বাংলাদেশ-গ্রিস সমঝোতা চুক্তি
এথেন্সে একদিকে চলছে বৈধকরণ, অন্যদিকে ধরপাকড়

ইউরোপের দেশ গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের অস্থায়ীভাবে বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও এর নানা শর্ত থাকায় শঙ্কায় রয়েছেন প্রবাসীরা। গ্রিক সরকার প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ রয়েছে এসব অভিবাসীদের সিজনাল কর্মী হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য বৈধতা দেওয়া হবে, পরে ফিরে যেতে হবে দেশে।
এরই মাঝে বছরে ৯ মাস গ্রিসে, বাকি ৩ মাস বাংলাদেশে থাকতে হবে। যেতে পারবেন না ইউরোপের অন্যদেশে, নিতে পারবেন না পরিবার। এসব শর্তেও বৈধতার নিবন্ধন করছেন অনেকেই। অন্যদিকে অনিয়মিতদের ধরপাকড় অভিযানও অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
নিবন্ধন করতে মানোলদাসহ এথেন্সের বাইরের বিভিন্ন শহর থেকে দূতাবাস যাওয়ার পথেও আটক হচ্ছেন অনেকেই। এছাড়াও বিভিন্ন ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা বাংলাদেশিরাও রয়েছেন ‘ডিপোর্ট’ আতঙ্ক ও হতাশায়।
জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফর করেন গ্রিক অভিবাসন বিষয়কমন্ত্রী নোতিস মিতারাচি। এই সময় তার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এই চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রতি বছরে চার হাজার করে বাংলাদেশি কর্মীকে মৌসুমি কাজের ভিসা দেওয়া হবে এবং গ্রিসে বসবাসরত ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশিকে পাঁচ বছরের জন্য অস্থায়ী বৈধতার আওতায় আনা হবে।
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এবার অনিয়মিত বাংলাদেশিদের আবেদনের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে গ্রিক সরকার। যারা এরই মধ্যে প্রথম ধাপে দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন তারা এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কিন্তু এই বৈধতার আইনে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু শর্ত। একজন বাংলাদেশি বছরে ৯ মাস গ্রিসে কাজ করে বাকি তিন মাস থাকতে হবে বাংলাদেশে। এসব বাংলাদেশিরা পাঁচ বছর পর নিজে দেশে ফিরে যেতে হবে। তারা সেখানে নিতে পারবে না পরিবার। এমনকি গ্রিস সেঞ্জেনভুক্ত দেশ হলেও এসব বাংলাদেশিরা এই কার্ড নিয়ে ইউরোপের অন্যকোনো দেশে যেতে পারবেন না বলেও আইনে উল্লেখ করা হয়।
এসব নানা শর্তেও সিংগভাগ অনিয়মিত বাংলাদেশি এই প্রক্রিয়ায় বৈধতা নিতে আগ্রহী। কারণ অনেকেরই এখানে আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে ৬/৭ বছর ধরে পরিবারের কাছে যেতে পারছেন না, আবার অনেকেই মনে করছেন পুলিশের হাতে আটক হওয়ার চেয়ে এই বৈধতা নেওয়া উত্তম।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি দূতাবাসে গিয়ে নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ৬ মাস। তাই নিবন্ধন করতে প্রবাসীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন দূতাবাস প্রাঙ্গণে।
একদিকে, চলছে বৈধকরণ প্রক্রিয়া অন্যদিকে ধরপাকড়। বৈধ হওয়ার জন্য অনেকেই দূতাবাসে যাওয়ার পথে আটক হচ্ছেন। গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশাল একটি অংশ অনিয়মিত হওয়ায় মানোলদা গ্রামে বসবাস করছেন। সেখানে কৃষি কাজ নিয়োজিত রয়েছেন তারা।
বৈধতার আওতায় আসতে হলে প্রথমেই যেতে হয় দূতাবাসে কিন্তু রাস্তায় করে পুলিশ ধরপাকড়। অনেকেই আর দূতাবাসে পৌছাঁতে পারেন না। তাই অনিয়মিত প্রবাসীদের মাঝে এক আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অন্যদিকে শতাধিক বাংলাদেশি গ্রিসের বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রয়েছেন। তারা সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং মুক্ত করার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ জানান, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা চলছে। যারা বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন তাদের সবাইকে বৈধতার আওতায় আনা হবে।
অন্যদিকে গত ২৯ জানুয়ারি গ্রিসে অনিয়মিত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রবাসীদের অবহিতকরণ করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
সভায় জানানো হয়, দূতাবাস নিবন্ধনকারীদের সকল ডকুমেন্টস যাচাই-বাছাই করে গ্রিক সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাচ্ছে, গ্রিক সরকার তালিকা যাচাই-বাছাই করে তালিকা তাদের অনলাইন সিস্টেম এ আপলোড করলে একজন অনিয়মিত বাংলাদেশি গ্রিক সরকারের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন করতে পারবেন।
এমআরএম/জেআইএম