‘সত্যের সন্ধানে’ নিউইয়র্কে আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মদিন উদযাপন

আরজ আলী মাতুব্বরের ১২২তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সত্যের সন্ধানে শিরোনাম ১৭ ডিসেম্বর জ্যাকসন হাইটসে এটি আয়োজন করে ওপেন আইস, যুক্তরাষ্ট্র।
সাংবাদিক ও নাট্যকার তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় তার জীবন কর্ম ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক জুয়েল মালিক, লেখক কুলদা রায়, সাপ্তাহিক বাঙালি সম্পাদক কৌশিক আহমেদ এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ। নিউইয়র্কের বাঙালি জনসমাজে মুক্তচিন্তার চর্চা করে অন্তত ৫০ জন মানুষ এই আলোচনায় অংশ নেন।
ওপেন আইসের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি স্বাগত বক্তব্য দেন। কারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অথবা নিজেই প্রশ্ন করে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করেন, সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান। অধ্যাপিকা হুসনে আরা। সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট মুজাহিদ আনসারী, সুব্রত বিশ্বাস, সঞ্জীবন কুমার, ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, রহমান মাহবুব, আমান উদ্দৌলা। চিকিৎসক প্রতাপ দাশ। সাংবাদিক ও লেখক শামীম আল-আমিন ও আহমাদ মাজহার।
বিবিসির সাবেক সাংবাদিক সাগর লোহানি, রাজনৈতিক নেতা জাকির হোসেন বাচ্চু, মুক্তচিন্তক তানভীর কাইসার, শুভ ডি কস্টা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা আবু সায়ীদ, লালন সংগীত পরিবেশন করেন তাহমিনা শহীদ। মুক্তধারা নিউইয়র্ক এর কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা বইয়ের স্টল দেন।
বেলাল বেগ বলেন, তার জীবন সংগ্রাম ও দর্শন বর্তমান বিশ্ব সংকটের সমাধান হতে পারে। তিনি সব সময়ের জন্য সমান প্রাসঙ্গিক। আগামী প্রজন্মকে তার সম্পর্কে জানাতে, আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি করার দাবি জানাই।
কুলদা রায় বলেন, ধর্ম সৃষ্টির পর থেকেই মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। পশুর ধর্ম পশুত্ব, মানুষের হওয়া কথা মানবিকতা কিন্তু তা কেন হয়নি এ ধরনের ৫৭টি প্রশ্ন আরজ আলী মাতুব্বর তার বই সত্যের সন্ধানসহ অন্যান্য রচনাবলীতে উল্লেখ করে যান।
কৌশিক আহমেদ তার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন আপনি সত্যের সন্ধান পেয়েছেন কি? যুক্তি ও প্রমাণ ছাড়া কোনো সত্য নেই। যে জ্ঞান প্রকাশ অথবা প্রমাণ করা যায় না তা জ্ঞান নয়। জ্ঞানের কোনো ডিগ্রি নেই। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় নয় জ্ঞানের আসল তীর্থস্থান লাইব্রেরি। এমন নিরেট অনেক সত্য তিনি আমার নেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।
জুয়েল মালিক বলেন, আরজ আলী মাতুব্বর আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন সৎ বহু বিদ্যায় পারদর্শী এক দ্রোহী চিন্তক। স্ব শিক্ষিত এই দার্শনিক মানবতা ও বিজ্ঞান মনষ্কতার একনিষ্ঠ অনুগামী ছিলেন। তিনি প্রথাগত শিক্ষা ব্যতিরেকে স্বীয়গরজে জ্ঞান সন্ধানী আরজ ৮৬ বছরের জীবনে সত্তর বছর শুধু মনের তৃষ্ণায় লাইব্রেরি বই ও তৎকালের সেরা বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষা বিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
তিনি বলেন, নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব দর্শন ও বিজ্ঞানকে তিনি আত্মস্থ করছিলেন। কয়েক শত সৃষ্টি মতবাদের শিশুসুলভ কাহিনিকে নিংড়িয়ে অনুধাবন করে, সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে বস্তুর অবিনাশীতাবাদ ও বস্তুবাদের আলোর প্রদীপের কাছে এসে তিনি থমকে দাঁড়ান। এখানে বিজ্ঞান ও যুক্তি তার মানদণ্ডের ভূমিকা পালন করে।
এমআরএম/এমএস