্লেটলেট লো? আমাদের সুইডেনের মেডিকেল জার্নাল আমরা সরাসরি দেখতে পারি, যেমন কবে কখন কী রোগ হয়েছিল, কেন এবং কী ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছে। হাসপাতালের ওয়াইফাই ব্যবহার করে মারিয়ার পাসওয়ার্ডে তার মেডিকেল জার্নালে ঢুকে দেখি ২০১৬ সালে একটি অ্যানালাইসিসে ধরা পড়েছে তার শরীরের প্লাটিলেট লো। যার ফলে শরীরে কোনো রকম ইনফেকশন দেখা দিলে শরীর দুর্বল হয়।
এদিকে থাইল্যান্ডে গরমের কারণে শরীর ডিহাইড্রেটেড হওয়া এবং তিনদিন ধরে জ্বর সব মিলে এমনটি হতে পারে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করছে।
কর্তৃপক্ষের প্রথম সন্দেহ ডেঙ্গু, এখন বলছে ডিহাইড্রেটেড হওয়া এবং তিনদিন ধরে জ্বর সব মিলে এমনটি হতে পারে! আমি বললাম জ্বর হওয়ার কারণ কী তাহলে? ডাক্তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে টিম গঠন করে তাড়াতাড়ি করে কোভিড টেস্ট করে জানতে পারলো মারিয়ার করোনা হয়েছে। এতক্ষণে বিষয়টি পরিষ্কার, কেন শরীরে ইনফেকশন আর কেনই বা প্লাটিলেট লো?
এখন নতুন সমস্যা সেটা হলো আমাদের ফ্লাইট ব্যাক ট্যু সুইডেনে ডিসেম্বরের তিন তারিখে। হোটেল থেকে পিক আপ করবে সকাল ৬টায়, ফ্লাইট বেলা ১১টায়। কী হবে এখন যদি আগামীকাল বিকেলের মধ্যে মারিয়া সুস্থ না হয়? তাহলো সে ফ্লাই করতে পারবে না। তিন তারিখে ফ্লাই না করতে পারলে মারিয়া এবং আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
জনাথান, জেসিকা এবং আমি সারাক্ষণ মারিয়ার সাথে এবং একই রুমে বসবাস করছি, কে বলবে যে আমাদের করোনা হয়নি? SOS কে সব বিষয় জানিয়ে ইমেল করতেই তাদের উত্তর কেউ থাইল্যান্ড ছেড়ে যেতে পারবে না যদি আগামীকাল পর্যন্ত প্লাটিলেট লো থেকে হাই-এ না আসে।
এমআরএম/জেআইএম