‘ফেরত পাঠালে জীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে’

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২২
প্যারিসে অনিয়মিত অভিবাসীদের সমর্থনে অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের সংহতি সমাবেশ ও মিছিল। ছবি: লু রোমেও/ফ্রান্স২৪

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে অভিবাসন সংস্থা ও এনজিওগুলোর উদ্যোগে রোববার ফ্রান্সের প্রায় পঞ্চাশটি শহরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন প্যারিসে অভিবাসীদের সঙ্গে সংহতি জানায় হাজারো ফরাসি নাগরিক। এ সময় অনিয়মিত অভিবাসীরা ‘ডিপোর্ট’ বা ফেরত পাঠানো নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে।

প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে বৃহত্তর প্যারিস অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অনিয়মিত অভিবাসীরা রোববার (১৮ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের সংহতি মিছিলে যোগ দেন।

রাজধানী প্যারিসের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বর থেকে উত্তর প্যারিসের পোর্ত দ্যো লা শাপেল পর্যন্ত বিস্তৃত হয় অভিবাসীদের দিবসেই এই সংহতি মিছিল। সমাবেশে সংশ্লিষ্টরা ২০২৩ সালের সালের জানুয়ারিতে ফরাসি সরকার ঘোষিত নতুন অভিবাসন বিলের বিরোধিতা করেন।

অভিবাসন সংস্থা কালেকটিফ সঁ পাপিয়েরের মুখপাত্র মোদি বলেন, আমরা প্রতি বছর এই দিনটিকে প্রাণবন্ত করার জন্য সংহতি প্রদর্শন করি, কিন্তু চলতি বছর এটি একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে এই দিনটি পালিত হচ্ছে। আমরা জানুয়ারিতে পাস হতে যাওয়া অভিবাসন আইনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। এই আইনটি মানুষকে আরও বেশি অনিয়মিত পরিস্থিতিতে এবং অপরাধ করার ঝুঁকিতে ফেলবে।

যদিও নতুন অভিবাসনের রূপরেখা এখনও নির্দিষ্ট করা হয়নি, তবে ফরাসি সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে আশ্রয় ও অভিবাসন সংক্রান্ত একটি খসড়া আইন সংসদে আলোচনায় তোলা হবে।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা কর্মী সংকটে ভোগা সেক্টরগুলোর জন্য বিশেষ রেসিডেন্স পারমিটের অনুমোদনের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।

তবে সেই সঙ্গে ফ্রান্স ত্যাগের নোটিশ পাওয়াদের ফেরত পাঠাতে কার্যকর উদ্যোগের কথাও বলেছেন তিনি। এই ঘোষণায় আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন অনিয়মিত অভিবাসীরা।

‘আমরা ভীত’

ফরাসি সরকারের নতুন অভিবাসন নীতির প্রস্তাবনাটির ফলে অনিয়মিত অভিবাসীরা উদ্বিগ্ন। তিনি পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন অভিবাসন রুটে কাটিয়ে, সর্বশেষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার পর ২০১৮ সালে ফ্রান্সে পৌঁছান। এখনও তিনি একজন অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে বসবাস করছেন।

রোববার অনথিভুক্ত অভিবাসীদের মিছিল যখন প্যারিসের রিপাবলিক চত্বরের দিকে ছুটছিল তখন মালি থেকে আসা এই ৩৭ বছর বয়সী ফ্রান্স২৪কে বলেন, ‘আমরা এই আইনকে ভয় পাই। কারণ জেরাল্ড দারমানা এরই মধ্যে বলেছেন, তিনি ওকিউটিএফ বা ফ্রান্স ত্যাগের নোটিশ পাওয়াদের অস্থির করে তুলতে চান। আমি চার বছর ধরে ফ্রান্সে রয়েছি, প্রশিক্ষণ নিতে চাই, চাকরি পরিবর্তন করতে চাই।’

তিনি বলেন, এই আইন বাস্তবায়ন হলে তারা এসে আমাকে একজন অপরাধীর মতো আমার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেতে পারে।কারণ আমি একজন অনিয়মিত অভিবাসী। এটা ভয়ানক। ফ্রান্সে আসতে আমার পাঁচ বছর লেগেছে, আমি এখানে চার বছর ধরে বাস করছি। যদি আমাকে ডিপোর্ট করা হয়, তাহলে তারা আমার সারা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।

অভিবাসন সংস্থা লা সিমাদের সাবেক সভাপতি জেনিভিয়েভ জ্যাক বলেন, ‘আমরা এমন একটি প্রেক্ষাপটে রয়েছি যা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে। আমরা নতুন বিলের মাত্র কয়েকটি দফা শুনেছি।’

তার মতে, ‘আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে আছি যেখানে ডানপন্থি রাজনৈতিক ধারণাগুলো বিকাশ লাভ করছে। অনেক অভিবাসীদের অপরাধী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যাদের মধ্যে অনেকেই খুব বেদনাদায়ক এবং কঠিন ভ্রমণ শেষে ফ্রান্সে এসেছেন। ভূমধ্যসাগরে প্রতিদিন মৃত্যু ঘটছে। আমাদের এই নারী ও পুরুষদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। এটি একটি অনিশ্চিত বাস্তবতা।’

রোববারের সংহতি সমাবেশ প্যারিসে বহুল আলোচিত অনথিভুক্ত ফুড ডেলিভারিতে যুত উবার ইটসের ভুক্তভোগীরাও যোগ দেয়। তাদের একদল সাইকেল, স্কুটার এবং সবুজ পতাকা নেড়ে সংহতি জানায় যা সবার নজর কেড়েছে।

উবার ইটস প্ল্যাটফর্মের হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী অনিয়মিত অভিবাসী থমাস বলেন, ‘আমাদের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আমাদের হিমাংকের নিচে-৫ ডিগ্রিতেও কাজ করতে হয়। আমরা অবদান রাখি, আমরা কর দিই কিন্তু আমরা কিছু পাওয়ার অধিকারী নই, আমরা অপরাধী।’

তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে আমাদের কথা বলতে এসেছি। আমরা সবাই বৈধতা পেয়ে নিয়মিত অভিবাসী হতে চাই এবং সবার মতো বৈধভাবে কাজ করতে চাই। অন্যথায়, উবার ইটস এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন কিন্তু তারা কিছুই করে না। আমাদের সাথে যথেষ্ট অন্যায় হয়েছে।

সঠিক সংখ্যা বের করা কঠিন হলেও বর্তমানে ফ্রান্সে চার থেকে দশ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তারা নির্মাণ, ক্যাটারিং, পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত সহায়তাসহ বিভিন্ন খাতে নিযুক্ত।

কাকতালীয়ভাবে বিক্ষোভটি এমন দিনে সংগঠিত হলো যখন একই সমইয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। যেখানে নির্মাণ খাতে কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছেন।

ডিসেম্বরের শুরুতে ফরাসি পত্রিকা লো মোন্দে প্রকাশিত একটি তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্যারিস এবং সেইন-সেন্ট-ডেনিসের বিভিন্ন অলিম্পিক গেমস সাইটে অবৈধভাবে নিয়োগ করা অনেক অনথিভুক্ত কর্মী কাজ করছে।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]